বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উললক্ষে শিকড়ের কবিদের কবিতায়
স্মরণ, শ্রদ্ধাঞ্জলি
সম্পর্কপ্রবাহ
আতাউর রহমান মিলাদ
তাঁর কথা যতই লিখি
ততোই আপন হয়ে উঠেন,
এ এক আশ্চর্য নিয়ম
অবিশ্বাস্য রকম আত্মবিশ্বাসী মানুষ
নিজের ছায়ার চেয়ে
দীর্ঘ হয়ে ফুটেন।
যতদূর দৃষ্টি যায় প্রসারিত আলোর স্বভাব
শব্দরা জড়ো হয় অলীক কৌশলে,
মানুষের সঙ্গলোভে বাঁচার কাঙাল
জনপদে বহুকাল বাড়িয়েছি মাটির বিস্তার
অসীম আকাশ ছুঁয়ে হাতের আঙুলে।
পূরণ হবেনা শূন্যস্থান,কোনকালে
জানি,সব ফেলে ওপারেই গণনার দিন,
অসীম সাহসের অকৃত্রিম ডানায় ওড়ে
তাঁর কাছে ফেরা হবে অনন্ত সন্ধানে
কালের পিঠে বেঁধে পাহাড়ের ঋণ।
কবি আতাউর রহমান মিলাদ
আতাউর রহমান মিলাদ। আশির দশকের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও শক্তিমান কবিদের একজন। কবিতা, কথাসাহিত্য সহ সাহিত্যের অন্যান্য বিষয়েও সমানভাবে তিনি নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছন একজন সব্যসাচী লেখক হিসাবে। কবির ভাবনা এবং নিজস্বতাবোধ থেকে কবিতার অবলোকন এবং কবিতায় তিনি একান্তই নিজস্ব প্যাটার্ন তৈরি করতে সক্ষম হয়েছেন এবং সেই শিল্পবোধের দ্যোতনা অনায়াসে লক্ষণীয়। লিখছেন আশির দশক থেকে। বর্তমানে বাংলাদেশ ও বিলেতসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে প্রকাশিত বাংলা পত্রিকা, ছোটকাগজ সহ অনলাইন পোর্টালে তাঁর লেখা নিয়মিত প্রকাশিত হচ্ছে।
১৯৮৭ সাল থেকে যুক্তরাজ্য প্রবাসী। প্রবাসে জীবন-যাপন করলেও শেকড় স্বদেশেই প্রোথিত। বৃহত্তর সিলেটের মৌলভীবাজার জেলার শ্রীরাই নগরে জন্ম গ্রহণ করেন। এপর্যন্ত তাঁর ৭টি কাব্যগ্রন্থ, ২টি গল্পগ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। 'দুঃসময়ের চিৎকার' তাঁর প্রথম কাব্যগ্রন্থ ১৯৮৪ সালে এবং সর্বশেষ 'জলভরা জটিলতা' ২০১৪ সালে প্রকাশিত হয়।
একুশে বইমেলায়(২০২১) আসছে কাব্যগ্রন্থ ‘স্মৃতির সেলাই’। বর্তমানে সাহিত্য কাগজ 'শব্দপাঠ' এর প্রধান সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন। কবিতার জন্য পেয়েছেন সংহতি সাহিত্য পদক ২০০৮ সালে। কবিতার জন্য সম্মাননা পেয়েছেন 'আমরাকভেন্ট্রিবাসী' সংগঠনের পক্ষ থেকে ২০১৬ সালে। কবির উল্লেখযোগ্য প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ হচ্ছ; দুঃসময়ের চিৎকার, হৃদয়ের জানালা খুলে, আর যদি একটা গুলি চলে, কবিতার চেকবই, স্মৃতিহীন অচিন আঁধার, স্বরচিত অন্ধকার, জলভরা জটিলতা, স্মৃতির সেলাই (যন্ত্রস্থ)। গল্পগ্রন্থ:তোমার দেয়া দুঃখ, স্বপ্ন ও ছায়া (যৌথ), সম্পাদনা; ত্রৈমাসিক শাপলা, সাম্প্রতিক সাহিত্য, ভালোবেসে অন্ধ হই, তৃতীয় বাংলার কবিতা, শব্দপাঠ (প্রধান সম্পাদক)
এই সপ্তাহের কবি ও কবিতা
আতাউর রহমান মিলাদ
অবাধ্য আক্রোশ
হয়তো দিগম্বর ছিলোনা স্বেচ্ছায়
কেচ্ছা কাহিনী গড়ে উঠেছে গল্পের অধিক
হয়তো সময় বিবস্ত্র করেছে, তোমাকে
কিংবা মানুষ বিবস্ত্র করেছে সময়কে
আসলে দৃষ্টিভঙ্গিই সব
কি দেখছো,কিভাবে দেখছো
কতটা দুরে-কতটা কাছে
মনের জানালা খুলে দিলে বুঝা যায়
মনটাই জানালা
আকাশভরা রঙিন হরফ
পর্দার আড়ালে আদিম প্রাচীর
পর্দা,
মোহগ্রস্ত মানুষের মনের গোপন ঘোমটা
জলভরা কলসকে উল্টো করে দেখেছি
সেখানেও ঢেউ আছে, নিস্তরঙ্গ
জমাট জলের
বুঝে নিতে হয় আকারে ইঙ্গিতে,অনুভবে
মাথার ভেতর তরতাজা দুপুর
আঙুল বুনে তপ্ত রোদের কোরাস
পুকুর খননের প্রস্তুতি চলছে,পথের বাঁকে
কুৎসিত ও সৌন্দর্যের
হাসি ও হাহাকার হারিয়ে যাচ্ছে
সেলাই করা মৌসুমি জলের ভাঁজে
ভয়ের মুখোশ
পৃথিবীজুড়ে শঙ্কা ও ভয়,আক্রান্ত কাল
দুরে যাচ্ছে প্রিয় মুখ,অরক্ষিত দেয়াল।
চারপাশে বিষণ্ণ শিশির,অদৃশ্য অশ্রুপাত,
থেমে যাচ্ছে দীর্ঘ নিঃশ্বাস,বিমূর্ত করাত।
ঝাপসা দৃশ্যে অস্পষ্ট ঘোর,পাথরের চোখ,
ছায়ারা অতিক্রম করে দেহভার,ফ্রেমের মুখ।
অস্থির সময়ের উদ্যত তর্জনী,বিপন্ন বোধ,
আগুনে পুড়ে মোমের আখ্যান,নিষ্ফল ক্রোধ।
খণ্ডিত ভালোবাসা সামাজিক বিচ্ছেদ,হাড়ের কোরাস,
ঘরে-বাইরে নিঃশব্দ কারফিউ,দুঃখ আবাস।
ভয়ের মুখোশ পরে শাসাচ্ছে অবরুদ্ধ সময়
বিচ্ছিন্নতারও সৌন্দর্য আছে
তাই নিয়ে দুর হবে পৃথিবীর যত ভয়।
তিন প্রহর
কৈশোরে আবদার ছিলো
বিলিকাটা সিঁথি,রঙিন ফিতা,
যৌবনে লাল নীল শাড়ি
দ্বিপ্রহরে স্বপ্নমুখরতা।
বার্ধক্যে সাদাতেই খুশী
নিঃশব্দ স্মৃতিচিহ্ন আঁকা,
জরাজীর্ণ গোধূলি বেলায়
জীবনের তিনভাগ ফাঁকা।
নক্ষত্র পতন
মদের দোকান থেকে বাড়িটা হারিয়ে গেছে,কবে
খুঁজিনি কতকাল!
দিকভ্রান্ত মাতাল...
শেষরাতে পাহারার হুইসেলে খুলে হুইস্কির বোতল
সময় বেলাজ!
জীবনের কোলাজ...
নিজেকে বিক্রি করি মুদির দোকানে অতি সস্তায়,
কাঁটাছেঁড়া রোজ!
সংসার নিখোঁজ...
যে জীবন নিজের নয় করিনি তার দীর্ঘ
আয়োজন
চরিত্র চর্বণ!
বিষাদ পর্বন...
গাঢ় হয় নেশার রাত নিজের সাথে হয়না বোঝাপড়া
ঘোরের কাল!
রহস্য ধূম্রজাল...
আগুনসুত্র
মানুষ আগুন পুষে,পুড়ে এবং পোড়ায়
সৃষ্টি ও ধ্বংস করে আগুন ভাষায়...
মানুষ আগুন আগুন খেলে
আগুনের ভেতর করে বাস,
আগুন আপন ভেবে সঙ্গ দেয়
তৃপ্তিতে ধরে রাখে বারোমাস।
সবার সঞ্চয়ে আছে আগুন মহিমা
একমুঠো আগুন কখনও অনেক মূল্যবান,
মানুষ প্রতিদিন জন্ম দেয়
আগুনের সন্তান।
স্মৃতির সেলাই
মাটিতে মিশিয়ে এই রক্ত দেহ,
দুর করি যতো ধারালো সন্দেহ।
যতোটা আড়াল সম্পর্কের অতীত,
মাটি চাপা মমতায় হয়েছে পতিত।
হলুদ স্বপ্ন আর সেলাই মেশিন,
গেঁথে রাখে উষ্ণতার সুবর্ণ ঋণ।
#
আমার কোন নিজস্ব নদী নেই
তোমার নদীতেই বেঁধেছি ঘর
তোমার নদীতে যাত্রী পারাপার
বাতাসে র'টে যায় গোপন খবর
ভুল করে একবার ফিরে যদি চাও
আমার অস্থিরত্বসহ নদীই উধাও।
#
কাগজের নৌকো ভাসিয়ে জলে
উৎসব করি নির্মোহ সময়ের
জীবনযন্ত্রায় কখন যে বাতাসে উড়ে গেছে
নৌকোর পাল
এখন আর মনে পড়েনা...
তোমাকেই শুধু মনে পড়ে বেলা অবেলায়!
#
হারাবার যদি কিছু নাই থাকে
স্মৃতিটুকু ধরে রেখো,
সম্পর্কের জানালা খুলে,আবার
বন্ধন চিহ্নটুকু দেখো।
ক্ষতি নেই যদি ভুলে যাও উড়বার সাধ,
পোস্টকার্ডে লিখে দিও নিঃশব্দ আর্তনাদ।
#
হাতে বিঁধলে কাটা
সযত্নে নিতে তুমি তুলে,
বুকে বিঁধলো যে কাটা
আজো দেখলেনা খুলে।
স্রোতের ক্লান্তি নাই,
বারবার তোমার কাছেই যাই।
#
ধরে রাখো স্মৃতির অতীত,নির্ঘুম রাত
সময় ভাগ করুক যতোই মায়ার করাত।
ভাতের হাড়িতে ফুটুক লাল নীল ক্রোধ,
অভিমানে পুড়ে পুড়ে হয়ে যাবে শোধ।
ঝরে পড়া বৃষ্টিতে ধুয়ে যাক স্মৃতির শহর,
সময়ের সুখ স্মৃতি ছড়াক বুকে রঙের বহর।
দাসত্ব এবং পশুত্ব
সব হারানোর পর আমোদের সঞ্চয়ের ঝুলিতে রইলো একগুচ্ছ অন্ধকার।
নেংটিপরা বালকেরাও ভিক্ষার থাল হাতে দাড়িয়ে রইলো সুদীর্ঘ পরিকল্পনায়।
মোড়লেরা বেছে নিলো সহজ সরল পথ। আমাদের কাঁধ তক্তা ফেলে পার
পেয়ে গেলো নাগালরে বাইরে। কাঁধের ক্ষতটা চাটতে চাটতে আমাদের দাসত্ব
এবং পশুত্ব গাঢ় হল। আমোদের নাবালক স্বপ্ন নিয়ে খেলা করলো
সৌখিন শিকারি। আমাদের ব্যর্থ জীবন পেলো অব্যর্থ নিশানা।
এবং জিওল মাছের মতো আমরা চালান হলাম আরেক অন্ধকারে।
ঈশ্বর ও ইঁদুর
আমোদের সামনে কোন পথ খোলা ছিলোনা, আমরা বেপথে হাঁটতে
থাকলাম। হাঁটুজল, কাদামাটা পেরুতে পেরুতে অন্ধকারের দিকে ধাবিত হচ্ছিলাম। আলোহীন অন্ধকার কেউ কাউকে চিনতে পারছিলনা।
কার হাতে অস্ত্র, কার হাতে ফুল কিছুই বুঝা যাচ্ছিলো না। আমরা ভাগ হতে থাকলাম দুর্বিনীত সময়ের অগ্রস্থিত স্রোতে। কেউ কেউ তীরের সন্ধান পেয়ে ঈশ্বর হয়ে গেল। যারা পেলোনা তারা হলো ইঁদুর