কবি কামরুন নাহার
কামরুন নাহার একজন সৃজনশীল কবি ও লেখক। তিনি বাংলা এবং ইংরেজি ভাষায় ছোট গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ লিখে আসছেন অনেক দিন। বর্তমান সময়ের প্রগতিশীল ও প্রতিশ্রুতিশীল কবি ও কথাশিল্পীদের মধ্যে অন্যতম সৃজনশীল প্রতিভা সম্পন্ন লেখক। তাঁর একটি গল্প ১০১০ সালে বাংলাদেশের জাতীয় বইমেলায় "টেন স্কয়ার" নামক গ্রন্থ সংকলনে প্রকাশিত হয়েছে। কবির বাংলা কবিতা প্রতিনিয়ত বাংলাদেশ ও ভারতের ওয়েবপেজ, দৈনিক পত্রিকা এবং ম্যাগাজিনে প্রকাশিত হচ্ছে। তিনি নিজের ব্লগ এবং ফেইসবুক পেজ সফেদবিহঙ্গ ছদ্মনামে চালান। তিনি একজন প্রকাশিত হাইকু লেখক। তার হাইকু ইউটিউব জার্নাল, কোল্ড মুন জার্নাল, ফেইলড হাইকু জার্নাল, এবং ক্যাফে হাইকু জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে। তিনি শেরি ব্রাউন এর সাথে একজন সৃজনশীল লেখক হিসেবে কাজ করেন যিনি বাংলাদেশ ইংলিশ ল্যাংগুয়েজ টিচিং এ্যাসোসিয়েশনের সাথে জড়িত এবং মেটেরিয়াল ডেভেলপমেন্ট এর জন্য কাজ করছেন। এই বছর তিনি সৃজনশীল লেখক হিসেবে জল্ট আন্তর্জাতিক সম্মেলন ২০২০ এ অংশগ্রহণ করেছেন। ২০২০ সালে তাঁর একটি কবিতা প্রকাশিত হয়েছিল একটি আন্তর্জাতিক এয়ান্থলজিতে "পেনডেমিক পোয়েট্রি ২০২০" এবং ২০২১ সালে তাঁর কবিতা "প্যারাডাইস অন আর্থ" প্রকাশিত হবে অন্য একটি আন্তর্জাতিক এয়ান্থলজিতে।
কবিতা
আমি বলছি না আমাকে ভালোবাসতেই হবে
আমি বলছি না আমাকে ভালোবাসতেই হবে
তবে বিকেলে হালকা রোদের আমেজে
এক কাপ চায়ের আমন্ত্রণে কিছু গল্পতো হতেই পারে।
আমি বলছি না যখনই বৃষ্টি ঝরবে আমার আকাশ কালো করে,
তোমাকে আমার দুহাত শক্ত করে ধরে রাখতেই হবে।
কেবল চাইছি তুমি বৃষ্টিতে রেনকোট হয়ে আমায় জড়িয়ে থেকো।
চাইছি না তোমার সঙ্গ
প্রতিদিন, প্রতিনিয়ত!
কেবল চাই হাত বাড়ালেই
যেন তোমার স্পর্শ পাই।
রাতের আঁধারে ভয় পেলে
যেন কারও অনুভব গায়ে লেগে থাকে,
যার গন্ধ আষ্টেপৃষ্ঠে আমায় জড়িয়ে থাকে।
বলছি না ভালো বাসতেই হবে
আমি তো অভ্যাস, যা চিরন্তন
আমাতেই তোমার আমৃত্যু বিচরণ।
প্রেমানুভূতি সেতো মুহূর্তের ভুল!
বকুল ফুলের মালা
অশ্রুজলে লিখে ছিলাম
সন্ধ্যা তারার কথা
তুমি আমি দুজন মিলে
স্মৃতি ছিলাম যেথা
হাতের উপর হাতটি ছিল
মনের মাঝে মন
তুমি আমি একই ছিলাম
ভীষণ আপনজন।
স্বপ্ন ছিল তিন প্রহরের
রাত্রি হবে দিন
তুমি আমি সব অকারণ
মিছে রাত্রি দিন
দিনের শেষে রাত্রিকাশে
বকুল ফুলের মালা
কত সুখে বিভোর ছিল
আমাদের সেই বেলা।
মাঝ নিশীথে অন্ধকারে
তুমি আমি একা
কত সময় কাটিয়েছিলাম
গল্পে মেতে বেলা।
জোয়ার ভাঁটার এই জীবনে
কত কিছুই দেখা
মাঝ নদীতে তুমি আমি
বিপরীত দুই ভেলা
অস্তাচলের অন্ধকারে
আকাশ গেছে ছেয়ে
মিষ্টিদিনের সন্ধ্যাতারা
আর ভাসে না জলে
মেঘেদের সেই কথোপকথন
আর শুনি না হাওয়ায়
আমার তোমার সেই মধুক্ষণ
হারিয়েছে এই বেলায়।
নারী
নারী!
তুমি কবে থেকে
এ পৃথিবীর অংশ হলে?
এ জনম তো বৃথাই তোমার ভুলের ভারে।
তুমি জানলে ঠিকই বুঝলে সবই
পারলে নাগো বদলে যেতে।
নারী!
তুমি ঠিক জানতো?
সবাই তোমায় শ্রদ্ধা করে।
তুমি সত্যি বোকা যে কেউ তোমায় ভোলাতে পারে।
তুমি অদ্ভুত এক স্বপ্নচারী স্বপ্ন দেখো দ্বিপ্রহরে।
নারী!
আজকে নাকি তোমার দিবস লড়াই করার।
হায়রে নারী!দুঃখ লাগে তোমার লাগি
চিরটাকাল বোকাই তুমি।
ভুলের ভারে জর্জরিত মানুষ হয়েও নিগৃহীত
যুদ্ধ তোমার প্রতিনিয়ত এটাই তুমি জানলে নাগো।
নারী!
তুমি কখনও রানী, কখনওবা তুমিই দাসী
কখনো স্বয়ং প্রেয়সী কখনোবা বেশ্যা নারী
তোমার কত ভূষণ জড়াও তুমি এক দেহেতে
নারী!
তুমি অহংকারী হৃদয়হীনাও বরং বটে
তোমার নেইকো মায়া যেনো তুমি জলের ছায়া
নেই পিছুটান, তুমি এক অদ্ভুত তান।
নারী!
তুমি কি সেই তনয়া !যে কিনা ভারী চঞ্চল
ভীষণ তেজী!
যে কিনা মুচড়ে ফেলে শত সমাজ সংস্কৃতি
সকল তার রীতিনীতি
নারী!
তুমি খুব সাহসী
লড়াই তোমার নিত্ত সাথী
নারী তুমি হার মেনো না তুমিই বীর বীরাঙ্গনা
নারী!
তুমিই বড্ডও জেদি
সব কিছুকেই আঁকড়ে বাঁচো
লড়াই তোমার নিজের মাঝেই
মানতে তবু চাও না কভু
নারী!
তুমি স্বেচ্ছাচারী
অকারণেই ঝড় হয়ে যাও
তীব্রবেগে ধ্বংস কর
হয়তো প্রেমে নাহয় ত্রাসে
নারী!
তুমি যুদ্ধক্ষেত্রের রণাঙ্গিনী
জীবনস্রোতের বীর সাহসী কর্মক্ষেত্রে জয়ী ।
এই তুমিই কখনো প্রেমী কখনোবা দেবী চণ্ডী
নারী তুমি খুব পাজিতো যখন যেমন খুশি
ইচ্ছেহলেই এই সরসী আবার গোমড়ামুখী।
নারী!
এই তুমিই আবার স্নিগ্ধ মাতা
অকৃত্রিম শুভ্র ভালবাসা।
তুমি রোমান্স আবার
উষ্ণ প্রেম ভালবাসা
তুমি জগৎমাতা
মহামানবী নামে ভূষিতা।
তুমি প্রেমিকা,
তুমি সেবিকা,
তুমিই আবার জন্মদাত্রী মাতা।
হায়রে নারী!
তুমি এক জীবনে
কত কিছুই করলে বটে
তাও নারী নারীই রইলে
এই পুরুষতান্ত্রিক সভ্যতাতে।
উন্মাদ
মমই উল্লাস ছুড়ি চিৎকার
বিধি বিধানের করি উৎপাত
ভাঙ্গি রুচিবোধ করি বিধি বধ।
আমি রসিক উন্মত্ততা
আমি সুখবোধ
আমি ছিনিয়া নিয়েছি সব ক্রোধ
সকল মতবিরোধ।
আমি উন্মেষ
আমি নিজেই নিজেরে করি শেষ
আমি শান্তির দূত
শান্ত সাগর,সীমাহীন পথযাত্রী।
এ যে নিত্য নতুন ধরণী
শঙ্খচিলের ডানায় করি
আনে মৃত্যুর বানী।
এ যে ট্রাম বাস
আর দেয়ালের ভাঁজ
কঠিন কাঁকড়ে গাঁথা
এ যে ইট কাঠ আর সুরকির রাজ
নেই তো কোথাও ফাঁকা।
এইখানে কোন স্বপ্ন আনে না
বিহঙ্গ পাখা মেলে
রোদেলা আকাশ
যায় নাকো দেখা গ্লানিদের বসবাস
সদাই শ্রান্ত পরিশ্রান্ত
মলিন সকল মুখ
আমি করি ধ্বংস আনি উল্লাস
এ জগতেই মোর বসবাস।
আমি গোধূলি আলো কোমলমতি
নরম আলতো ছোঁয়া
আমি কোন রমণীর নরম হাতের
পরম কিছু পাওয়া।
আমি বীরাঙ্গনা নীলিমা ইব্রাহিমের
সেই একই আমি ছেলেহারা মা
একত্রের দিনগুলি।
আমি নব অভ্যুত্থান
ইসরাফিলের শিঙ্গার ফুঁ
হঠাৎ পাওয়া জীবন।
আমি উন্মাদ
ভাবি সব নতুন কিছু
হানি বিপ্লব পরিকল্পিত
স্বপ্ন করি চুরমার।
জ্বলি ঐ রোষ অনলে
করি নাশ যত জাত বিভেদের
জাগিয়া উঠি এ প্রলয়ে
মমই উল্লাস আজ মার্কিন রাজ
শত উদ্বাস্তুর চিৎকার
মুসলিম নামে যুদ্ধ
চারিদিক তাতে ক্ষুব্ধ
প্রকৃতিও যেন উদ্বুদ্ধ
প্রমাণ করতে আজ
আমি মানবতা গুমরে মরি
স্বাধীনতা খুঁজি চারিপাশ ব্যাপী
চির সবুজের পূজারী
যেথা মেঘমালা ভাসে চারিপাশ মাঝে
সুধায় প্রাণের বার্তা।
আজ রক্তিম লালাধার
চারিদিক যেন আঁধারই আঁধার
বিষাক্ত পৃথিবী
কৃত্রিম হাসি হাসে
আমি নিরুপায় যেনো উন্মাদ
আমি উন্মাদ
যেন নিকষ কালো
কেবলই এক খোলস
নেইকো তেজ নেইকো রূপ
যেন কঙ্কাল স্বরূপ।
স্বপ্নের ফেরিওয়ালা
স্বপ্ন ফেরি করছিরে ভাই
হরেক রকম স্বপ্ন
কিনবে নাকি দু চারটে
নানান রঙের স্বপ্ন
নানান ভাষার নানান রূপের
কত যে ভাই স্বপ্ন!
স্বপ্ন ফেরি করিরে ভাই
সাদা কালো স্বপ্ন আছে
রঙিন আলোর স্বপ্ন আছে
দুঃখভরা স্বপ্ন আছে
খুশির আছে, হাসির আছে
ভূতের আছে, প্রেতের আছে
নানান রকম স্বপ্ন আছে
কিনবে কি ভাই স্বপ্ন!
স্বপ্নজোড়া আকাশ থাকে
বিশ্বজুড়ে স্বপ্ন থাকে
স্বপ্নে আবার প্রাপ্তি থাকে
অপ্রাপ্তিও থাকে বটে,
স্বপ্ন ফেরি করছিরে ভাই
কিনবে নাকি দুচারটে।
স্বপ্ন ছাড়া মানুষ বাঁচে?
দেখি না ভাই এই জগতে
স্বপ্ন নিয়েই বাঁচতে শিখে
জন্ম হতে মৃত্যুতে।
স্বপ্ন ,স্বপ্ন কেউ নেবে কি স্বপ্ন
নানান জাতের,নানান রসের স্বপ্ন
স্বপ্ন দেখাই এই স্বপ্নওয়ালা
কিনবে কি কেউ স্বপ্ন।
কত রকম স্বপ্নরে ভাই
কত রকম স্বপ্ন!
দুঃস্বপ্নও আছে কতেক
তারও মূল্য কম কিছু নয়
একই রকম মূল্য রে ভাই
একই রকম মূল্য!
ভৌতিক কিছু স্বপ্ন আছে
বিদঘুটে আর ভয়ঙ্কর
রক্তিম কিছু স্বপ্ন আছে
যুদ্ধ আর মাতঙ্গর
দুর্যোগ ঘেরা স্বপ্ন আছে
ধ্বংস আর প্রলয়ঙ্কর।
মিষ্টি কিছু স্বপ্ন আছে
যুগল প্রেমের স্বপ্ন আছে
সন্ধ্যারাতের স্বপ্ন আছে
দিবানিদ্রার স্বপ্ন আছে
কত রকম স্বপ্নরে ভাই
কত রকম স্বপ্ন!
সবুজ শ্যামল স্বপ্ন আছে
কৃষক ভাই এর বুকের মাঝে
বৃষ্টিভেজা স্বপ্ন আছে
তরুলতার সবুজ প্রাণে
স্বপ্ন আছে সকল জীবের
মানবকুলের একটু বেশি!
নীল স্বপ্নের সুতো ধরে
যায় যে সে বহুদূরে
মরীচিকা ভেবেই এগোয়
মিলে গিয়ে স্বপ্ন রেখায়।
স্বপ্ন যে ভাই আকাশকুসুম
যায় না ছোঁয়া অস্পৃশ্য
তবুও ভাই স্বপ্ন দেখাই
স্বপ্নেরই ভাই করি ফেরি
স্বপ্ন ছাড়া কি জগৎ চলে
স্বপ্নেই তো হৃদয় দোলে।
স্বপ্ন,স্বপ্ন কেউ নেবে কি স্বপ্ন
নানান রঙের স্বপ্ন
নানান রূপের স্বপ্ন
কেউ নেবে, কেউ নেবে কি?
স্বপ্ন, স্বপ্ন, স্বপ্ন।
হে পুরাতন
তুমি জানো কি?
আকাশে আজ বহু তারা,
তারারা তোমার কথা মনে করিয়ে দেয়।
বহু রাত জেগে থাকা
বিছানায় এপাশ ওপাশ।
স্মৃতিদের আঁকিবুঁকি আর ক্লান্তিহীন জীবনযাত্রা আমাকে নিঃস্ব করে দিয়ে যায়, বারেবার।
সেদিন ছিলো রবিবার। কলেজ বন্ধ ছিল।
সারাদিন তোমার অপেক্ষায় ছিলাম।
ঝুম বৃষ্টি এলো
কিন্তু তুমি এলে না
তোমার অপেক্ষায় থাকতে থাকতে আমার দুচোখ জলে ভারি হয়ে এলো।
এলোমেলো ভাবনারা বিলি কেটে কেটে ঠিক তার পথ করে নিলো।তুমি তার খবর ও পেলে না।
এভাবেই হয়তো রাত ফুরিয়ে নতুন দিনের সূচনা হয়। পথিক নতুন পথ খুঁজে নেয়। নীরবে পাখিরা নীড়ে ফিরে যায়। বন্য হয়ে ওঠার মাতাল আগ্রহরা নিমেষে হারিয়ে যায়। গৃহের কোণে কোন পোষমানা পাখি হয়ে খাঁচায় বন্দী হতে মন হাত বাড়ায়। স্বপ্নের দুয়ারে তালা দিয়ে সে নেমে আসে এই মৃত্তিকার পৃথিবীতে, বেঁচে থাকার তাগিদে।
শুরু হয় ঝলমলে নতুন দিনের সূচনা। সেখানে তুমি কিংবা তোমার স্মৃতিরা কোথাও নেই।
তোমার স্মৃতিদের বরষার জলে ভাসিয়ে দিয়ে আমি আজ বহুদূর।
আজ আমি ভারমুক্ত, গ্লানিহীন।
আজ বহুদিন পর তাই বলতে ইচ্ছে হয় ভালো আছি।
বেশ সুখে আছি।
গ্লানিহীন এক জীবনের স্বাদ নিচ্ছি যেন পরিপূর্ণভাবে।
আবেগতাড়িত হয়ে নয়। আবেগমুক্ত হয়ে।
তাই আজ মন খুলে বলছি
ভালো থেকো হে পুরাতন।
প্রানের জাগরণ
শহরের বসন্তরা বিদায় নিবে বলে জানিয়ে দিলো।
চৌরাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা ট্রাফিক
মন খারাপের বায়না তুললো।
পথের পাশে পড়ে থাকা ভিক্ষুক
তার থালা উল্টো করে বসে রইলো।
সবাই আজ হরতাল করবে
সাইরেন বাজিয়ে মেঘেদের গর্জন শুনবে।
এক মহামারীকে বুড়ো আঙুল
দেখিয়ে ঝেঁটিয়ে বিদায় করবে।
ডেকে আনবে মহা প্লাবন
স্বর্গ শুচিতার এক নতুন পৃথিবী।
এই বর্ষা স্নাতো বাংলায়
জেগে উঠবে প্রানের নতুন ঢেউ
এক তরুণ প্রজন্মের উদাত্ত পৃথিবী।
আবারও এক সর্গীয় সুখে জেগে উঠবে
আমার এ সোনার বাংলা।
রাতের আকাশ
রাত নামে, রাত নামে মনের মাঝেও।
সব রাতই যে এক ঝলকে পার হয়ে যায়,
আকাশে সীমাহীন জোস্না ফুটে ওঠে তা কিন্তু নয়।
কিছু কিছু রাত বেশ গভীর হয়।
কিছু কিছু রাতে ডায়েনের সুরে
কুকুর হয়ে ডেকে ওঠে এক ভয়াল চিৎকারে।
কিছু কিছু রাত
নিবিড় কালো অমাবশ্যা হয়ে
ছুরিকাঘাত করে।
তবু্ও কিছু রাত মহিমাপূর্ণ।
তবুও কিছু রাত সুখের, আনন্দের।
রাত সেতো আসবেই
তা না হোলে
দিন যে হলো কিংবা দিনেরও যে এতো আলো
এতো সুখ, এত আনন্দ!
তা মানুষ বুঝতো কি করে!
তাই তো বলে উঠি প্রাণ খুলে
রাত্রি আমায় অমোঘ সুখে
দিয়ে যায় শান্তি লীলা।
রাত্রি আমায় ভালোবেসে ছড়িয়ে যায় প্রফুল্লতা।
জীবনের গল্প
মেহেদী ফুল তুমি সবুজ আভায় রাঙিয়েছো নিজেকে
বধু কাননে বসে তেমারই অপেক্ষায়।
মেহেদী তুমি রাঙাবে হাত হয়তো তারই অপেক্ষায়।
ফিরতে হবে ঘরে
প্রেয়সী অধীর আগ্রহে প্রহর গুনছে।
হয়তো কিছু তাড়াই ছিলো মনে
হঠাৎ বেজে উঠলো ফোন
দিলো খবর
আগুনে পুড়ছে ঘর
মুহূর্তে বিলীন স্বপ্ন
ধুধুপ্রান্তর চোখে চোরাবালি
সময় যেন থমকে গেলো।
প্রেয়সীর মেহেদী রাঙা হাত
পুড়ে একাকার
নেই কোন বাঁচার আশ্বাস।
বছর পাঁচেক পর, হঠাৎ দেখা
কাঁচা পাকা দাড়িতে মুখ ঢাকা
স্বপ্ন যখন রয় অদেখা
আকাঙ্ক্ষার দুঃসহ বেদনা
শরীর মন আকড়ে শৈবালের ন্যায় পরগাছা হয়ে বেড়ে ওঠে দেহ ও মনে
ক্লান্ত হৃদয় কাঁচের টুকরোয়
দেখে অদেখা অবয়ব।
মনের তৃষ্ণারা পিপাশার্ত রয়ে যায়
শরীরের বুভুক্ষুরা মৃত আত্মার মতো বেঁচে থাকা শিখে যায়।
এও এক সংগ্রামী জীবনের বেঁচে থাকা।
শত সংশয়ের, সংযমের উর্ধ্বে গিয়ে টিকে থাকা।
এওতো এক বেঁচে থাকা।
এই বেঁচে থাকার গল্পগুলো খুব ধূসর, প্রানহীন।
প্রজাতিরর পাখা কিংবা কোন রংধনুর নয়।
এর স্রোতধারা খুব দ্রুত পাল্টে যায় না।
বিলীন হয় না মুহুর্তেই।
কোন এক শারদ প্রভাতে
শারদপ্রাতে শিউলি তলে তোমার অপেক্ষা
প্রহর গুনে ক্লান্ত হয়ে
ফেরার পথেই তোমায় দেখা!
সুনীল আকাশ, গাইছে বাতাস
শারদস্নিগ্ধ সুরে
তাই আজও কেন যেন মনে হয়
তুমিই হয়তো ছিলে।
ভুলের প্লাবনে গাছ হয়ে গেছি
কবে কোন জনমের দোষে
মানব শরীর বোঝে নাতো হায়
হঠাৎ দেখে ফিরে ফিরে চায়
চেনা মনে হয় অজানা ভুবন
অচেনা জগৎ কে।
কাছের লাগে পথের পথিক
ভীষণ আপন কেউ।
শারদীয় ক্ষণ উদ্যাম নেচে
গেয়ে যায় কোন সুর।
আমিও জাগি, প্রান জেগে ওঠে
উচ্ছলতায় যেন হেসে উঠে
বেজে ওঠে যেন স্মৃতির বেহালা
ঝঙ্কার তুলে লহরী আবেশে
বলে যায় যেন নিঃশব্দে
ছিলে পুরাতন ভীষণ আপন
হংসমিথুন জোড়া।