শিকড়ের আজকের কবিতা
আজকের কবিতা বিভাগে যারা লেখা প্রকাশ করতে ইচ্ছুক, দ্ য়া করে নীচে জমা দিন
শিস দিয়ে যায় প্রাণের লহর
সাজু কবীর
দুঃসময়ে দু'চোখ ঝরায়
দুখের নহর,
ওই নহরেই ভাসছে সবার
সুখের শহর।
লক্ষ লাশের লক্ষ চড়ায়
বোধের বহর,
ওই বহরেই শিস দিয়ে যায়
প্রাণের লহর।
দুঃসময়ের আঁধার ভেঙ্গে
আসছে সকাল,
ওই সকালের হালেই মরণ
মানব-আকাল।
নতুন আলোয় পুড়বে তামাম
হালের বে-হাল,
নতুন সময় চাষবে নতুন
লাঙল-জোয়াল।
দুঃসময়ের দুখের ভিটেয়
জাগবে ফসল,
পদ্মবিলের জলের ওপর
স্বর্ণকমল।
শীত-শহরের পাড়ায় পাড়ায়
হাসবে ফাগুন,
সে-ই ফাগুনেই করবে গোসল
মনের আগুন।
বিক্রিত
ভীষ্মদেব সূত্রধর
বিকৃত বেকার যৌবনে পেলব মাটি
কুশাসনে আমাদের জীবনে'র বিক্রি
সাম্য? অস্থির নুয়ে পড়া বিপ্লব ঝড়
নিরন্তর দুঃখ, নিঃসীম সে পরিপাটি।
তবু সামনে এগোই অন্ধকারে ঘর
অঃন্ত মোকদ্দমায় এ জেনারেল ডিগ্রি।
হাসছি! দুঃখ হাসে বৈরী আবহাওয়া
পেছনে দেয়াল, কংক্রিট হৃদয় তার
গলে যাই উবে ছাড়ি নাওয়া খাওয়া।
প্রেম। হা সৃজিত একাদশ অবতার।
সস্তা বিক্রি হয়েছে ভালবাসা অভিন্ন
ছিন্ন মূল থেকে সটকে গেছি সজোরে
যেন মরে যাওয়া এক বোকা পুরুষ!
মুছে যায় সব রঙিন জৌলুশ।
নির্বাক নিবেদন
সঙ্গীতা ঘোষ
একটি পাথর তোমার দান পাত্রে অঞ্জলী দিয়েছিলাম,
তুমি মর্যাদা দিতে পারলে না।
আমি হীরা হতে চাইনি,
মানুষ হয়ে মনুষ্যত্বের মঞ্চে স্হান পেতে
চেয়েছিলাম ,
তুমি খনির কালো হীরকের রূপ দিলে মোরে।
এই অঙ্গ আজ কলুষিত,
তাই হে সমাজ---
তুমি আমাকে পদদলিত না করে সময়ের তুলি
আর হীরের রং দিয়ে মানুষ করে দাও!
আমি তো আজ অন্ধ।
ছুটি
মল্লিকা দাশগুপ্তা
অনেক দিনের পুরনো একটি ড্রয়ারে
পাওয়া গেল একটি ডায়েরি,
জীর্ণ ছেঁড়া পাতার অন্তরালে
ভাগ্য-বিড়ম্বিত বঞ্চিত
এক জীবনকাহিনি।
ঘরটি সে বেঁধেছিল
ধূলোর বালুচরে।
তারপর একদিন
তিমির বিনাশী অন্ধকারে
ফিকে হল রঙিন স্বপ্ন।
নিস্তব্ধতার আড়ালে প্রেম!
দুঃসহ যন্ত্রণা এক।
মহাকালের গহ্বরে নিমজ্জিত আজ
শব তৈরির কারখানা,
মানব-মন বুঝি মাগিছে ছুটি!
হৃদয় হয়েছে বন্ধনমুক্ত
দেহ ভোগ-কামনা-বাসনার অতীত।
এসেছে সময়-
নিরূপমা ধরণীর অবগুন্ঠন খোলার;
নাগপাশে আবদ্ধ
বিমূঢ়তার।
কোটাল
সোনালী মন্ডল আইচ
কর্ণফুলী এক স্রোতে বয়ে যায়
বুকে যারা ভাসে দিক বদলায়
কারা পাড় ঘেষে কাদের অপেক্ষায়
কেউ বা পারাপারের হিসেব চুকায়।
সহসা বাতাসে শুনি চেনা গজল
চোখে বালি পড়ে আঁখি সজল
ধুলো মাখা কিছু আশা আজও
মিশে আছে পুরানো সে লাজও।
সময়ের ছাপটুকু নিয়ে অবিকল
দিগন্তের নীল ছায়া দেখি অবিচল
ফ্যান্টাসি হাত বাড়িয়ে বলে "শীত"
কাঁপছি এখন সুরেই গাই গীত।
ঠেকে যায় আঙুলে আঙ্গুল
পিছে পড়ে খাতা ভরা ভুল
হৃৎপিণ্ডে ভৈরবী সুর ফিকে
ভরা নদী,উজান দিকে দিকে।
সফিয়া জাহির
রাতের কাছে ঘুম রেখেছি
তোমার কাছে চোখ,
ঢেউয়ের গায়ে অশ্রু ঢালি
চাঁদের বুকে দুখ
প্রদীপের গায়ে আলো রেখে
হাঁটি অন্ধকারে-
বুকের দহন মলাট বাঁধা
নিরাশার খামে
পাতাবাহার রং ছড়িয়ে
লুকিয়ে রাখে ক্ষত!
চেনা-অচেনায় যায় হারিয়ে
জীবনের আদি-অন্ত!
কোয়েল তালুকদার
একবার এক অস্তরাগের সন্ধ্যাবেলায় খুব কাছে থেকে
সন্ধ্যামালতী ফুলের গন্ধ নিয়েছিলাম
তারপর কত সন্ধ্যা অন্ধকারে ডুবে গেছে
আর কোনো সন্ধ্যামালতীর গন্ধ নেওয়া হয়নি।
আর একদিন এক চন্দ্রালোকিত রাত্রি দুপুরে
জোছনা ভেজা কামিনীর সুবাস গায়ে মেখেছিলাম,
তারপর কত জোছনা বুভুক্ষু রাত্রি চলে গেছে
আর কোনো কামিনীকে ছুঁয়ে দেখা হয়নি।
তারও বহুদিন পরে এক অষ্টাদশীর মাথাভর্তি
কালো কুন্তলের গন্ধ নিয়েছিলাম,
আর একবার কুড়ি বয়সের এক রমণীর বুকের গন্ধ
নিয়েছিলাম হেমন্ত গোধূলির ধূসরে ,
অষ্টাদশীর চুলের গন্ধ আর সেই রমণীর বুকের গন্ধের সাথে,
সন্ধ্যা মালতী ও কামিনী ফুলের গন্ধের
কোনো পার্থক্য খুঁজে পাইনি।
পথ চলতে চলতে একবার পথ হারিয়ে ফেলেছিলাম,
চেনা সেই পথ দিয়ে আর বাড়ি ফেরা হয়নি...
ক্লান্ত পথিকের মতো পথের মধ্যে একাকী বসে থেকেছি বহুদিন,
আর একবার আমার মানিব্যাগটা হারিয়ে ফেলেছিলাম
সেই ব্যাগে ছিল প্রেমিকার পুরোনো চিঠি,
একথা শুনে সেই প্রেমিকা চিরতরে মুখ ফিরিয়ে যে চলে গেল,
তারপর সে আর ফিরে আসেনি।
এখন প্রায়ই পাতা ঝরা দেখি
কোথাও কেউ নেই আর, কখন কোন্ সন্ধ্যাবেলায়
সন্ধ্যামালতী ফুটে থাকে অগোচরে ,
কোথায় বর্ষারাতে কামিনী তার গন্ধ বিলায় ঝিরিঝিরি,
অষ্টাদশী সেই মেয়েটি কার ঘরের বউ এখন?
আর সেই কুড়ি বয়সী রমণী এখন কী বিগত যৌবনা!
কে তার খবর রাখে !
কত প্রতিক্ষার মৃত্যু হলো, পথ চেয়ে চেয়ে কত বসন্তকাল
চলে গেল
কোনো পথ দিয়েই সেই অভিমানীরা আর ফিরে এল না।
আগে মানুষ
শফিকুল ইসলাম সোহাগ
মাতাল কোলাহল সমস্ত গোলার্ধে
জনতার অনুভবে ক্রমশ ক্রন্দন
জীর্ণ কুটির থেকে সভাসদ শোকের মিছিল
জন্মসূত্রেই নিঃসঙ্গ মানুষ চৌমাত্রিক ধ্বংসে
নশ্বর পৃথিবীপৃষ্ঠে- বাড়ছে মানুষের তামাশা
কারুকার্যের বিচিত্র দেয়ালের ফাঁকে অন্ধবিলাপ
উত্তপ্ত পৃথিবী এখন পরিচ্ছন্ন পরিভ্রমণে
খুঁজতে শুরু করেছে সুষম ঠিকানা
আত্মমগ্ন আশরাফুল মাখলুকাত
করছে পবিত্র অবগাহন।
আদর্শিক মুল্যবোধের হিড়িক
পিঠ ঠেকলে যেমন হয়
ক্লান্তির পদভারে যে রচনা করে বিষাদ কবিতা
জঙ্গল ছেঁটে যে গড়ে মহব্বতের মিনার
বিচিত্র নাগরিক দেয়ালে যে গড়ে উচ্চতম পাহাড়
তার নাম সত্য সাধক
তার নাম কবি
যিনি মানুষ
অতএব ,আগে মানুষ হই।
জলের আহ্বান
নূরজাহান শিল্পী
প্রার্থনার হাত গুলো পৌঁছে যাক ঊর্ধ্বাকাশে,
মাটি থেকে উঠে আসা কিছু কঙ্কালসার|
মৌলিক বেঁচে থাকার লড়াইয়ে,
খানিক ভিজুক শোষিত বঞ্চিত মেহনতি হাড়গুলো
জীবনের কিঞ্চিত সুখে|
অনাহারী দেহ বল অশ্রু যেনো ঘাম -ঝরা,
মা ও মাটির টানে আজ লক্ষ পেশী বৃষ্টির মিছিলে,
আদিম হিংস্র দানবের থাবা
বিভীষিকার অগ্নি প্রলয়ে
পুড়ে খাক হয়ে যাক ঊর্ধ্বমুখী জলের আহ্বানে।
পাতা গজাবার আশ্চর্য জাদুতে ,
ন্যাড়া গাছটা ও আজ সবুজের প্রতিবাদী ভঙ্গিমায়,
জানান দিচ্ছে অস্তিত্বটুকু।
প্রবাহধারা ঢেলে দাও ধরণীতে করুণাময়ী রূপে বর্ষার বানে।
শ্যামল সর্ষে সবুজের ক্ষেতে,
ফুটুক হাসি কৃষকের ঠোঁটে|
তিমির রাত্রী ঘুচে যাক,
নতুন সূর্যের আগমনে।