কবি শ্রেয়া চক্রবর্তী
শ্রেয়া চক্রবর্তি, জন্ম ২০ জুন ১৯৮৫ কলকাতা।
ছোটবেলা থেকে অনেক মেধাবী ছাত্রী শ্রেয়া কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজী সাহিত্যে অনার্স, এমএ এবং হুগলি মহসিন কলেজ থেকে এলএলবি সম্পূর্ণ করে বর্তমানে কলকাতা হাইকোর্টে কর্মরত আছেন। স্কুল জীবনেই কবিতায় হাতকড়ি, আর সেই থেকে নিরবিচ্ছিন্নভাবে কবিতা চর্চাশুরু করেন। বর্তমান সময়ের একজন সম্ভাবনাময় প্রতিশ্রুতিশীল কবি, কবি ইতোমধ্যে বংলাভাষি পাঠকদের কাছে নিজেকে প্রতিষ্টিত করতে সক্ষম হয়ছেন। কাব্যবুননে সৃজনশীল কবি প্রতিভা নিজেকে সমানভাবে জড়িয়ে রেখেছেন কবিতা ছাড়া সাহিত্যের অন্যান্য বিষয়েও। নিয়মিত লিখছেন পত্রপত্রিকা এবং অবলাইনে নানা প্লাটফর্মে। শ্রেয়া চক্রবর্তীর প্রথম কাব্যগ্রন্থ- প্লাবন খেলার আগে পাঠক মহলে সাড়া জাগায় এবং যথেষ্ট সমাদৃত হয়। অন্যান্য প্রকাশিত গ্রন্থের মধ্য রয়েছে প্লাবন খেলার আগে ( কাব্যগ্রন্থ ), চিনুক নদীর ধারে (কাব্যগ্রন্থ ), রেণুমতী ফুলের শ্যাম্পেন ( কাব্যগ্রন্থ) ও ভূত বিলাসের ঘর ( উপন্যাস)
কবি অবসরে আবৃতি ও গান করতে ভালবাসেন।
কবিতা
অপলাপ
হাতে হাতে অসুখ ছড়ায় আজ
নিঃশ্বাসে নিঃশ্বাসে বিষ
স্পর্শে কেন ভালোবাসা ছড়ায়না, বলো
শব্দে শব্দে আজ কেন নেই শুভাশিস ?
কেন এই চেয়ে থাকা বুভুক্ষুর মত
ত্রাণ আসে ধীরে অতিক্রান্ত যুগের চাকায়
অথচ ঘৃণা কত দ্রুত অতিকায় ঢেউয়ের পার
মেলে ধরছে তার দ্বিখন্ডিত শির!
ছড়িয়ে পড়ছে দ্বেষ , ক্ষুধা, কান্না , অপলাপ
বিস্কোরণের গন্ধ যত পচাগলা দেশের সীমায়
ভালোবাসা, মারীর মত,কেন তবু ছড়ায়না বলো
হাতে হাতে নিঃশ্বাসে প্রশ্বাসে ছোঁয়ায় ছোঁয়ায় ?
স্মৃতিসভা
কারো কারো চোখে জল
কেউ বলবে, " এও কি যাওয়ার সময় হলো?"
কেউ বন্ধু হারিয়ে হয়তো বা বিচলিত
যে চলন লঘু হতে হতে মিলিয়ে যাবে হাওয়ায় অতি দ্রুত
কেউ ভাববে ভালোবাসতাম তবু হায় বলা হয়ে উঠলো না
কারো আক্ষেপ থেকে যাবে যে ব্যথা না দিলেও হতো তার
চিঠি না লিখে ফিরিয়ে দিয়েছিলো যে
এবার লিখতে বসবে নিরুদ্দেশের চিঠি ...
না,দেশের দশের কোন ক্ষতি হবে না
শুধু কিছু পংক্তি অসম্পূর্ণ থেকে যাবে
হাওয়ায় উড়বে ভালোবেসে সব ক্ষতি যে মেনে নেয়
তার কাঁধে মাথা রাখতে চাওয়ার নির্বাক অনুনয়
প্রিয় বন্ধুরা রাখবে স্মৃতি সভা
বেদীঘেরা গাছের ছায়ায় ...
জিজ্ঞেস কোরোনা
জিজ্ঞেস কোরোনা কেমন আছি আমি
সারাদিন তোমার কথা মনে পড়েছে কিনা একবারও
কিংবা লাঞ্চে কি খেয়েছি এইসব খুঁটিনাটি
ফেরার ট্রেনে কেমন সে হাওয়া
কোন্ স্টেশনের মোহ ভেঙ্গে যায় তাতে
বিপন্ন হকার ক্রমাগত হেঁকে চলে যায়
অবিন্যস্ত দূরে
রাস্তা পার হতে গিয়ে অসাবধানে
পড়ে গিয়েছিলো বুঝি চাবির গোছা
যে আমাকে ফিরিয়ে আনে রোজ
অভ্যাসগত মোহে,
ফিরে এসে গা ধুয়েছিলাম কিনা
সেইসব সুঘ্রাত বিকেলের দোষে
কেউ এসেছিলো কিনা দরজায়
ডিনার কখন শেষ হলো? তারপর?
কে কোথায় কত গভীর স্পর্শ করে
ফিরে গিয়েছিলো জুয়াড়ির অভ্রান্ত নিশানায়
কত কত রাত এভাবেই কেটে যাচ্ছে অনাদরে
চাইলে একটা গোটা মানুষকে
গিলে নিতে পারি কিনা,-
আমাকে জিজ্ঞেস কোরোনা
কে তুমি? জানতে চাও,বলো,কোন্ অধিকারে?
চলে যাওয়ার দিন
চলে যাওয়ার দিনটি বড় অদ্ভুত
কেউই জানে না, শুধু যে যায় সে জানে
চলে যাওয়াটা কিছুই নয়
কেবল এক গুলঞ্চ লতার হেলে পড়া সামান্য হাওয়ায়
এপাশ থেকে পাঁচিলের ওই পাশে
সকলেই বলে বড় ফাঁকা করে দিয়ে গেলো
কেউ কেউ অশ্রু মোছে , হাপুসনয়ণ
শুধু যে যায় সে জানেনা এসব কিছু ,
সে বড় পূর্ণ ঘট পা দিয়ে উল্টোবে এবার চরম উপহাসে-
চারপাশে ছড়িয়ে আছে যা, কিছুই তো ফাঁকা নয়
সবেতেই কিছু না কিছু অভিমান জড়ো হয়ে আছে
কি হবে এসব দিয়ে?
চলে যাওয়ার মুখে আগুন দেবে যে জন
ব্যথায় কাতরাবে সে
অথচ পুড়ে পুড়ে খাক হওয়া মানুষ ব্যথার কিই বা জানে?
সে আর খবরও নেবেনা
যে তাকে ব্যথা দিয়েছিল অকারণ
ভিড়ের ভেতর সেও চোখ মুছেছিল কিনা ....
কবি মরে গেলে
কবি মরে গেলে ক্ষতি হয় কার কতটুকু
এ'শহর বেঁকে চলে ধস্ত ট্রামপথে
আনন্দের পায়ে এসে পড়ে জীবনের ঝুলন্ত লাশ
দুঃখ খায় খুদকুড়ো চুপচাপ বসে একপাশে
কবি মরে গেলে কার কি এলো গেলো?
টার্মিনালে জড়ো হয় একে একে সবকটি বাস
ছেড়ে যাবে একটু পরেই যে যার মতো সিকিদামে
প্রেম করবে যুবক যুবতী
জানালার পাশে দাঁড়িয়ে বা বসে
যুবতীকে ছুঁতে এলে কেউ যুবকটি উদ্ধত হবে
ক্ষমা পাবেনা কেউ কারণ কবির মৃত্যুদিন
ভিখারী ভিক্ষা চাইবে একই নিরুত্তাপ জ্বরে
স্টিয়ারিং এ বসে থেকে আমাদেরও
বেড়ে যাবে অনন্তের ঋণ
কবি মরে গেলে জাগবেনা কেউ ঘুম থেকে
টাইমকলের জল বয়ে যাবে ফুটপাত দিয়ে
গণতন্ত্রের পোস্টার হাতে উৎসর্গ হবে রঙিন জনতা
ধ্যানে বসবে না কেউ
কাপড় মেলার তারে নির্বিকার বসে থাকা
পাখিটিও উড়ে যাবে
সন্ধ্যায় ব্ল্যাক হবে বায়োস্কোপের পাতা
সেজেগুজে দাঁড়াবে এসে শহরের নিষিদ্ধ দেবী
তর্পণ হবে এয়োতীর বিশুদ্ধ লাস্য যত
কাস্টমার জুটে যাবে যে যেমন দাঁড়াবে
কবি মরে গেলে কেউ কেউ চিঠি লেখা ছেড়ে
এসে দাঁড়াবে মন্চ্ঞে মাইক্রোফোনে
স্মৃতিসভা হবে কিছু এ'দল ও'দল মিলে
বোতল উৎসর্গ হবে মহামান্য মৃত্যুর নামে
কবিকে মনে রাখবে কেউ কবিতা না জেনেও
যে জেনেছে মনে তার পড়বেই
বেশকটি ছুঁয়ে যাওয়া লাইন
শব্দেরা তাড়িত করবে মগজের অবিনশ্বর ঘুমে
ঘুমের ভেতর তাও জেগে থাকে কেবল কবিরাই
কবি তো নিমিত্ত মাত্র,মরে গেলে ক্ষতি হয় কার?
ক্ষতি হয় সে শিশুর যে জন্মেছে এইমাত্র আজ
পৃথিবীকে বাসযোগ্য করার অঙ্গীকার
ছিলো যে কবির
সে মানুষ চলে গেলে ক্ষতি হয়
শুধু মানুষেরই দেবতার!