কবি মাশরুরা লাকী
আজ কবি মাশরুরা লাকীর জন্মদিন। শিকড় পরিবারের সাথে তিনি জড়িত রয়েছেন অনেকদিন এবং বিশেষ দায়িত্বশীল হয়ে কাজ করে যাচ্ছেন। অমায়িক, সদালাপী এবং সর্বদা হাস্যোজ্জ্বল এই কবি সবার কাছে সমানভাবে সুপ্রিয় ও সমাদৃত। তাঁর এই বিশেষ দিনে শিকড়ের পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন। শুভ জন্মদিন।
কবি মাশরুরা লাকীর জন্ম ১০ এপ্রিল, পাবনা শহর, নানাবাড়ীতে। পৈতৃক নিবাস টাঙ্গাইল জেলার মির্জাপুর থানায়।পড়ালেখা ও কর্মের সুবাদে ঢাকায় বসবাস।
কবি ইংরেজি সাহিত্যে স্নাতকোত্তর। লেখালেখিতে আছেন দীর্ঘদিন যাবত, কবিতার পাশাপাশি তিনি গল্পও লিখছেন নিয়মিত। বাংলা শিল্প-সাহিত্যের নানা সংগঠনের সাথে তিনি সক্রিয় ভাবে জড়িত তাছাড়াও গ্লোবাল পোয়েট এন্ড পোয়েট্রি ওয়েভ পোর্টালের একজন এডমিন হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন।
সম্প্রতি তাঁর কবিতা ভারত, নেপাল, পেরু, ইতালিয়ান ও ইংরেজি ভাষায় অনুবাদ হয়েছে। তিনি কবিতার জন্য কয়েকটি সংগঠন থেকে সাহিত্য সম্মাননা পেয়েছেন। এছাড়া তিনি একজন আবৃত্তিশিল্পী ও উপস্থাপিকা। এবারের বাংলা একাডেমি বই মেলায় প্রকাশিত হলো কবির প্রথম কাব্যগ্রন্থ পচন ধরা বাঙলা পিণ্ড এবং আনন্দের বিষয় কবির জন্মদিন উপলক্ষে আজই গ্রন্থটি বই মেলায় মোড়ক উন্মোচিত হলো।
কবির জন্মদিন উপলক্ষে শিকড় পাঠকদের জন্য প্রকাশিত হলো কবির একগুচ্ছ কবিতা।
জ্বলন্ত ভুল
মাথার উপর বিশাল আকাশ পুড়ছে হতাশ
লালের জ্বালায় জ্বলছে ভূমি, আমি, তুমি
জ্বলছে ডালের শূন্য হাড়ি মায়ের শাড়ি
দুধের শিশু, জ্বলছে বুকের ওম।
বলবো কি আর জ্বলছে মানুষ সবাই বেহুশ
জ্বলন্ত মন! তাতেই আবার স্বপ্ন বুনন
জলের মত জ্বলছি আমি অস্তগামী
সূর্য যেমন ভীষণ দুখে ভুলছে নিজের ভ্রম।
ক্যানভাসে আজ রঙের পোড়া ভুলের জোড়া
শুকনো বুকে মরুর ধু ধু রঙের মিথ্যে বাহার শুধু
বিক্ষোভে যাও যন্ত্রণা ভুল উল্লাসে নাও তোমার মাশুল
একদিন হবে মুক্ত নিঃশ্বাস অগাধ বিশ্বাসে তুমুল।
মৌলিক পাঁচ অধিকার ভুল জ্বালায় ব্যাকুল
জর্জরিত বোকা মানুষের দল
আমার দুয়ারে জ্বলছিল ভুল, জ্বলবে আকুল অনন্ত নির্ভর।
মানচিত্রের মুখ
আমার মায়ের হাত
শক্ত মুষ্টিতে বিপ্লবী জননী
'আনা ফ্রাংক' এর প্রতিলিপি।
সোনালী ধানের মৌতাত গন্ধ
বুকে পালতোলা লাটিমের অবিরাম ঝড়
মধ্যরাতের মদির চোখ
সাদা বক পক্ষির ঢুলুঢুলু ঘুম
মায়ের জমানো পদ্মা কালো চুলে
নাটাই জড়ানো সুখ
নিটোল মানচিত্রের মুখ।
আমার মায়ের দুচোখ মঞ্চে
জেগে ওঠে সোনালু শস্যখেত
রুপালী ইলিশ ঝাঁক
বিশ্ব কাঁপানো মমতায় মাখা
সহস্র মাইল বাঁক
সবুজ আঁচলে কোমল ষোড়শী রূপ
আমার মা সে-
পৃথিবীর পথে স্নেহের শীতল বুক
আমার মা'ই সরোবরে থাকা
মানচিত্রের কালজয়ী এক মুখ।
The Face of the Map
My mother's hands
Are a revolutionary mother’s tight-fist hands
And the mimicry of Ana Frank’s ones.
The sweet fragrance of golden rice
The endless sailing storm of the peg-top spinning in the chest
The midnight's obsessed eyes
Sleeping like the white bird
The happiness wrapped in my mother’s
Lotus like black hair
Is an amazing face of a map.
My mother's two eyes on the stage
Like the golden cropping field woke up
Silver Hilsa fish swarms
The world trembles with compassion
Thousand miles of turning
The soft sixteenth age of image with green scarf
This is my mum –
Tenderly extended chest of affection on the way to earth
My mum is a timeless face on the map.
গীতল চোখে একুশ
একুশ আমার চোখে গীতসাধ্য আদি অহংকার
শিমুল পলাশ গেয়ে ওঠে প্রভাতফেরির গান
মন যমুনায় ঢেউ খেলে যায় নির্জলা নির্ঝর
রক্তস্নাত রাজপথ আবেগের নদী হয়ে যায়।
চিরচেনা প্রভাতের সমীরণ ফুলগন্ধে ভাসে
মুছে দিয়ে রক্ত-দাগ তাঁতেবোনা ব্যঙ্গ্য বর্ণমালা
আমাকে কাঁদায় সুর পুষ্প পাখি দৃপ্ত ঝরাপাতা
সাদা শাড়ি কালো ব্যাজ পরিহিত রণ-রমণী।
প্রাণময় কথাগুলো শিস কাটে কৃষ্ণচূড়া ডালে
বসন্ত বনোসা দলে, বাংলা ভাষার প্রাণে প্রাণে
একুশের রাজপথ দীপ্ত আজও তীক্ষ্ণ তীরন্দাজ
শিল্পীর তুলিতে পথ অপরূপ ভাষাযুদ্ধ আঁকা।
একুশের পাণ্ডুলিপি অভিযোগ অনুযোগে কাঁদে
সর্বত্র বাংলা ভাষা ফুটে থাক খোঁপায় ভাস্কর্যে
শহীদের অবিনাশী আত্মার মর্যাদা দৃঢ় হোক
ভোরের শিশিরে, অচঞ্চল রাত্রির নরম ঠোঁটে।
সেলাই মেশিনে রিফু করি আজ রক্ত-বর্ণমালা
চল্লিশ কোটি বাঙালি পবিত্র প্রতীক হাতে নিয়ে
বর্ণের মাধুর্য রেখা বুকে আঁকি আনন্দ বিষাদে
ভাষা আমার জীবন, নিয়তির পরম পুস্তক।
পেনিট্রেট
এক গ্লাস নিরেট বিষ
এক পাতা অমিমাংসিত কবিতা
এক মহাকাল জোছনা
এক প্রহরের আমি
আজ বিশুদ্ধ হব বিষের হাত ধরে।
Les Miserable
The rains adorned the scattered lampposts over the city,
The paired hearts of the twin street boy's love
was hidden in the urban Kadam flower,
The fingers are too busy
I will buy love at the signal next junction
Let forget the highway, or the sunburned eyes.
I will be an anhydrous cloud flower.
You will be the les misérables ,
The heart will be illuminated by the light of the candle
Or, the sigh of that lover's couple.
We will float in the coming rainwater.
Let the hell be in prison of the wet city
আমি, স্বয়ং শেখ মুজিব
অনেককাল আগে
আমি চায়ের কাপে মানচিত্র গুলিয়ে স্বাধীনতা পান করতাম,
অগ্নিময় সন্ধ্যায় সার্বভৌমত্ব বন্টন করা হতো বোকা বুদ্ধিজীবীর কলমে,
আমি সেই কলমের জল একত্রিত করতাম টাকিলার গ্লাসে-
বোবা উল্লাসে।
তোমরা আমাকে বিপ্লবী নামে ডাকতে।
আমি ধুলোর বুকে এঁকে চলতাম বারুদের স্ফুলিঙ্গ
আমি বাংলার বুকে একা যেন এক হিমালয়শৃঙ্গ ।
আর রক্তের মিছিলে শ্লোগান ধরতো জীবন্ত শকুন
কখনো শহুরে কামরাঙা-ঝাড়ে
কখনো দূরের গাঁয় আলপথে
অথবা পাহাড়ে
বুনে চলতাম স্বাধীনতার উর্বরতম বীজ
আর জ্বলন্ত অঙ্গারে খুঁজে নিতাম সুখের সাতকাহন
মানচিত্রই তখন আমার হাজারকালের দহন।
তোমরা আমাকে বিদ্রোহী নামে ডাকতে।
অপ্রতিরোধ্য স্বার্থপর বিবেক
আর স্বাধীনতার উজবুক গ্রন্থি নেচে উঠতো সেতারের ঝংকারে
বুকের পচনধরা মাংসপিণ্ডে
ধর্ষিতা মায়ের আহাজারি
নীল বিস্বাদের অন্তরালে ,
আমি স্বপ্নের ক্যানভাসে স্বপ্ন এঁকে বলতাম -
'যার যা কিছু আছে তাই নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ো
সাত কোটি মানুষকে দাবায়া রাখতে পারবা না'_
তোমরা আমাকে বঙ্গবন্ধু বলে ডাকতে।
অথচ আমি চায়ের কাপে মানচিত্র গুলিয়ে স্বাধীনতা পান করতাম
কিষানীর খোলা স্তন ঢেকে দিতাম জাতীয় পতাকায়
আর আমার মেয়ে বন্দি অবস্থায় ছটফট করতো প্রসব যন্ত্রণায়
তখনো তোমাদের রক্ত অশ্রু হয়ে আমার চোখ বেয়ে নামতো ভাঙা চশমার অন্তরালে
কারাগারে - সভ্য ভব্যতার অসভ্য মায়াজালে
অথচ আমি বাংলার, বাংলা আমার
পদ্মার কোলে পালতোলা নায়ে ধীরে চলি অবিরাম,
কিনতেই হবে মায়ের আঁচল রক্তই বুঝি দাম ।
তোমরা আমাকেই স্বাধীনতা নামে ডাকতে।
হ্যা-
আমি সেই লক্ষ বুকের উল্লাসমাখা
তুফান ওঠানো বাণ,
কোটি হাত হয়ে জাগ্রত হওয়া হাজার কবিতা ও গান।
আমিই সত্যি স্বাধীন বাংলা
লাল- সবুজেই অম্লান।
হ্যা-
আমি তোমাদের বুকে
তোমাদের সুখে
শিখা - অনির্বাণ দ্বীপ
চিরায়ত সেই স্বাধীনতা
আমি, স্বয়ং শেখ মুজিব।