বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে শিকড়ের কবিদের কবিতায়
স্মরণ, শ্রদ্ধাঞ্জলি
মুজিব মরে নাই মৃত বলোনা তাঁকে
নজমুল হেলাল এর কবিতা
যে জাগায় সে ঘুমায় না
যে প্রেরণা
যে শক্তি সাহস আলোকবর্তিকা
তাঁকে মৃত বলতে নেই!
যদি মৃত ভেবে অযৌক্তিক তৃপ্তি খোঁজো
অন্যায় হবে -
বীজমন্ত্র ম'রে গেলে মানুষের কী থাকে আর?
মুজিব মরে নাই!! মৃত বলোনা তাঁকে !!
অধর্ম নাশক শোষকের কাছে ত্রাস
বৈষম্যের দেওয়াল ভেঙে ভেঙে
উন্মুক্ত আকাশ যে দ্যায় রঙিন ক'রে আজও
স্বপ্নভরা হৃদয়ের সৃষ্টিশীল চঞ্চল আকাশ -
তাঁকে যারা মৃত বলতে চায়
তারা বোধ হয় ইতিহাস পড়েনি মানুষের-
দাবানল থেমে গেলে
অরণ্যের জেগে ওঠা চির সবুজ দ্যাখেনি আজও
ধ্বংস স্তূপের ভেতরে লুকিয়ে থাকা তারুণ্য
দ্যাখা হলো না তাদের।
অবহেলা অমর্যাদা অনাদর যাঁকে দুর্বল করেনা
জাতি আর জাতি'র কণ্ঠস্বর
অভিন্ন নক্ষত্র হয়ে ওঠে
দেশ দশ আর পতাকা'র বিকল্প যিনি
তাঁকে কেন মৃত বলা'র দুঃসাহস দ্যাখাও?
এ্যাখন যে মুজিব বেঁচে আছে অন্তরে অম্লান
সে মুজিব মরে নাই মৃত বলোনা তাঁকে!!
বঙ্গ ছাড়িয়ে মানববন্ধু প্রেরণা বিশ্বময়
দুর্নীতিবাজদের চোখে জীবন্ত আতঙ্ক আজও
ধর্ষক লুটেরাও জানে বিজয় মানে মুজিব
স্বাধীনতা মানে মুজিব মুক্তি মুজিবের আরেক নাম
মুক্তিবাহিনী
মুক্তিযোদ্ধা'র এক একটি লাল গোলাপ প্রতিবাদের মশাল যেন
মুজিব ছাড়া আর কিছু নয়
আজও অহংকার আমাদের কোটি কোটি জনতার!!
মুজিব রাঙা ফুল সুবাসিত
মুজিব মর্মমূল চেতনার
ভাষা আশাতে দেশপ্রেম মানুষে মানুষে ভালবাসাতে
বাতিঘর জাতিস্বর মুজিব
এ্যাখনও স্বপ্ন দ্যাখায়
অমর কবিতা লেখায় মুজিব আমাদের
মৃত বলোনা তাঁকে মুজিব মরে নাই
মুজিব চেতনায়!!
কবি নজমুল হেলাল
জন্ম নভেম্বর ১৯৫৯ সাল, বাংলাদেশের মেহেরপুর জেলা শহরে। কর্মস্থল এবং বসবাস ঢাকায়। সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলে একজন বহুমাত্রিক প্রতিভার অধিকারী। গত পাঁচ দশক থেকে লেখালেখির সাথে জড়িত। নজমুল হেলাল কবিতায় যেমন সাবলীল তেমনি অন্যান্য বিষয়ে তার সমান দখল। সুতীব্র সমাজ সচেতনতার পাশাপাশি আবহমান বাংলা এবং বাঙালীয়ানায় তিনি আপোষহীন। মাটি ও মানুষের একান্ত কাছে থেকে নিজের অবস্থানকে তৈরি করতে সচেষ্ট হয়েছেন। তার কবিতার সোচ্চার শব্দাবলী বরাবর তাকে সমাজ পরিবর্তন আর মানুষের কাছাকাছি নিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছে। গান, কবিতা, প্রবন্ধ সব মিলিয়ে তিনি সার্থক কবি ও লেখক।
জাতীয় প্রতিভা বিকাশ কেন্দ্র, ঢাকার প্রতিষ্ঠাতা কবি নজমুল হেলাল এই পর্যন্ত অর্জন করেছেন নানা পুরষ্কার সহ অনেক সম্মাননা।কবি নজমুল হেলাল ‘বঙ্গলিপি’র জয়গান’ কবিতায় ভাষা, ভাষার হাজার বছরের সংগ্রাম এবং ঐতিহ্যের ইতিহাসকে সমৃদ্ধ করতে একটি বিশেষ রচনায় আখ্যায়িত হয়।
সাহিত্য-কাব্যচর্চায় বিশেষ অবদানের জন্য কবির পুরস্কার প্রাপ্তি'র মধ্যে অন্যতম হচ্ছে; শিল্পকেন্দ্র, যশোর (২০০৫), কালচারাল ডেভেলপমেন্ট ফোরাম, জয়পুরহাট (২০০৭), নজরুল সাহিত্য পরিষদ, রাণীর বন্দর, দিনাজপুর (২০১০), সমধারা, ঢাকা (২০১২), স্বর্ণপদক - একাত্তরের চেতনা বাস্তবায়ন পরিষদ, কেন্দ্রীয় কমিটি (২০১৬), এপার বাংলা ওপার বাংলা সাহিত্য সম্মেলন পদক (২০১৭) ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।সম্পাদিত ছোট কাগজ: মুখোশ খোলার চাবি, প্রেরণা, সহ এইসব দিনরাত্রি। কবির প্রকাশিত গ্রন্থের মধ্যে অন্যতম প্রকাশনা International Bangla Teaching (1983) সমাজতত্ত্বমূলক হেলালগীতি -'অ' সিরিজ(১৯৮৫), ভালবাসলেই খোঁজ রাখতে হয় (কাব্যগ্রন্থ ১৯৯৭), দেখা হলে বলতাম (যৌথ কাব্যগ্রন্থ), ভালবাসা গেছে এই পথে (যৌথ কাব্যগ্রন্থ) ইত্যাদি।
কবিতা
আমরা একটা শব্দকে কাছাকাছি টেনে এনেছি, খুব কাছাকাছি
আমাদের সুখের ভেতর, আমাদের দুঃখের ভেতর
আমাদের বুকের ভেতর থেকে থেকেই
আপাদমস্তক আমাদের আন্দোলিত করে তোলে যখন তখন।
আমরা এ রকম একটা অনন্য শুভ্র শব্দকে কাছাকাছি টেনে এনেছি।
খুব কাছাকাছি।
এই শব্দটাকে মাটির ভেতরে-ভেতরে চেপে রাখলে
গাছ হয়ে বেরিয়ে শাশ^ত সূর্যমুখী ফুল ফুটায়
রত্নাকরের অতল গভীরে ফেলে দিলে কখনো
ডুবুরীর হয়ে ওঠে প্রথম আকর্ষণ
এ রকম একটা শব্দকে অন্তহীন নীলাভ আকাশে ছুড়ে দিলে
আকাশ পারে না বিধ্বংস করতে কখনো
আমরা এ রকম একটা লালায়িত শব্দকে কাছাকাছি টেনে এনেছি
খুব কাছাকাছি।
অতন্দ্র প্রহরীর মতো আদি সৃষ্টির অন্তরালে এই শব্দটা কাজ করে যায়
অন্যরকম বেঁচে থাকার অকৃত্রিম মোহের মূলে এই শব্দটা
অন্যরকম কণ্ঠস্বরের মূলে এই শব্দটা
অন্যরকম দৃষ্টির মূলে এই শব্দটা
অন্যরকম ভাবনার বেদিমূলে এই অন্যরকম শব্দটা
মানুষের নিঃশব্দ অহঙ্কার।
এ রকম অন্যরকম একটা শব্দকেই আমরা কাছাকাছি টেনে এনেছি
খুব কাছাকাছি।
এ রকম একটা অপূর্ব শব্দের শাশ^ত সুঘ্রাণেই
আমরা অন্যরকম এক প্রাণী
এর জন্ম হয় জন্মগত অম্লান ভালোবাসার প্রস্ফুটিত ফুলে
এ রকম একটা সুমহান শব্দ ঐ নীলাভ আকাশে ছুড়ে দিলে
আকাশ পারে না বিধ্বংস করতে কখনো
এ রকম একটা শব্দকেই আমরা কাছাকাছি টেনে এনেছি
খুব কাছাকাছি।
এর দূরত্ব যেমন ফুল থেকে ঘ্রাণের
দেহ থেকে প্রাণের
মন থেকে মাধুরী
এ রকম একটা গর্বিত শব্দকে আমরা কাছাকাছি টেনে এনেছি
খুব কাছাকাছি।
এ রকম একটা শব্দেই শুধুমাত্র একটা শব্দেই
সশব্দের পঙ্কিল পদচারণায় সফল প্রতিবাদের পাথর ছোড়ে
জ¦লন্ত ভিসুভিয়াস, ফুজিয়ামা কিংবা তেজঃময় সূর্যের মতো
ক্ষুদ্র উত্তাপ নিয়ে এই ভয়ঙ্কর সুন্দর শব্দটার আবির্ভাব নয়,
যেন সফল সংযমের বাঁধনে বাঁধা সীমাহীন উত্তাপ।
অক্ষয় অমরের জাতভাই এই সাধের শব্দটা আমাদের,
ত্যাগী রক্তের গোলাপ ফুটিয়ে চিরায়ত বঞ্চনার চাদর ছিঁড়ে ছিঁড়ে
এ রকম একটা শাশ^ত সুন্দর শব্দকে খুব কাছাকাছি টেনে এনেছি
খুবই কাছাকাছি।
অনির্বাণ দীপ্তিমান এ রকম একটা শব্দ ত্যাগে কষ্টহীন করে তোলে
ত্যাগে কষ্টহীন করে তোলে
কষ্টহীন করে তোলে
এ রকম একটা অতি জরুরি অনিন্দ্য শব্দের নাম, স্বাধীনতা !!
আমাদের প্রাণের স্বাধীনতা !!
অলৌকিক আইপিএস
না, তোমাকে পায়ের কাছে মানায় না
মাথা'র কাছে এসো !
তুমি কেন পায়ের কাছে বসবে
কেন বিষন্নতা'র মেঘলা আকাশ হয়ে ভেসে উঠবে
তুমি তো আমার জীবনে আলোকিতসাহসীসকাল !
মনে সঙ্গোপনে চিড় ধরা'র আগে ভাগেই
তোমার আলো এসে যেন
নিরাময়ের পরশ দিয়ে যায়
আঁধারের উঁকি মারা ঝোঁক
হয়ে ওঠে নিমিষেই নিরুদ্দেশ।
আমার কপাল আলতো ছুঁয়ে দিতেই
তোমার সোহাগী হাতের জন্ম
আর আমি জন্ম দেবো কবিতা।
কেন তুমি পায়ের কাছে বসবে?
মাথা'র কাছে এসো -
এত বিনয়ভাব ভাল্লাগেনা আর
উষ্ণতা চেপে রেখে
হে অলৌকিক আইপিএস আমারঃ
স্নিগ্ধ আলো দিচ্ছো যখন বারবার !
দিনকানাদের চিকিৎসা
এখন কুয়াশা কথা বলে নক্ষত্রের
কাঁটা এখন কথা বলে ফুলের
জোৎসনা রাত বলে আমি জোৎসনা রাত নই -
যেন কার ইশারায়।
দিন বলে তোমরা দেখতেই পাচ্ছো
আমারই নাম অন্ধকার রাত
গেঁড়ে গর্তে প'ড়ে ক্ষত বিক্ষত হয় তাই
গা গতর আমাদের।
প্রতিবন্ধী পঙ্গুদের সংখ্যা যায় বেড়ে এখানে ওখানে
মন্দও ব'লে বসে আমি তো ভাল'র স্বরূপ
বিরূপ মন্তব্য করার সাহসও নিষ্প্রয়োজন
মিথ্যের বাজার রমরমা সত্য বিলোপ চিহ্ন হয়ে
হাঁটে হামাগুড়ি দিয়ে ভুলপথে যেন মেঘলা প্রহর
স্বঘোষিত চক্ষুষ্মানের হাতে হায়
শুধু শাদা ছড়ি দেখা যায় !
এ' সব দিনকানাদের সাথে আমারও কথা হলো
কানে কানে ফিস্ ফিস্ ক'রে ব'লে দিলো -
হাতছাড়া হয়ে গেছে হাতের পাঁচ -
ত্রিনয়ন খ্যাত অন্তরচোখ -
কী যে আছে কপালে জানি না কিছুই
আপাততঃ
হারানো চোখের জরুরী চিকিৎসা হোক
মুক্তিযোদ্ধা
মনের মানুষ নির্ভয় এক প্রাণ ;
ব্যর্থতা তাঁর পদতলে গায়রে জয়গান।
মুক্তিযোদ্ধা
সংগ্রামী চাষ গৌরবেরই অম্লান ইতিহাস ;
ছিনিয়ে আনা সাধ-পতাকা আনন্দেরই আশ'।
মুক্তিযোদ্ধা
স্বপ্ন -সফল এক রূপ ;
দুঃসময়ে বন্ধু সে যে রয় নাকো সে চুপ।
মুক্তিযোদ্ধা
মায়ের বুকের বিপ্লবী বীর, বীরাঙ্গনা ওরে
রাতের আধাঁর ঘুচিয়ে দিয়ে সূর্য হয়ে ভোরে।
মুক্তিযোদ্ধা
চেতনায় ঘা জাগিয়ে তোলা বিশ্বসেরা বাঁশি;
স্বাধীনতার স্বপ্ন দেখায় মিষ্টি চাঁদের হাসি।
মুক্তিযোদ্ধা
শান্তিকামী খোদার প্রিয় অশান্তির যমদূত ;
বিজয়েরই অরুণোদয় দেশেরইপ্রাণ শিল্পতে নিখুঁত।
মুক্তিযোদ্ধা
মহান ত্যাগের অমর দলিল কষ্টকে হার মানা;
সৌধ-স্মৃতির পুষ্পে ভরা সত্য সফল সেনা।
পথ না পথিক
দেশ দুনিয়া'র হাল হকিকত দেখে
হতাশায় দুঃখে
কালো মেঘের গাছ গজাচ্ছে বুঝে -
এ মনোমৃত্তিকায়
তোমরা আরও ভেঙে পড়ছো তাও বুঝি
আর আমি
থামতে শিখিনি
কবি কী ক্লান্ত হয় না থামতে পারে ?
আদি মাতা হাওয়া যার উত্তরাধিকার বহন করেন
আমি তাঁরই দলের বিরল নদী
বলছে কোরআন বাইবেল
নিরবধি বয়ে চলি আজও অনিবর্চনীয়
নাযিল হওয়া পাক কালামের মত শব্দহীন
অথচ আমি
মানুষ হয়ে উঠলাম পরম প্রভু'র স্বপ্নে কল্পনায়।
অরূপ থেকে রূপে
যতনে ভালবাসায় ভাষা আশা যেমন বর্ণমালায়
তার চেয়েও নিখাদ সুন্দর বৈচিত্র নিয়ে
ভেঙে পড়তে নই গড়তে এবং ক্লান্তিহীন ।
সভ্যতা আর সংস্কৃতি সমান্তরাল হেঁটে চলে
শিল্প সাহিত্য ঐতিহ্য ইতিহাস বিনির্মাণে
সৃষ্টিশীল নান্দনিকতায়
মুখ ও মুখোশ সেবা আর মুনাফা'র চেহারা চিনাতে
তবে আমি পথ না পথিক
সেটাই জানা হলো না আজও !
সবুজ পাতার ছলাকলা
আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হল
কিন্তু কোন কলা নেই
আছে বাহারি সবুজ পাতার কিছু ছলা-কলা
দোল খায় দেখি দূষিত বাতাসে!!
বোকা নদী
আমারে কাঁদায়ে সুখী হলো
দেখিনি এমন কেউ ;
বোকা নদী তো তারই কূল ভাঙে
তুলে যে তাঁরই ঢেউ !!
ঘুমের ভেতর
পাখিরা হাল চাষ করে
আর গাধারা ঘুরে বেড়ায় আকাশে
গরুরা কাটায় বিলাসী জীবন
কলুর বলদ যেন চেয়ে চেয়ে দেখে
এসব দেখতে দেখতেই
এক সময় আমার ঘুম ভেঙে যায়!!