top of page
shahaid minar.jpg
sikor logo 1.png
একুশের কবিতা

কামরুন নাহার- এর কবিতা

কিম্ভুত সফেদ বিহঙ্গ 

 

শহরের কিম্ভুত তার চিলেকোঠায় দাড়িয়ে দাড়কাকের

সাথে গল্পে মেতে ওঠে

আর দার্শনিকের ভাষায় এক মৃত পৃথিবীর অতল গহ্বরে

মিলিয়ে যাবার পঞ্জিকা খুলে বসে।

বারান্দার তাড়ে ঝোলা কাপড়গুলো শীতল হাওয়ায় হালকা দোলে।

আর তার দোলাচালে রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা স

ব্জিওয়ালা সম্বিৎ ফিরে পেয়ে ফের চেঁচিয়ে ওঠে।

বিবেক বিসর্জনে উদগ্রীব কিছু তরুণ যুবক পাশে হেঁটে যাওয়া

কোন তরুণীকে হালকা শিস দিয়ে ডেকে ওঠে।

পাড়ার জীর্ণ ডিসপেনসারির বৃদ্ধ বয়স্ক লোকটি

সবকিছু দেখেও না দেখার ভান করে।

সিড়িতে দাঁড়িয়ে থাকা গোলাপি শাড়ীতে জড়ানো বাগানবিলাস

সব কিছুর একান্ত সাক্ষী হয়ে দাড়িয়ে থাকে।

পথিকের মনে তবুও কিছুটা আলো ছড়াতে পক্ষপাতিত্ব করে না। 

হয়তো গাছ বলেই করে না

মানুষ হলে হয়তো আর পেরে উঠতো না।

মানুষের আর গাছ হয়ে ওঠা হলো না।

মানুষ আর গাছ হতে পারলো না। 

মানুষের আর আকাশ ছোঁয়া হলো না।

অঞ্জনা  চক্রবর্তী - এর কবিতা

খাদ

 

অন্ধকার  খাদে  ঠেলে  ফেলে  দিচ্ছিলো  কেউ...

আলো  টা  যেখানে  আসতে  আসতে  যেতে  যেতে  কালো  হয়ে  গেলো

আমি গড়াতে  গড়াতে  পড়ে  যাচ্ছিলাম...

কালোটা  কে  আঁকড়ে  ধরে  বলছিলাম....

না  বলতে  পারছিলাম  না .. শ্বাস  রোধ  হয়ে  আসছিলো

বুকে  ভারি  পাথর, যন্ত্রণায়  কাতর ..

আস্ফুট স্বর.. কিছু  গোঙানী...পাখির  কিচিরমিছিরে  সেগুলো 

মিলিয়ে  গেল

কেউ  শুনতে  পেলোনা ...

আরো  আরো  কেউ  ধাক্কা  দিচ্ছে...

ডাইরেল্ড  মালগাড়ির  মতো  খুব  সন্তোর্পনে  শেষ  হচ্ছি

শিথিল  হচ্ছে  স্নায়ু , চোখ  দিন দিন  অবস...

আর  কত  পুড়তে  হবে  জানা  নেই

আর  কত  পড়তে  হবে  তাও  অজানা

এখন  উত্থান  শক্তিহীন  খাদে  আটকে  থাকা  একটি  নিস্প্রান  নিষ্প্রয়োজন জীবন

বাঁচার  ইচ্ছা  হারিয়ে  ঈশ্বর  কে  ডাকি

পরিত্রান  দাও.. মুক্ত  করো  আমার  দ্বারা  বেষ্টিত  পরিজনদের

আমি ... হল্কা বেড়েনো  আগুন  ফুলকি

যাতে  দগ্ধ  হয়েছে  সমাজের  মাননীয়

 

আমার চোখ  দিয়ে  ঝরে  বল্লম, জিহবা  দিয়ে  গরল

ছোঁয়াতে  বিষ

সুখে  চলে  যেতে  দাও  তাদের ... পথ  নয় অবরুদ্ধ

আমি  থাকি  আমার  মতো  খাদে  বিলীন ..মৃত্যু  ঘন্টা  গুণী  ক্রমশ

থাক  সবাই  ভালো , আমার  থেকে  দূরে... আমি  চাইনা  কারো  সঙ্গ ।

সাজু কবীর - এর কবিতা

মন, জোড়া চোখ ও আলো

 

 

 

লোকটির মেরুদণ্ডে একটি সূর্য ঠায় দাঁড়িয়ে

মেঘলা নয়, স্বচ্ছ আকাশ থেকে নেমে আসে কিছু বাঁশ ফাটা শব্দ তরঙ্গ

ঝলমল করে ওঠে রামধনু ... 

 

এখানে কর্কশ কোন মধ্যযুগ নেই

নেই আধুনিকযুগের গোলা-বারুদের

বীভৎস ঝলসানি... 

 

অথচ অকুল পাথার

লোকটির জোড়া চোখ যতদূর যায়

শুধু বিশ্রী অন্ধকার... 

 

পাশে দাঁড়িয়ে থাকা হরিদ্রাভ বটগাছটির কণ্ঠে নির্দেশনা আসে : "মনের নয়ন খোলো"...  

আচমকা সমান তালে হেঁটে যাওয়া এক সুশ্রী ছায়ামূর্তির প্রেমে পড়ে যায় ;

হরিণ-দৌড়,.. হাঁসফাঁস;...তবু নাগাল মিলে না তার...

 

 

ছায়ামূর্তি একটি পত্র উড়িয়ে দেয়:

হায় প্রেমিক, এতো দূর কেন?

আমাকে দেখতে চাও! পেতে চাও!

তোমার মেরুদণ্ডে খোঁজো...

ভীষ্মদেব সূত্রধর - এর কবিতা

মা এবং মাতৃভাষা


শ্রদ্ধায় অবনত এই ফাল্গুনে মায়ের উদর থেকে

মুষ্টিবদ্ধ হাত বেরিয়ে পড়েছিল
রাজপথে, অগণিত সন্তান বুলেট পায়ে দলিত করে

এগিয়ে গেছে ভাষার লক্ষ্যে;
মায়ে'র বুকে সন্তানের বুলেট চিহ্ন।
দগদগে থকথকে রক্তাক্ত অক্ষর,

জীবন্ত অক্ষর আমাদের প্রতিষ্ঠিত করেছে বিশ্ব
দরবারে। বরকত-রফিক থেকে কমলা-বীরেন্দ্র

সূত্রধর সমস্ত বীর আর বীরপ্রসূ
মায়ের কাছে আমার মাথা,

ভাষা নিবেদিত হোক চিরকাল।
প্রশস্থ লাল কৃষ্ণচূড়া থেকে বেয়ে বেয়ে পড়ছে রক্ত,

ফোঁটায় ফোঁটায়
বর্ণমালা। ভালবাসাহীন পৃথিবীতে ভাষা

আমাদের হাসিয়ে কাঁদিয়ে চলছে আপন
গতিতে, স্রোতের মতো পালন করছে সিক্ত জ্ঞান,

অভিষিক্ত করছে নতুন ধারা। মা
ও মাতৃভাষা একাকার হৃদয়ের রাজন্যে।
ভালবাসি হে পবিত্র অক্ষর বিশুদ্ধ ভাষা।

শ্রদ্ধা ও প্রণাম বারংবার।

 

মাশরুরা লাকী - এর কবিতা

গীতল চোখে একুশ

একুশ আমার গীতল চোখে প্রথম অহংকার

শিমুল-পলাশ গেয়ে ওঠে প্রভাতফেরির গান

আমরা সবাই অসাধারণ নির্জলা বদনাম

ভাষাও কাঁদুক পথে

কেউ বা ভীষণ উৎফুল্ল বেদম অগ্নিরথে।

 

অচেনা এক প্রভাতে ফুল ছুঁড়ে দিয়ে শুনি

একদল তরুণের তাঁতেবোনা ব্যঙ্গ বর্ণমালা

আধুনিকতার ভুলের জয়ধ্বনি

কতো অভিযোগ কতো নালিশ দীর্ঘশ্বাসের ন্যাপথলিন

গন্তব্যের কাছাকাছি হাসে বিজ্ঞের লেজুড়ে পাণ্ডুলিপি।

 

ক্লান্ত অনুতাপে ঘোষণা দিচ্ছি

হে শহীদ বীর অবিনাশী আত্মার হাহাকারী দল-

আমাদের ক্ষমা করে দিও

রাত্রির নরোম ঠোঁটে ফুটেছিল যে লাল কৃষ্ণচূড়া

ঘাতকের এলোপাথাড়ি গুলিবর্ষণে যার অমোঘ সর্বনাশ

তোমাদের সাধের বর্ণমালার মিথ্যা জলাঞ্জলি

ক্ষমা করে দিও আমাদের অভিলাষী এ মাদল।

 

সেলাইমেশিনে রিফু করি আজ রক্ত-বর্ণমালা

তালি মেরে মেরে মন্দির-মিনার প্রমাণ করি বাংলা আমার মাতৃভাষা

মেখে থাক অবজ্ঞা আর ভুলে ভরা অবহেলা।

শফিক মনসুর - এর কবিতা

অস্তিত্ব

 

অনেক খুঁজেছি

গলি থেকে রাজপথ..

অমবস্যা, ভরা পূর্ণিমা,

প্রখর রোদ থেকে বজ্র বৃষ্টি...

পানশালা, সপিং মল,

ঝুল বারান্দা থেকে ক্যাপস্যুল লিফট...

বেহালা, বায়লিন, বাঁশি,

হেমন্ত, মান্না থেকে হালের রূপঙ্কর...

কুয়াশাছান্ন সকাল, অলস দুপুর থেকে বিষণ্ণ বিকেল...

উত্তর মেরু, দক্ষিন মেরু,

বৈশাখ থেকে চৈত্র

হৃদয়ের অলিগলি

কোথায়ও কোনখানে

আমি নেই..

 

 

আবদুল বাতেন- এর কবিতা

বসন্ত বারোমাস

        

কথারা কখনো ফিরে আসেনা, উৎসমুখে যেমন ফেরেনা

রুপালি ঝরনা, নিবিড় নদী

বেড়িয়ে যাওয়া বর্বর বুলেট।

তোমার আকাশ খোলা পিঠে রংধনু তিল-এই যে বলেছি

             দীঘল চুলে মেঘের ঘরবাড়ি

                           পাপড়ি ছড়ানো মিহি লোমে

তোমার বুকের বনানীতে প্রথিত পূর্ণিমার গহীনে টানা গান।

 

রক্তিম আলতা ও মেহেদির নকশায় নরম রোদের ঝিলমিল

সিঁথিতে শায়িত পায়রার পালক

কন্ঠে কোকিলের উষ্ণ অভ্যর্থনা।

আকাশ পাতাল চষে বেড়াচ্ছে জুটিগণ, নিশ্চিদ্র গলা ধরাধরি

                   অস্থির অনিলে বসন্তের খোঁজে

                                   মনন মসনদে বসিয়ে তোমাকে

পূণ্য শ্লোকের মত সতত বলছি-

                     তুমিই আমার বসন্ত বারোমাস।

আতিকা হাসান- এর কবিতা

একুশের অহংকার
 

 



পিচঢালা রাজপথ রক্তবন্যায় ভেসে যায়
ভেসে যায় আবাদি জমি, অনাঘ্রাত সুখ,
পলাশ, শিমুলের বিস্তৃত হাজার মাইল।
চোখের নোনাজলে জমাট বাঁধে ফাগুনের বাতাস
জমাট বাঁধেনা বীর সন্তানের দুরন্ত যৌবন।


রক্তের নদীতে রক্তিম বৈঠা
বর্ণমালার ভেলায় চড়ে রক্ষা করে বাংলাভাষার সতীত্ব,
তিনশত ছেষট্টি দিনের ক্যালেন্ডারের পাতা থেকে
তুলে আনে লালশালুক, একটি  রক্তিম ফুল
একটি সাড়ে চব্বিশ ঘন্টার প্রত্যয়  
আজীবন মাথাউঁচু করে দাঁড়াবার এক বিস্ময়।

দুঃখিনী বাংলামায়ের শাড়ির আঁচলে আগলে রাখা
বিশ্বায়নের সহস্র ভাষার অহংকার
আমার বাংলা বর্ণমালা!
আত্মার গভীর  শেকড়ে  প্রোথিত
বাঙালি জাতির দুর্বার কণ্ঠ, বারবার জেগে ওঠা দুর্নিবার সাহস
বাঙালি ও বাংলা নামে ঈর্ষণীয় অবারিত সঞ্চয়।

কৃষ্ণচূড়া রঙে ছড়িয়ে পড়া ফেব্রুয়ারির মায়াময় বুক
চির বেদনাবিধুর, তবুও গৌরবে উন্নতশির।

নজমুল হেলাল- এর কবিতা

বঙ্গলিপির জয়গান

 

উর্দু শুধু আল্লাহর ভাষা নয়রে
এই কথা আজ বঙ্গলিপি কয়রে
ভয়কে দিয়ে দূর ঠেলে
উড়ছে লিপি পাখা মেলে
বঙ্গলিপির জয়রে!

বিশ্বজুড়ে একই কথা
মায়ের ভাষায় দিয়ে ব্যথা
কেউ হয় না লাভবান
কৃষ্ণচূড়া রক্তজবার জেগে ওঠে প্রাণ
বীরের বায়ু বয়রে।

ত্যাগের ফসল সজীব থেকে
সোনালি হয় নিত্য পেকে
মৃত্যু হয় মৃত্যুঞ্জয়ী
২১ হলো ’৭১-এর জয়রে!

করলে আঘাত ব্যাঘাত ঘটে
কালিমা লেপন হয় স্মৃতির পটে
পতন ঘটে স্বৈরাচারের
তুচ্ছ কিছু নয়রে।

তুচ্ছ ভাবে শাসক যখন
বিশ্ব বিবেক জাগে তখন
মিথ্যে মেকির ভণ্ড নিশান
লণ্ডভণ্ড হয়রে।
বঙ্গলিপির দীক্ষাটি তাই
স্বৈরাচারের ভয়রে!

মালেক ইমতিয়াজ- এর কবিতা

বাংলা ভাষা

 

বাংলা ভাষা আমার বুকে ভাসছে নিরবধি,

সালাম রফিক জব্বারের রক্তে ভেজা নদী।

বাংলা ভাষা আমার ঘুড়ি উড়ছে গগনজুড়ি,

আকাশ থেকে নেমে আসা ফুলপরীদের বুড়ি।

বাংলা ভাষা আজান-ভোরে ডাকছে কোন পাখি,

পাখির ডাকে খোকন খোলে ঘুম-ভেজানো আঁখি।

বাংলা ভাষা মায়ের হাসির উপছে পড়া মুখ,

গাঁয়ের বধূর সলাজ হাসি শরম রাঙা চোখ।

বাংলা ভাষা দূর আকাশে মুক্ত পাখির ডানা,

ভরদুপুরে শব্দ খেলায় আমার তো নেই মানা।

বাংলা ভাষা নরম স্বরে শিশুর প্রথম পাঠ,

বই মলাটে বাংলা ভাষার চাঁদের হাট।

বাংলা ভাষা পাঠশালাত বর্ণমালার পাঠ,

বাংলা ভাষায় ভরে ওঠে, ধান সবুজের মাঠ।

বাংলা ভাষা লাল সবুজের মুক্ত-দলিল নিশান,

আমার দেশের পরিশ্রমী সোনার ছেলে, কিষান।

বাংলা ভাষা আমার বোনের কানের ঝুমকা-দুল,

দুল-দোলটা আমার কাছে বাংলা ভাষার বোল।

বাংলা ভাষা আমার দাদীর নোলকপরা হাসি,

এই হাসিটি বাংলা ভাষার, নিত্য ভালোবাসি।

মোহাম্মদ ইকবাল- এর কবিতা

একজন দর্পী মহানায়কের গল্প

 

 

একটি উত্তাল জনসমুদ্র

একটি বিধস্ত নৌকো

একটি নির্ভিক মাস্তুল পাটাতনে দাঁড়িয়ে

একটি সাড়ে সাতকোটি গণমানুষের জনপদ

একটি বিক্ষুব্ধ আক্রোশ

একটি অনঘ দাবি

একটি বর্জ্রকণ্ঠের তীব্র হুংকার

একটি মুক্তির ইস্তেহার

একটি স্বাধীনতার ঘোষনা

একটি তর্জনীর ইশারা।

একজন মহানায়ক স্থপতির স্থপতি

কিংবদন্তি বজ্রকণ্ঠের একটি মহাকাব্য,

এক মহান মুত্তিযুদ্ধ

এক সাগর রক্ত সম্ভ্রম আত্মাহুতি

একটি দেশ প্রেমিক মুক্তিবাহিনী

একটি অনন্য মহাবিজয়

একটি মহান বীর গাথা।

একটি পবিত্র সংবিধান

একটি সার্বভৌম সংসদ

একটি নতুন ভূখণ্ড বিশ্বের মানচিত্রে

একটি পতাকা, লাল সবুজের

একজন সিংহপুরুষ

একজন শেখ মুজিব

একজন বঙ্গবন্ধু

একজন জাতির জনক

একজন দর্পী মহানায়কের গল্প...

bottom of page