বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে শিকড়ের কবিদের কবিতায়
স্মরণ, শ্রদ্ধাঞ্জলি
জয় বাংলা
ফারুক আহমেদ রনি
গোধূলির রক্তিমরশ্মি মুজিবের কথা বলে
একটি বিপ্লবের নাম
বীরত্ব
ভালবাসা
মানবতা
মুজিবের অনুপস্থিতি মানে
প্রস্ফুটিত চাঁদ বিসর্জিত হয় অন্ধকারে।
মূজিব নামের সুরে সুরে নদীতে জাগে ঢেউ
ক্লান্তিতে বিশ্বস্ত উচ্চারণ-
শেখ মুজিব
একটি বজ্রকন্ঠের নাম...
বিদ্রোহের চেতনা ছাড়া যে নামের কোন বিকল্প নেই।
বঙ্গবন্ধুহীন আনন্দ কোন আনন্দের শোভা নয়।
একটি নাম দিয়ে শুরু হয়
বিসর্জন
মৈত্রী
ইন্দ্রিয়
তর্জনী
ইশারায় পর্বত ভেঙে চুরমার
আবার স্পর্শ করে করুণার কোমল ঠোঁট।
লক্ষ লক্ষ কণ্ঠের একটি তন্ত্র
উৎকৃষ্ট উচ্চারণ
জয় বাংলা
একটি ক্যারিশম্যাটিক মন্ত্র।
বিশ্বমানবতা অবলোকন করেছিল ভয়ঙ্কর সেই রাতটি
বাংলাদেশের মানুষের দুঃস্বপ্নের বিদগ্ধ ইতিহাস
১৫ আগস্ট
আজোবধি
শিরায় শিরায় প্রবাহিত
রক্তপাত…
বাঙালিরা প্রত্যক্ষ করছে চিরস্থায়ী দুর্ভোগ!
কেবল
একটি মুষ্টিবদ্ধ হাত
এবং তর্জনী
সর্বদা আমাদের আলোকিত হৃদয়।
সূর্য ত্বক পোড়ায় কিন্তু কখনও হাড় ছুঁতে পারেনা।
সারাংশ;
স্ববশ
স্বাধীনতা
সমতা
শান্তি
সংহতি
এবং
জয় বাংলা।
কবিতা
ফারুক আহমেদ রনি
প্রেমিকার মৃত্যু
বাসরঘরে প্রেমিকার মৃত্যু
জলেচুপষে যাওয়া প্যাজাতুলো
আঁটসাঁট বুকেরবাঁধন
যোনিপথে তরতর হেঁটে যায়
ধারালো তলোয়ার
বিষাক্ত ছুতোয় ঝরে পড়তে থাকে
অর্কিড
কার্নেশন
গোলাপ
ব্লীডিং হার্ট
এবং
নীলখামে প্রথম শুকনোপ্রেমফুল।
প্রেমের আত্মহত্যা
মানুষজন্মের এক আদিনাম প্রেম
কামনারজলে ভাসে হংসমিথুন
মিথিলার দেহে তীর্থের অবিলাস
বিশ্বাসের অন্তিমমুল্য হচ্ছে আমার আত্মহত্যা
জিরাফের শুষ্কঠোঁটে চুমু খাবে
বেদখলে গেছে মিথিলার ভূখণ্ড, মরুভূমি
নরকের দরজায় কড়ানাড়ে বিধ্বস্ত সময়।
ইক্সোরাগুলো ঝাড়বাতির মত শতদলে ছিলো
কুসুমিত আঙ্গিনা
চাঁদ হাতে রেখে প্রতীক্ষার ওজন ছিলো বড়বেশি ভারী
মিথিলা, জলের আগুনে বিকশিত শরীর।
ফুলের গন্ধে মৌচাকে পিপীলিকার আশ্রয়
মৌলোভে আগন্তুক নিঃশ্বাসে বিরহের বিষপান
মিথিলা উদার কামুক-শামুক
নষ্টরীতির মাংসস্তবক
এতজলের গভীরকুয়োয় মধ্যরাত জেগে থাকে
নির্লজ্জ স্তনেরভিটায় আদিম বাস।
মোমবাতির মত গলতে থাকে
আত্মহনের প্রেম ও তার উদ্বিগ্ন উচ্ছ্বাস।
স্বাধীনতার মানে
আজন্ম একটুকরা স্বপ্নের নাম স্বাধীনতা,
যে স্বপ্নের শরীরজুড়ে ঘামের গন্ধ,
মিথিলার কপালে রক্তের সিঁদুর।
আকাশে ফেরারি একখণ্ড মেঘের নাম স্বাধীনতা
সূর্যের তাপে গলেপড়া রক্তবর্ণ ক্লান্ত শিশিরজল।
স্বাধীনতা মানে আধখানা চাঁদের বিস্মিত ছায়া
আলো অন্ধকারে লুকোচুরি খেলা।
বাতাসে জ্বলেওঠা উনুনেপুড়ে বিগ্রহের শরীর
স্বাধীনতার আশ্রয় নেই, যেন অচ্ছুত বেওয়ারিশ।
স্বাধীনতার পায়ে কখনও নূপুর, কখনও শৃঙ্খলিত বেড়ি,
চিৎকার করে ট্রাকের নীচে চাপাপড়া তরুণী,
স্কুলপালানো কিশোরের নষ্ট ভাবনায়
নুরপুরের ধর্ষিত সন্ত্রস্তা বালিকা।
স্বাধীনতার নামে রাজাকারের রাজভোগ
বিমূর্ত ইতিহাস!
স্বাধীনতা যাচ্ছেতাই অকুতোভয় স্বভাব
খুন, ডাকাতি, ধর্ষণ মিলেই পরাহত সংশয়।
স্বাধীনতা হাটে দৃশ্যহীন উদভ্রান্ত শহরে কিংবা গ্রামে
স্বাধীনতা গ্রন্থিত সারি সারি শব্দে কবিতার বুনন।
কলঙ্কিত বৃক্ষ সাক্ষী কবর পৌঁছেনি এখনো লাশেরা
আজো মিথিলার শোকাগ্নিতে অনির্বাণ প্রত্যয়
বীরাঙ্গনা ছিলো সে, মাতৃজঠরে বেজন্মার কান্না
অচ্যুত স্বাধীনতার নি:শ্বাসে কাঁপে বাংলাদেশের পতাকা!
দেলোয়ার হোসেন মঞ্জু:
বিদ্যুতের বাগানে নিঃসীম শূন্যতা
ফারুক আহমেদ রনি
হ্যাঁলো, কবি কেমন আছেন? ঘুমিয়ে পড়েননিতো? রাত হয়তো ১২টার কাছাকাছি অথবা বারোটা পেরিয়ে গেছে ঠিক তখনই এরকম ফোন আসতো আমার প্রিয় দুইজন মানুষের। একজন কবি দেলোয়ার হোসেন মঞ্জু। আরও একটি ফোন আসতো আমার মায়ের। মায়ের ফোনটা ছিল আমার শারিরিক সর্বশেষ খবর নেয়া, কারন মা ঘুমানোর আগে প্রতিদিনের রুটিনমাফিক আমাকে তাগিদ দিয়ে যেতেন রাত যেন না জাগি, আমি ঠিক আছি কিনা, ইত্যাদি। আর বন্ধু মঞ্জুও একই ভাবে ফোনটা দিতেন, কেমন আছি কুশললাদি জানার সাথে সাথে সাহিত্যের ভৌগলিক বিষয় আশয় নিয়ে নানা কথা। কথা চলতো অনেক রাতঅব্দি। আমার অসুস্থতার পর থেকে মঞ্জু ফোন দিতেন প্রায়ই, একটি কথা দিয়ে শুরু হতো, ‘‘কবি, আপনার হৃদয়টা বিশাল, ওখানে মানুষের জন্য প্রেম, ভালবাসা ছাড়া কিছু নেই, ইদানিংতো ঈশ্বর প্রেমও আপনার হৃদয়টাকে আরো বিসালতায় পরিপূর্ণ করছে। আপনাকে দেখেতো মনে হয়না আপনি অসুস্থ! কবি ওঠে দাড়ান, সিগারেটের শেষধোয়াটুকু হোক আপনার কবিতার সর্বশেষ শব্দ। ও আচ্ছা সিগারেট কি ছেড়ে দিয়েছেন? শুনুন, ডাক্তার-ফাক্তারদের কথা শুনবেননা, আর ভাবি! ওরাতো জানেনা কবিবংশের উত্তরাধীকারিসুত্রে আমরা সিগারেটকেই সবেচেয়ে আপন ও মৌরসিভোগের অধিকার নিয়ে আছি। এই জীবনে আপনার, আমার হাতি-ঘোড়ারতো দরকার নেই, আমাদের দরকার অক্সিজেন।“ আনুগত্য ভৃত্যের মত আমি শুনতাম মুগ্ধ হয়ে, শুধু হাসতাম, এ কথাগুলো তার কাছ থেকে অনেকবার শুনতে হয়। দুই পর্বের আদিপর্ব ।
আমাদের সকল আলোচনার সারসংক্ষেপ ছিলো মৌলিক বিষয়। গতানুগতিক চিন্তা ও চেতনার বাহিরে এক ঐশ্বরিক আয়োজন যেন লুকিয়ে থাকতো টেলিফোনের আলোচনাকে কেন্দ্র করে। যদিও ফোনে অভিরিক্ত কথা বলার প্রতি আমার নিষেধাজ্ঞা আছে তারপরও ফোনটা যখন আসে আমার পাশে জেসি থাকলে সে বলে দিতো মঞ্জু ভাইয়ের ফোন। আমি অবলীলায় দুরালাপনীতে নিজেকে সম্পৃক্ত করে ফেলতাম, তখন দেখা গেছে জেসিও বারণ করছেনা। মনে হতো কথা বলুক, ভালোইতো লাগে।
আমার জন্য অক্সিজেনতো এই দুজনের টেলিফোন, কিন্তু আমার জন্য আর কোনদিন এই ফোনগুলো বাজবেনা। আমার ফোনে তাদের কন্ঠের বিগলিত শব্দগুলো আর উচ্চারিত হবেনা। বিষাদময় এক প্রতিক্ষা আমাকে বিধ্বস্ত করছে। আমি বুঝতে পারছি আমার মায়ের পাশাপাশি এখন বন্ধু মঞ্জু আমার কষ্টের পরিধিকে বিস্তৃত করে দিয়ে গেলেন। আমার আত্মার সাথে ছিলো যার সম্পর্ক। মঞ্জু তার জীবদ্দশার শেষের দিনগুলোতে বেশ অভিমান করে ছিলেন। সবার থেকে মুখ লুকিয়ে নিয়েছিলেন। যে ক’দিন কথা হয়েছে, তাতে মনে হয়েছিলো তিনি জানতেন চলে যেতে হবে। হঠাৎ একদিন ফোন দিলেন;
‘কবি, কবরের অবস্থান সম্পর্কে আমাকে একটু বলেন” আমি অবাক হয়ে যাই, সেটা অবশ্য ক্যান্সার ধরা পড়ার ক’দিন আগের কথা। হার্টের সমস্যা নিয়ে তখন একটু উদাসীন ছিলেন। কিন্তু তখন মৃত্যুর বিষয়টা নিয়ে ভাববার কথা নয়। হার্টের ব্লক বা ভাল হয়ে যাবার সম্ভাবনা নিয়ে আলাপ হতো। কিন্তু মাঝে মধ্যে তার কথায় সে ক’দিন ঐশ্বরিক বিষয় প্রভাব ফেলেছিলো। বিশেষ করে- একদিন কথা হলো পুরো দুই থেকে আড়াই ঘন্টা, বিষয় আরবি সাহিত্য এবং ‘মিলিয়ন ডলার কবিতা’ এবং কবিতা প্রতিযোগিতায় কুয়েতের তরুণ কবি (ছাত্র) রাজি আল হামিদানী-র ১.৩৬ মিলিয়ন ডলার প্রাইজে জিতে নেয়ার গল্প। মঞ্জু বিষয়টা জানতেননা। প্রসঙ্গক্রমে মঞ্জু বললেন ‘কবি, আমরা কবিতা লিখে পাচ্ছি কি? মনের আনন্দ ছাড়া কবিতার ভাল পাঠকইতো নেই। তারপরতো গ্রন্থ প্রকাশনা হয় আমাদের পকেটের টাকায়। আসলেই কি সবদেশেই কবিদের এমন অবস্থা?” আমি তখনই হামিদানী-র কথাটা বললাম কবিতা প্রতিযোগিতার জন্য প্রাইজ যখন এক মিলিয়ন তিনশো ষাট হাজার ডলার হয় তখন একজন কবিকে তার মুল্যায়নের বিষয়টা খাটো করে দেখার কোনই উপায় নেই। মঞ্জু আমার কথাটা যেন বিশ্বাস করতে পারেননি। আমি তখন তাকে হামিদানীর প্রতিযোগিতর ছবি ডাউনলোড করার লিন্কটা দিয়ে বললাম দেখুনতো এই তরুণ কবির ছবির কপিরাইটের মুল্য ৩৫০ পাউন্ড। মঞ্জুর চেহারা ঐসময় দেখতে পাইনি ঠিক কিন্তু রীতিমত চোখ কপালে তুলে অবাক হয়েছেন সেটা বুঝতে পেরেছিলাম । তারপর হঠাৎ করে মঞ্জু বললেন- কবি আমি কিছুদিন থেকে ভাবছি আরবী ভাষাটা নিয়ে এবং আরবী সাহিত্য সম্পর্কে সরাসরি জানতে, পড়াশুনা করতে। অনুবাদ সাহিত্য কেমন যেন আমার কাছে মৃত সাহিত্য মনে হয়। আমাদের ভাষাজ্ঞানটা জরুরী। তাছাড়া ইংরেজী সাহিত্য নিয়েও এখানকার বাংলাভাষার কবিদের মধ্যেও কোন উৎসাহ দেখিনা। আমরা কি এই বিষয়গুলো নিয়ে চিন্তা করতে পারিনা। সংহতির কবিতা্ উৎসবেও আপনার শুধুমাত্র বাংলা কবিতা উৎসব না করে, বহুভাষী উৎসব করেন। আমার বি্শ্বাস কাসিদা পড়া বা শোনার সুযোগও আসবে। আমি ঠিক বুঝতে পারিনি মঞ্জুর কথাটা কি একান্তই ইচ্ছেপ্রবণ নাকি..,। আমি চুপ করে শুধু শুনলাম। এভাবেই দীর্ঘরাতঅব্দি আমাদের আলাপ হয়, এবং যতদুর মনে পড়ে ঐরাতের পরে আমাদের বাকি যে ক’বার কথা হয়েছে ছোট্র পরিসরে। তবে কোন একদিন শুধু বলছিলেন কবি আমার কবিতাগুলো ভাষান্তর করতে আমাকে সাহায্য করুন। বলেছিলাম শুধু- হবে কবি, আমরা এ বিষয় নিয়ে কথা বলবো, আপনি সুস্থ হোন। না, মঞ্জু সুস্থ হননি। মাত্র ক’দিনের মধ্যেই মঞ্জুকে আমরা চিরদিনের জন্য হারিয়ে ফেললাম। মঞ্জু হারিয়ে গেলেন।
দেলোয়ার হোসেন মঞ্জু ছিলেন অসাধারণ ব্যক্তিত্বশীল উত্তরাধুনিক সময়ের শক্তিশালী কবি, যার ভাবনা আর খেয়ালের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে ভেতরেও বাহিরে আপাদমস্তক স্পষ্টবাদী, বাস্তবাদ বা অধিবাস্তববাদে বিশ্বাসী। তার কবিতা বা সাহিত্যের বিশেষ বিশেষ জায়গাগুলো জুড়ে আছে উৎকৃষ্ট মৌলবোধ। বাস্তববাদকেই প্রাধান্য দিয়ে এসেছেন। কবিতার মঞ্জু আর ব্যাক্তি মঞ্জুর মধ্যে চিত্রায়ন করতে গেলে দেখা যাবে বৈশিষ্ষ্ট্যের কোন অমিল নেই। নেতিবাচক বিশয়গুলোকে পরিহার করে এসেছেন সবসময়, চিন্তারক্ষেত্রকে তিনি সীমাবদ্ধ করে রাখেননি। মঞ্জু ছিলেন একজন ব্যতিক্রমী ব্যক্তিত্ব । বন্ধুকে বন্ধুত্বের বাহিরে যখন দেখেছি, আর্বিভাব করেছি আত্মশুদ্ধি নয়, আত্মতৃপ্তির বিষয়ে উদাসীন কবি হিসাবে।
কিটস, উইলফ্রেড, সিলভিয়া, শেলি, বায়রন, রুপার্ট, মাইকেল, সুকান্ত, রুদ্র, কিশোয়ার, আবুল হাসান সহ আমাদের মঞ্জু। পৃথিবীর ক্ষণজন্মা অনেক কবিদের একজন অসাধারণ কবি মঞ্জু। এদের কাউকেই কবিতার জন্য সমালোচকরা মৃত্যুর আগ পর্যন্ত খোঁজে পায়নি। মৃত্যুরপরে তারা জেগে উঠেছিলেন।
মৃত্যুকে নিয়ে শেলি বলেছিলেন;
“I am the daughter of Earth and Water,
And the nursling of the Sky;
I pass through the pores of the ocean and shores;
I change, but I cannot die.”
আসলেই কি মৃত্যুটা রুপান্তার মাত্র। মৃত্যুর পরবর্তি অবস্থান নিয়ে কেবলমাত্র আমরা ঐশ্বরিক বিষয় ছাড়া আর কোন যুক্তি বের করতে পারিনা। মৃত্যুকে নিয়ে আমরা গবেষণার ক্ষেত্রকে উম্মোচিত করতে পারিনি, আর তার কারন আমরা মৃত্যু নিয়ে ভীত! আমাদের জাগতিক বিষয়-আশয়ের মধ্যে মৃত্যু একটা অনিশ্চিত বিষয়। মৃত্যুকে অতিক্রম করা যেমন আমাদের শক্তি ও পরাগতার বাহিরে, তেমনি মৃত্যু নিয়ে আমাদের ভাবনার প্রযাসটাও সীমিত। কিন্তু কবিদের কাছে মৃত্যু বিষয়টা যেন এক ধরনের প্যান্টাসির মত, কবিরা মৃত্যুকে ভয় করেননি, এবং তাদের ভাবনার জগতে মৃত্যুটা হচ্ছে মুলত একটি পরিবর্তন।
হেনরি’র একটি কবিতায় আমরা সেই রকম যুক্তি দেখি;
“Death is nothing at all.
It does not count.
I have only slipped away into the next room.
Nothing has happened.”
মঞ্জুর কথাও তেমনি উচ্চারণ “কবিরা কবিতা লিখে মৃত্যুর পরে।“ । আমরা মৃত্যুকে অপাংক্তেয় ভেবে দুরে রাখার চেষ্টা করি কিন্তু মৃত্যুটা এক ধরনের রহস্যের কূয়াশায ঢাকা উদাসীনতা ছাড়া কিছু নয়। মৃত্যুকে জয় করার ক্ষমতা সবার থাকেনা। তবে মঞ্জু জয় করেছেন। মৃত্যুকে জয় করেছেন জীবদ্দশায়। তিনি বেঁচে থে্কেও মৃত্যুর প্রভাবে উৎকন্ঠায় ছিলেন! কথাটা প্রশ্নবোধক হতে পারতো কিন্তু আমরা যারা মঞ্জুর খুব কাছের সবাই কিছু না কিছু মঞ্জুর মৃত অস্থিত্বের বিষয়ে জ্ঞাত ছিলাম। আমরা কেউ কারো জন্য কিছুই করতে পারিনা। পারে দক্ষিণা। মঞ্জু নি:স্বতার চরম বিপর্যয়কে অনুধাবন করেছেন। মঞ্জু কেমন ছিলেন? তার কবিতায় দেখি;
ঈশ্বর নিঃসঙ্গ এখন, বন্ধুবর
দেলোয়ার হোসেন মঞ্জুর মতো একা…
অথবা
মর্গে একা শুয়ে থাকি
জল ও অগ্নি বহুটা আংরা হলে ঘুম আসে, ঘুম আসে…
দূর গাঁয়ে তোমার লণ্ঠনের আলো নিভে যাচ্ছে মা
দূর গাঁয়ে তোমার লণ্ঠনের আলো নিভে যাচ্ছে মা…
মঞ্জু অনেক দিন মর্গে ছিলেন। মঞ্জু কাউকে বুঝতে দেননি তিনি জীবনের অমিমাংসিত পর্বে যাপিত।
মঞ্জু প্রতিপক্ষে বিশ্বাসী ছিলেননা। তিনি নিশ্চুপও ছিলেননা। বোধের ভেতরে জ্বলেওঠা আগ্নেয়গিরি থেকে তিনি কবিতা লিখেছেন। মঞ্জু কবিতার শরীরকে দাড়িচিহ্ন ছাড়া উদৃত করেছেন। তিনি বেঁচে গেছেন। অনেকের কাছে মঞ্জু ছিলেন অহঙকারী এবং ঈর্ষণীয়ও। মঞ্জু যেমন আত্মবিশ্বাসী ছিলেন, তেমনি ছিলেন কড়া সমালোচক। মঞ্জু কবিতা এবং গদ্যে বর্তমান সময়ে এক দিকপাল ছিলেন।
বন্ধু তোমাকে হারিয়ে আমরা ভাল নেই, এ যেন নিঃসীম এক শূন্যতা বিরাজ করছে আমার চারিপাশে।
তোমাকে আজ আর কোথাও দেখতে পাইনা,
না, মুঠোফোনেও তোমার নিঃশ্বাসের স্পর্শ নেই
নশ্বরতার চরম ব্যাখ্যা নিয়ে নিশ্চুপ
সত্তরহাজার প্রতিরক্ষাবাহিনী
পাহারা দিচ্ছে তোমার অন্তর্লোক নিবাস,
যদি মন চায় দক্ষিণের জানালা খোলে
সহসা দেখে নিও আমার পাঁজরগুলোতে কেমন মরিচা ধরেছে
আমিও এখন সুপেয় বিষের নেশায়
সিগারেটের ধুয়ায় অক্সিজেন নিঃসরণ করছি...।
বন্ধু, তুমি যেখানেই থাকো ভাল থেকো।
কবিতার অসুখ এবং কবি দেলোয়ার হোসেন মঞ্জু
ফারুক আহমেদ রনি
বুঝতে পারিনি নগরী কেন এত অন্ধকার
কোলাহল ডিঙ্গিয়ে ঠিকানাবিহীন আকাশ পাড়ি দিয়েছে
একটি অভিমানী পাখি...
শুভ্র পেখমে বেধে নিয়েছে বিশ্বস্ত আলোর সংসার
আমি হাত বাড়াই তার নাগাল পাইনা
গ্রহণেরচাঁদ বুঝি সে, অভিমানে মুখ লুকায়
অন্ধকার চিৎকার করে পরিত্রাণ খুঁজে
বোধের ভেতরে অনাবাদী প্রান্তর...
তীব্র আক্রোশে ছিদ্র হয়ে যাচ্ছে মাটির শরীর।
আজ পূর্ণিমার বৃষ্টি হয় তোমার ঘুম ভাঙেনা
আপেলবাগানে মৌচাক, নি:সীম তোমার হাত
কালোরোদ গ্রাস করছে মোমের ছায়া
জ্যোতির্ময় হেটে যায় গোরস্থান।
তোমার কিসের এত অভিমান, বন্ধু
বাতাসের পীঠে চড়ে দ্রুতগামী বোরাকের সওয়ার হলে
কি অদ্ভুত আপোষহীন খেয়াল,
অদৃশ্য পাখামেলে তুমি পার করেছো
দক্ষিণের জঙ্গল, অথবা মঙ্গলকাব্যের বাগান
তোমার রক্তশিরায় ছিলো ইন্দ্রিয়বান সঞ্জীবনী মন্ত্রসার
তারপরও বাতাসের করাতে দ্বিখণ্ডিত হলে,
তোমাকে জিইয়ে রাখতে পারিনি।
আজ দেখো, কুকুর আর দেবতাদের পূজায়
দক্ষিণামুখী মানুষগুলো হুছট খাচ্ছে ঈর্ষার দেয়ালে
তুমি অভিমান নিয়েই পার করে দিয়েছো
আমাদের ধূয়োহীন আড্ডার চায়ের পেয়ালা
তোমারই ভাষায়-
“নি:সঙ্গ মাড়িয়ে যাবো মৃতপ্রাণ নক্ষত্রের ছায়া”
হ্যাঁ, ধূসর ছায়ারা আজো উড়ছে মধ্যাকাশে।
তোমাকে আজ আর কোথাও দেখতে পাইনা,
না, মুঠোফোনেও তোমার নিঃশ্বাসের স্পর্শ নেই
নশ্বরতার চরম ব্যাখ্যা নিয়ে নিশ্চুপ
সত্তরহাজার প্রতিরক্ষাবাহিনী
পাহারা দিচ্ছে তোমার অন্তর্লোক নিবাস,
যদি মন চায় দক্ষিণের জানালা খোলে
সহসা দেখে নিও আমার পাঁজরগুলোতে কেমন মরিচা ধরেছে
আমিও এখন সুপেয় বিষের নেশায়
সিগারেটের ধুয়ায় অক্সিজেন নিঃসরণ করছি...।
Without Light No Darkness Around
(My deepest love to my friend the best, most talented poet in our time-Delowar Hussain Monju)
Faruk Ahmed Roni
Poet, poet! Oh, Soul of the poet
Can you hear me?
You are not dead yet, you are asleep!
When darkness night wears anklets
And the birds are singing on the branch of tree
When the earth crossing the Neptune quietly
You are resting in peace, and not be bothered.
Can you hear? The angels are whispering
Their footsteps are diminished at far.
You may write your best poems ever to published i
n the future,
Oh poet, time awaited for verses to be winged.
Poet, poet! Oh, Soul of the poet
As you asleep in the skull of time,
Dropping green leaves from tree are still virgin,
Canal you crossed most is deluged with memory.
Stars are sparking over the sky,
Rays of moon lightened your heart,
A heart impelled with tune of nightingale.
Yes, time has stopped here,
Waiting for a distinct chapter of life,
While life is not ended yet,
You are just a time traveller
And we are waiting for you back.
Poet, of poet! Oh, Soul of the poet
Let me grab your hand gently,
And take you to the memory lane.
You are in deep of sleep, peace of mind,
You avail the fortune with exquisite dream.
Yes, there are unfinished work needs to be done,
More wait, to see millions year to come,
Until you claimed to be dead,
And wait for the angel to blow his trumpet.