top of page
S JAHIR.jpg

কবি সফিয়া জাহির

 

আশির দশকের কবি সফিয়া জাহির। কবিতার পাশাপাশি তিনি কথাশিল্পী ও প্রাবন্ধিক।   তাঁর কবিতার সারল্য প্রণয়বন্ধন হচ্ছে শব্দ ও ছন্দের কারুকাজ, বিশেষ করে বাস্তববাদ, জাগতিক অবস্থান তার সাহিত্যকর্মেের পরিপূরক হিসাবে কাজ করছে। সফিয়া জাহির কবিতায় যেমন সাচ্ছন্দ্যবোধ করেন, তেমনি তার চিন্তার ও ভাবনার ব্যাপ্তি কবিতার পাশাপাশি সাহিত্যের অন্যান্য বিষয়েও, তিনি সমান ভাবে সার্থক।

সফিয়া জাহির-এর জন্ম সুনামগঞ্জ জেলার খাগহাটা গ্রামে। বাবা মোহাম্মদ জাহির আলী ও মা জেবুননেছা মনি। গ্রামের  পাঠশালায় প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার শুরু সমাপ্তি লন্ডন ইম্পেরিয়াল কলেজ থেকে ক্যামিকেল ইঞ্জিনিয়ারিং-এ মাস্টার ডিগ্রি অর্জনের মাধ্যমে। দুই দশক ধরে কর্মরত বিলেতের একটি বিশেষায়িত ইহুাস্ট্রিতে। স্বেচ্ছাসেবী স্ট্যাম এম্বাসেডর হিসেবে  শিশু-কিশোরদের বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও অংকে আগ্রহ গড়ে তুলতে কাজ করেন বিভিন্ন স্কুলের সাথে। তাঁর অন্যতম সখের কাজের মধ্যে সামাজিক বা চ্যারিটি ওয়ার্ক, ফান্ড রাইজিং-এর জন্য হেঁটেছেন প্রায় চল্লিশ মাইল পর্যন্ত।
আশির দশকের শেষের দিকে বিলেতের সাপ্তাহিক সুরমা পত্রিকার মহিলা পাতা সম্পাদনা করতেন। নারী শিক্ষা,  চাকুরী এবং প্রগতির জন্য  লিখেছেন। তাঁর লেখায় বরাবরই মানবতা ও প্রগতির জয়গান ফুটে ওঠে। কবির প্রকাশিত গ্রন্থের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে কাব্য গ্রন্থ  "নীল স্বপ্ন ও  "জল-জ্যোৎস্নায় হবে দেখা"। গল্প গ্রন্থ: "স্বপ্ন ও ছায়া", ইত্যাদি।

কবিতা 

তিথি আফরোজ

এক চিলতে কাতর আকাশ

 

 

ফোঁটা ফোঁটা ভালোবাসা, এক চিলতে কাতর আকাশ

প্রার্থনায় মগ্ন বিদগ্ধমন

সকাল ছড়িয়ে আছে গাছের পাতায়-

ফ্রস্টমাখা ভোরে মায়া হরিণ রেখেছিলো পা,

লনের সবুজ দূর্বাঘাসে মন্থর গতিতে. দূরত্ব ছিলোনা তেমন

তবুও তার চোখ হয়নি দেখা!

 

আইস কফিতে চুমুক দিতেই তড়িঘড়ি করে

যাই বলে ফেরার পথে ব্যস্ত তাড়া ,

ভুল ঠিকানায় এসেছিলো যে পার্সেল

তা ফিরেয়ে দিতে গিয়ে দেখি-

সানি হিল জংশনে দাঁড়িয়ে আছো কারো প্রতীক্ষায় ;

অভিসারে বাঁধা পড়ে আছে তোমার মনের রাগ-অনুরাগ।

নিরাশার খাম

 

 

রাতের কাছে ঘুম রেখেছি

তোমার কাছে চোখ,

ঢেউয়ের গায়ে অশ্রু ঢালি

চাঁদের বুকে দুখ

 

প্রদীপের গায়ে আলো রেখে

হাঁটি অন্ধকারে-

বুকের দহন মলাট বাঁধা

নিরাশার খামে

 

পাতাবাহার রং ছড়িয়ে 

লুকিয়ে রাখে ক্ষত! 

চেনা-অচেনায় যায় হারিয়ে 

জীবনের আদি-অন্ত!

এপিটাফ হাতে

 

 

পাখিদের আর ধরে রাখতে পারিনা,

কোথায় যেন ওরা উড়ে যায়

কোন অজানা গন্তব্যে…

সেখানে কি আছে কোন নীলাকাশ

সবুজ অরণ্য, গহীন হ্রদ বা জলপ্রপাত?

আছে কি কোন কুঞ্জবন

বাজে কি বাঁশি নিশিরাত?

মর্চোরিতে পাখিরা বেঁধেছে যে বাসা,

পারিনা যেতে তার কাছাকাছি-

স্বজনকাতর নিরালায় বড় একাকী

এপিটাফ হাতে দেখে পাখিদের সফর

কুয়াশা মাড়িয়ে ডুবে যায় ক্লান্ত চোখের প্রহর ।

মা

 

 

তুমি না প্রতিদিন কষ্টগুলো পুতে রাখো বুকের পলিতে। কমপ্যাক্ট ডিস্কের মতো বুকে জমা হতে থাকে নীরবে। কি আছে ভেতরে যায় না দেখা, শুধু ঝলমল করে।

তোমার চোখের গভীরেও কথা থাকে লুকিয়ে। কখনো পড়তে দাওনা,  পাছে বুঝে নেই সরিয়ে নাও দৃষ্টি পলকে। একা-একা সামলে নাও নিজের চারপাশ। 

বিশ্বাসে থাকো অনড়, রাতের নিস্তব্ধতায় বিপদে অথবা অনিশ্চি আশংকায় নত হও প্রার্থনায়। নিজের জন্য নয়, সন্তানের মঙ্গলের জন্য খুলে দিতে বলো তার রহমতের দরোজা। তিরস্কার করি তোমার সামান্য ভুলে, বিরক্তিকর ভেবে পালিয়ে যাই দূরে। 

তারপরও তোমার মনে নেই কোন ক্রোধ, ক্লেশ অথবা ঘৃণা, ক্ষমার হাত বাড়িয়ে বারবার টেনে নাও বুকে। মনেমনে জপ কর, অবুঝকে মাপ করে দাও প্রভু, তার হাতে হাত রেখে যেন মরণ হয় নীরবে কলেমা মুখে।

শেষ বিকেলের একলা পথে

 

 

শেষ বিকেলের একলা পথে

বেদনা সব দিনলিপি লিখে রাখে সূর্যাস্তের সাথে,

সমুদ্রের বুকে টুপ করে পলকে ডুবে যায় সূর্য

অনাথের মতো দাঁড়িয়ে থাকি সৈকতে-

ততোক্ষণে অন্ধকারের চাদর গায়ে নেমে আসে সন্ধ্যা,

বালিরবুকে ঢেউয়ের আচড়, ভালোবাসার সমাচার

জড়িয়ে রাখে পা, কেঁপে কেঁপে উঠে প্রাণ

দূর থেকে গোধূলি আকাশ

মুঠোভরা আলো নিয়ে শুশ্রূষার হাত বাড়ায়

সমুদ্রবায়ু ফিসফিসয়ে বলে যায় গত জন্মের কথা।

 

বছরের প্রথম দিন খসে পড়ে এভাবে

সম্মোহিত ঘোরে, অজানার বুকে।

থেমে গেলে ঝড়

 

 

ঝড় থেমে গেলে নেমে যায় বুকের পাথর

শেষ প্রহরে চন্দ্রহার গলায় রাত ঝলমল করে

গাছপালা খুঁজে তাপ, তাকায় আকাশ পানে

বাতাসের কাঁধে ভর করে উড়ে যায় মেঘ

দূরদেশে প্রাণসখার খুঁজে,

জলমগ্ন নদী হাঁপ ছেড়ে বাঁচে,

রান্নাঘরে স্পাইস টি সৌরভ ছড়িয়ে

কবির রাতজাগা ক্লান্ত মুখে দেয় চুম্বন,

ঝরে যাওয়া পাতারা জানালার কাঁচ দিয়ে

উঁকি মেরে দেখে স্থির দুটো নয়ন,

কবির মগ্নতায় শব্দ খুঁজে স্বপ্ন

বিস্তৃত অরণ্য থেকে আকুলি-বিকুলি করে

কবিতার আর্দ্র শরীর উঠে আসে নূপুর পায়ে।

ছি ছি পাতক

 

 

আমায় চেনো? দেখনি তো তুমি, চিনবে কি করে?

গল্পেও শুননি কোনদিন দিদিমার মুখে!

পাঠ্যবইয়ে কোথাও নেই লেখা আমাদের কথা

তাই বলছি, পৌঁছে দিও একদিন বীরত্বগাঁথা।

 

ইতিহাসবিদ ব্যস্ততায় কাটিয়ে দিলো এতটা বছর

প্রশংসা এবং পুরষ্কারে কাত হয়ে গেলো তাদের দেহ,

আমাদের নাম মর্গে জমা রেখে, বিক্রি করে সন্দেশ মোয়া

বিকৃত ইতিহাসের বনিক, না আছে লজ্জা, না অনুশোচনা!

 

বধ্যভূমি এবং গণকবরে গলে যাওয়া অস্থি নিয়ে

আমরা যে বারবার ফিরে আসি,

দেখি প্রহসন, দেখি ছদ্মবেশ

ঘৃণায় শুধু বলি ছিঃছিঃ পাতক।

bottom of page