কবিতার ইশ্বর
ইকবাল হোসেন বুলবুল
শেষ হলে অপেক্ষার বেলা , আমার শহরে নামেন কবিতার ইশ্বর । তখন নিজেরে হত্যা করে আড্ডাখানা সাজাই ।তাঁর কণ্ঠ সময়ের মুয়াজ্জিন । ‘অর্জুনের আজান’ এবং ‘সাপ ও সূর্যমুখীর’ সাথে একে একে উচ্চারিত হয় ‘ইস্পাতের গোলাপ’ ‘বিদ্যুতের বাগান’ ‘বিপুলা বীজগণিত’ ‘মৌলিক ময়ূর’ ‘নীল কাব্যের বয়াত’সহ অগনীত শব্দমালা ।মদ আর মাংসবিহীন আড্ডায় চলে সত্য,সুন্দর,শান্তি আর জীবনের জিকির ...
কবি দেলোয়ার হোসেন মন্জু’র কবিতার সাথে পরিচয় ১৯৮৮,১৯৮৯ সালে ।
তখন তিনি বাস করতেন সিলেট শহরে আর আমি লন্ডন ।
তারপর অনেকদিন উনার কবিতা পডিনা বা পড়ার সুযোগ পাইনা ।লন্ডন থেকে প্রকাশিত শিকড় সাহিত্য পত্রিকার এক আড্ডায় পত্রিকার সম্পাদক প্রিয় কবি ফারুক আহমেদ রনি’র কাছে কবি দেলোয়ার হোসেন মন্জুর কবিতা দেখতে পাই । সেই থেকে জানতে পারি কবি দেলোয়ার হোসেন মন্জু এখন যুক্তরাজ্যে বসবাস করছেন ।
যোগাযোগ শুরু হলো । প্রথম দিকে প্রতি সপ্তাহে দু একবার পরবর্তিতে প্রায় প্রতিদিনই ফোনআলাপ । বিষয় একটাই বাংলা সাহিত্য । কেবল ইউরোপ, আমেরিকা, বাংলাদেশ , ভারত’ই নয় গোটা বিশ্বের কবি সাহিত্যিকদের কর্ম নিয়ে আলাপ করতেন অনর্গল ।
কবি দেলোয়ার হোসেন মন্জু সাহিত্যের মাধ্যমে সমাজ বদলের জন্য কেবল স্বপ্ন দেখে বসে থাকায় বিশ্বাসী ছিলেন না । তার বিশ্বাস ছিলো স্বপ্ন থেকে আরো শক্তিশালী ।
২০০৮ সালে বিলেত বাংলা কবিতা উৎসবে আমন্ত্রিত অতিথি কবি বেলাল চৌধুরী এবং কবি রফিক আজাদ’কে ঘিরে এক আড্ডা ছিলো আমার বাসায় । আড্ডার একবারে শেষের দিকে শুরু হলো কবিতা পাঠ । শামীম আজাদ , মাসুদা ভাট্টি, দেলোয়ার হোসেন মন্জু, মিলটন রহমান, নজরুল নাজসহ আমরা কবিতা পড়লাম । কবিতা পড়লেন প্রিয় কবি বেলাল চৌধুরী এবং রফিক আজাদ । সবাই চলে যাওয়ার পর কবি রফিক আজাদ কবি বেলাল চৌধুরীকে উদ্দেশ্য করে বল্লেন ‘গুরু এই ছেলেটার চোখে আছে পবিত্র আগুন’ ।
কবি রফিক আজাদের দেখা সেই ‘ পবিত্র আগুন ‘ কবি দেলোয়ার হোসেন মন্জু রেখে গেছেন আমাদের মধ্যে । রেখে গেছেন অনন্ত কালের স্রোতে তাঁর কবিতার মাধ্যমে ।