top of page
BANGABONDHU.jpg
বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উললক্ষে শিকড়ের কবিদের কবিতায়
স্মরণ, শ্রদ্ধাঞ্জলি
sikor logo 1.png

"রণাঙ্গন থেকে বলছি"

রুমকি আনোয়ার

মৃত্যুর ভয়াল উপত্যকা আমার দেশ

বাহুতে এল এম জি নিয়ে ঘুরছি বন- বনান্তে ,

গতকাল মাথার উপর দিয়ে গিয়েছে বুলেট

বেঁচে আছি এটাই বিস্ময় ।

যখন ফিরে আসি আপন ডেরায়

ক্লান্ত , অবিশ্রান্ত দেহটি কেবল মৃত্যু খুঁজে

সঙ্গীরা আজ অনেকই গেছে ঝরে

১৮ বছর বয়সে সাতাশ টা খুন করেছি

সন্তাপ,অভিশাপ , মানবতা খুঁয়ে গেছে ।

পাশে সহযোগীরা গোল হয়ে" চরম পত্র" শুনছে

আমি ভাবছি মা' র কথা , বেঁচে আছে তো

শুনেছি পুরো গ্রাম নাকি জ্বালিয়ে দিয়েছে ওরা ।

গতকাল স্বপ্ন পুরুষ খালেদ মোশাররফ এসেছিল

পিঠ চাপড়ে বাহবা দিয়েছে ,

"বলেছি ভাত নয় , বুলেট চাই

আমি আরও খুনে হতে চাই । "

মৃত্যু আমাকে উল্লাস যোগায় , বেঁচে থাকার রসনা

একি মাতৃ জঠরে জন্ম নিয়েও অপাংক্তেয় হয়ে ছিলাম,

অধিকার কেড়ে নিয়ে গড়েছ বঞ্চনার ইতিহাস

আমরাও ফিরিয়ে দিব শতগুণে মৃত্যুর দানবীয় উল্লাসে।

কবিতার স্বপ্ন পুরুষ

 

রুমকি আনোয়ার

 

কবি এসে দাঁড়ালেন ডায়াসে

সফেদ পাঞ্জাবীতে সৌম্যকান্তি এক জ্যোতির্ময়,

স্বাধীনতার বারুদে ঝলসানো তপ্ত দেহ

চশমাটি খুললেন কবি আনমনে কি ভাবলেন।

সামনে উত্তাল জনসমুদ্র প্রতীক্ষায় অধীর

ক' রাত নির্ঘুম কেটেছে তাই চোখের নিচে কালশিটে দাগ

দুপুরের কাঁচা রোদে জুলফির উপরে কিছু পাকা চুল

ধারণ করে আছে স্বর্ণালি রঙ।

রুষে উঠা জনতার একাংশ জয় বাংলা ধ্বনিতে প্রকম্পিত করল চারিদিক

মৌনতা ভেঙ্গে কবি শুরু করলেন তার কবিতা

" ভায়েরা আমার আজ দুঃখভরাক্রান্ত মন নিয়ে

আপনাদের সামনে হাজির হয়েছি…

অতঃপর ইতিহাসের পাতা খুললেন কবি

তেইশ বছরের বঞ্চনা আর লাঞ্ছনার ইতিহাস।

নিজেকে আর সামলাতে পারলেন না,

ক্ষোভে ফেটে পড়া দ্রোহের চেতনা

"আমরা ভাতে মারব ,পানিতে মারব একবার যখন মরতে শিখেছি

কেও আমাদের দাবায়ে রাখতে পারবে না…"

শকুনেরা আকাশে উড়ছে গলিত লাশের অপেক্ষায়।

তার ডান হাতের তর্জনীটি আজ আর অবদমিত নয়

অচলায়তনের অর্গল ভাঙ্গতে আহ্বান জানালেন সবাইকে

"তোমাদের যার যা আছে তা নিয়ে ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তুলো।"

এই কবিতার পর রক্ত গড়িয়েছে অনেক,

একটা কবিতা একটা পতাকার জন্ম দিয়ে গেলো।

কালজয়ী এ কবিতা লেখা হয়েছিল ১৯৭১, ৭ই মার্চ

নন্দিত এ কবিতা গ্যাটিসবার্গ অ্যাড্রেস কে ছাড়িয়ে

উঠে গেছে অন্য এক অন্য মাত্রায়, সমাদৃত হয়ে আছে

বিশ্বের নন্দিত সর্ব বহুল শ্রুত কবিতা।

rumki fin.jpg

কবি রুমকি আনোয়ার

আসল নাম সুলতানা নাজনিন। বাবা ডাকত রুমকি। জন্ম এবং বেড়ে ওঠা দুটোই নারায়ণগঞ্জ। শীতলক্ষ্যার কোলঘেঁষে ড্রেজার কলোনি। সারাদিন নদীতীরে ছুঠে বেড়ানো, কাশফুলের সাথে ছিল সখ্যতা কিন্ত ছোট বেলা থেকেই কবিতায় ছিল আগ্রহ। সুযোগ পেলেই কবিতা লেখা। পনেরো বছর বয়সে তাঁর প্রথম লেখা ছাপা হয় স্থানীয় সময় পত্রিকায়। রক্ষণশীল পরিবার বলে তাঁর লেখালেখিটা তেমন মৌলিক অর্থে পরিপূরক ছিলোনা। কিন্তু তিনি থেমে থাকেননি।  এইচএসসি পরীক্ষার পরপরই বিয়ে, তবে সৌভাগ্য সেখানে তিনি মানসিক ভাবে অনেক সাপোর্ট পেলেন, শ্বশুরবাড়ি হয়ে ওঠে যেন তাঁর জ্ঞানঘর। কবি নিয়মিত লিখতে থাকেন। দ্রুত তাঁর কবিতার প্রসার ঘটতে থাকে। বর্তমান সময়ে রুমকি আনোয়ার বাংলা কবিতার জগতে বহুল পরিচিত নাম। জাতিয় পত্রিকা, ছোটকাগজ সহ, অনলাইন পোর্টালে তাঁর কবিতা প্রকাশিত হচ্ছে নিয়মিত। তাঁর প্রথম প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ বই জলের বুকে বিহঙ্গের কান্না। যদিও প্রকাশনা বা প্রচারের প্রতি তিনি সব সময় উদাসীন তবে ইতোমধ্যে তাঁর বেশ কিছু কাব্যগ্রন্থ প্রকাশনার অপেক্ষায়।

এই সপ্তাহের কবি ও কবিতা

রুমকি আনোয়ার

নগর সংকীর্তন

             

চোখে চোখ পড়লেই দেখি নগরী ধর্ষিত হচ্ছে নিয়মিত,

শিথানে - পৈথানে মিনমিনে হাওয়ায় ওড়ে

শালিমার ধূপের মুমূর্ষু ঘ্রাণ

লাল সবুজের সংকেতে ঠারেঠোরে কথা বলে।

এইখানে জেবের ভেতর চোরা মুদ্রার হাসি,

হ্যাভারস্যাকের ন্যুব্জ তরুণের সাধে প্রেমের তামাদি পদাবলি-

মরচে পড়া লৌহদণ্ডে ফৌত হয়ে যাওয়া সংস্কৃতির পাতা

কুলাঙ্গার কালের বারবনিতা টাল খেয়ে পড়ে।

এ নগর তবু ওস্তাদিতে ভরপুর,

খিস্তি-খেঁউড়ে বিরামহীন

কুকুরের জিহ্বার লাহান হাঁপায় কেবলই

আর বমি করে যায় গ্রামাঞ্চল।

 

 

 

পোয়াতি বর্ষা

             

 

বর্ষার মেঘ ভাঙে দুপুরের রোদ 

ভালোবাসার আয়োজনে খোঁপা খুলে যায়

জলবতী হস্ত বরদ বেড়াল-নিবৃত কাম তুমুল বিছানায়।

বৃষ্টির সয়লাব স্রোতে ঝুমঝুম ঝাঁঝাঁর  পিছলে কাদা-জলে

কেটেছে অঙ্গুলি বারান্দায় দাঁড়িয়ে দেখি ধবল পাঁজর 

আঁচলে টুপটাপ ঝরে আকাশ-আধুলি।

ত্রস্তে দাঁড়িয়ে উঠে ইতিউতি চায় আকাশ নেমেছে ঝেঁপে,

বৃষ্টির ছাঁটে গোপন ক্যামেরা কী ভেতরে শিহরায়।

বেচা যেন না হয় সে যমুনার হাটে।

মাঝে মাঝে বৃষ্টির এ খুনসুটি ভালো,

তুমি যে সুন্দর ভারী আজই সে জানালো ।

 

 

 

দহন

 

হৃদয়ের ঘাটে মাঝিরা পসরা সাজিয়ে বসেছে

আনন্দ বেদনার কাব্য কথা নিয়ে ,আর আমি,

সমুদ্রের কোল ঘেঁষে যেন পাহাড় ঘুমিয়ে।

ঘোর তদ্রাচ্ছন্ন মাঝে চোখ মেলে দেখি

প্রজ্বলিত মোমের আলোয় পতঙ্গের আত্মাহুতি।

ঝরে পড়া শিউলি আমি, শিশিরসিক্ত দূর্বাঘাস

কেউ গাঁথে মালা, কেউ বা পায়ে দলে যায়।

আমার আপন আঁধারে সিঁদ কেটে জ্যোৎস্না ঢুকে

কুয়াশার চাদর থেকে শব্দ কুড়িয়ে কথা বলি।

ভিঞ্চির রংতুলির আঁচড়ে হয়ে যাই

মোনালিসা ঠোঁটে লেগে থাকে রহস্যময় হাসি

জেনে রাখ আমি মেকী,

আমি কৃত্রিম এই তো জীবন, জীবনের উপহাস।

চাঁদ কে জীবন বানাবো আমি,

চরকা কাটবে বুড়ী, বিনিদ্র রাত্রিযাপন,

অপেক্ষার প্রহর এত দীর্ঘ কেন?

প্রবঞ্চিত আমি একদিন তোমাদেরই ছিলাম।

 

 

 

দুই জগত

 

জীবনের মাঝে মৃত্যুকে ধারণ করা কঠিন কিছু নয়

এই যেমন কবর থেকে উঠে এলাম-সাদা কাফনে

কিছু হাড়গোড়,

চোখের কোটরে আরশোলার অনায়াস প্রবেশ,

নাকের ছিদ্র দিয়ে প্রবেশ করছে কিছু অচেনা বাতাস।

ভাদ্রের রোদ্দুর বাদামি খুলিতে উনুনে রান্না চড়িয়েছে যেন।

পরিচিত মানুষ গুলোরে খুঁজে ফিরি অপরিচিত মানুষগুলোর নিঃশ্বাস আমার ক্ষয়ে যাওয়া পাঁজরে 

কিছু উষ্ণতার পরশ বুলিয়ে গেলো।

এই তো সেই বটবৃক্ষ আমার আশৈশব কেটেছে সেখানে 

পাশে উদ্যম নদী আজ ক্ষীণ ধারায় প্রবহমান

শৈশবের ঘ্রাণ নিতে মড়মড়ে কড়গুলো জল ছুলো

কোন স্মৃতি ফিরে এলো না  মৃতের স্মৃতি থাকতে নেই।

খসে পড়া কিছু পাতা-পায়ের অস্থিসন্ধি মাড়িয়ে

যেতে পারলো না জলের বুকে আমার কোন ছায়া নেই 

ছায়াহীন মানবী।

কিছু আউলা বাতাস আমাকে কাঁপিয়ে দিয়ে গেলো 

গির্জার ঘণ্টা ধ্বনি ডং ডং ডং এ যে কবিতা

লেখার সময় ফের জীবিত হয়ে ফিরে আসলাম।

 

 

 

 

 

শেষ যাত্রা

 

আমার নির্ঘুম রাতের নষ্ট প্রহর গুলো কথা বলছিল

অবলা বাতাসের সাথে, হলদেটে অমাবস্যা চাঁদ

ছিল সখ্যতায় ফ্যাকাসে হয়ে যাওয়া

অশ্বত্থের পাতা ঝরে পড়ে।

আজন্ম দুঃখী স্বপ্ন গুলো বিবর্ণ ল্যাম্পপোস্টের

আলোয় জীর্ণ, কৃশকায় ক্রমে ক্ষয়ে যাওয়া,

জীবনের কথা বলছিল-

সেই শৈশব থেকে বার্ধক্য সময়গুলি নাটাইবিহীন

ঘুড়ির মত কেবল উড়ে যায় মনচোরা স্বপ্নগুলো নিয়ে,

চারপাশের জানালা গুলো বন্ধ হয়ে আসে

কি এক অব্যক্ত বেদনায় কেঁদে উঠি মরীচিকা

জীবন সূর্যতপস্যা করে না কখনো।

চন্দন চিতায় মঙ্গল প্রদীপ যখন জ্বলে উঠবে

তখনও শাঁখের আওয়াজ,

উলু ধ্বনি শোনা যাবে হাজার বছর ধরে,

সময়ের প্রবাহমান স্রোত তা বলে দিয়ে যায়।

চন্দন চিতায় মঙ্গল প্রদীপ যখন জ্বলে উঠবে

তখনও শাঁখের আওয়াজ,

উলু ধ্বনি শোনা যাবেহাজার বছর ধরে,

সময়ের প্রবাহমান স্রোত তা বলে দিয়ে যায়।

 

 

চন্দ্রাহত রাত

 

পৃথিবীর সব কোলাহল নিভে গেলে

গুটিসুটি পায়ে আঁধার আসে,

ভেসে আসে ক্ষুধার্ত শিশুর কান্না

বাইজীর ঘুঙুরের শব্দে তা মিলিয়ে যায়।

পুরুষেরা ঢুকে ঘরে , কেওবা অন্য ঘরে

ভালোবাসা বঞ্চিত কিশোরী চোখে শিশির পতন,

রমনার সেই তিন যুবক আজও পারমাতাল

ঝোপের আড়ালে দেহপসারিনীর হিস হিস শব্দ।

রাত কি তবে দিনের চেয়ে সরব?

হয়ত কবিদের রাত হয় দিনে, খুলে বসে

অসমাপ্ত পাণ্ডুলিপি, অন্তর্ভেদী রাত আমাকে

ক্ষয়িষ্ণু করে, আমি পারি না সইতে কারো কারো

রক্তস্নাত চুম্বনে রাতের বুকে জ্যোৎস্না নামে।

নিশি জাগা বৃদ্ধ বেসুরো গলায় গান ধরে

দুপুরের শুভ্র বকের পালক পড়ে থাকে উঠোনে,

গৃহত্যাগী সন্ন্যাসী হবার সাধ জাগে মনে

 খেয়াপারে নৌকো শূন্য শুধু ভেসে যায়,

ভেসে যায়, ভেসে যায়…

 

 

ফিরে এলাম

 

জীবনের সাঁকো ভাঙা স্মৃতি নিয়ে ফিরে এলাম

খুব কি দেরী হয়েছে?

সময় কি ছুঁয়েছে আকাশ?

সোনা গুড়ো রোদ চেলাই কাঠের নিচে

বড় উজ্জ্বল মেঘেরা বিছায় আলো পড়ে থাকা

শূন্য বিছানায়।

সকালের রোদ্দুর অস্ফুষ্ট উষ্ণতায় চুমু খেয়ে যায়

কপালে আলো-ছায়া, মেঘরোদ্দুর,

ঘাসের গন্ধ সবই যে আগের মতই আছে,

নিজেকে নিহিত রেখেছিলাম বর্ষার কাদাজলে

- বাতাস শুষেছে যার অবলা চোখের অলসতা।

আমি আছি, আমি থাকব শুধু কবিতার পাতা

হয়ে আছে সাদা , আমি ছাড়া দেবতার হাত থেকে

কে খুলে পড়বে চিঠি

আবার মেহেগ্নি আলো বিকেলের জানালা ছোঁবে,

পেজঁকোলা নরম চাঁদের বল জ্যোৎস্নার নরম আলো

বিরহী বাতাস সাঁতার দিবে সবুজ ঘাসের মত ঢেউয়ে,

শব্দ প্রেমের চুম্বন নিয়ে আবার আঁকবো নির্বাক ছবি।

অনন্তের পথে হাঁটতে গিয়ে হোঁচট খেয়েছি কেবল

আজও জানা হলো না জল আর দুধের পার্থক্য ।

 

 

সময় কথন

 

জীবনের স্বপ্নে স্বপ্নে দিন চলে গেছে বেঁচে আছি

প্রতীক্ষার টেবিল সাজিয়ে, শুধু তোমাকে দেখি লিখি

প্রণয় ভাষণ ক্লান্তির প্রদীপ জ্বেলে

আলোকিত করি অন্ধকার।

যখন শুধাও এসে,

" ফিরে আসবো কথা কি থাকবে ঠিক?"

বিহ্বলতার ঝড় ওঠে মনে, কিভাবে বুঝাই বল আমি যে

জন্মান্ধ নাবিক এক কেবল বিপরীতে পড়ে

থাকে বিরহী আসন।

কোমল শূন্যতা ধরে রাখে দুপুরের রঙ রোদ

ম্রিয়মাণ হতে হতে ঈষৎ সন্ধ্যায় বুকের ভিতর

বাতাসের হু হু শব্দ,

সময়ের ঘড়ি যত ঘুরে মন তার চাইতে বেশি।

যোগ ,বিয়োগের খাতা অপূর্ণ থেকে যায়,

মেঘের উপর মেঘ উড়ে যায়, উড়ন্ত এক পাখি

আঁচলে গিঁট বাঁধে দেখি কেবল সংসারের চাবি

হাত বদল করে বন্ধনটুকু ঘোচালাম আজ ।

 

 

 

 

উদ্বাস্তু

 

বিশ্বাসের ভিটে-বাড়ী

থেকে বিশ্বাস উধাও হলে পরে

জন্ম নেয় উদ্বাস্তু - এক, দুই তিন হাজার অযুত

ক্ষেত্র বিশেষে কোটি ছাড়িয়ে যায়

হেসে চলে কিছু বিজাতীয় কুকুর তখন- '

'যাক ভেগেছে।''

শামসুর রাহমান লিখেছিলেন-'' সুধাংশু যাবে না ''

আমিও বলি যাবে না হিমাংশু,

অলোক কিংবা রেনুকা দি কেন যাবে তোমরা

শিকড় উপড়ে ফেলে কেন যাবে নিরুদ্দেশে

দণ্ডক অরণ্যে , আন্দামানে , মরিচঝাঁপিতে

ফিলিস্তিনি উদ্বাস্তুর মতো ঘোরা আশ্রয়ের খোঁজে

দেশহীন দেশ থেকে দেশে।

সুধাংশু যাবে না কোথাও , হিমাংশুও না

শুভেন্দু গেলে সে যাক দূর হয়ে যাক ভিক্ষাপাত্র হাতে

আমাদের জীবনের গান জীবনানন্দের মত

বহু কণ্ঠে হোক উচ্চারিত

এই বাংলায় আমরা সকলে মিলে রয়ে যাবো

হয়ত মানুষ নয় , '' শঙ্খচিল শালিকের বেশে

''নাড়ী ছেঁড়া টানে মাটির গন্ধ শুঁকে বলি,

মাটির শপথ খেয়ে বলি আমরা রয়ে যাবো

এই নদী এ আকাশ, এ পাহাড়, সবুজ বনানী,

ব্যাকুল তুলশী মঞ্চ - পিদিমের আলো,

এই মাঠ এই গ্রাম, শাপলার হাসি ভালোবেসে।

যদিও বৃক্ষজ সবুজ নির্বাসিত হয়েছে কিছু

অহল্যা সময় খেয়েছে অনেক

পাতকীকাল বুঝি নিয়েছে পিপাসার পাত্র

তবুও পূর্ব পুরুষের রক্তের ঘ্রাণ খুঁজে নেই এখানেই

প্রেমহীন উপেক্ষার আয়োজন ছুড়ে ফেলে

মেঘহীন শ্রাবণে করি বাস তবু উদ্বাস্তু হবো না কখনো।

আমাদের মেদহীন চওড়া হাতে আবার বুনবো

আবাদিত জমিন. শুভেন্দুও ভাববে আবার

এগুবে না এককদমও উদ্বাস্তু হওয়া বড় কঠিন ঠেকবে

কেবলই পিছাবে এ পোড়া মাটির টানে

হবে ফেরা গৌরবের -বিশ্বাসের দ্বিতীয় উত্থান

মূলে আঘাত নিয়েও বেঁচে থাকা আমরা

অপরাজয়ের গান গেয়ে যাই।

জানি ভালো করেই জানি -

ছিন্নমূল না হলে পরে কেও বুঝে না মূলের ধর্ম

উদ্বাস্তু না হলে পরে কেও বুঝে না মূলের মর্ম

উদ্বাস্তু না হলে পরে কেও বুঝে না বাস্তুর ধর্ম

উৎসমুখ রুদ্ধ হলে পরে চলে উৎসের সন্ধান ,

হনন খনন আয়োজন দেশ -দেশান্তর

এই দহন এই কালান্তরকে কবর দিলাম

ইতিহাসের শাশ্বত সত্য অস্বীকার করে,

ভুল দিয়েও ভুল ভাঙ্গা যায়।

 

 

 

সময়

 

প্রথম সিকোয়েন্স- ক্ষুধার্তের কবিতা লিখে

একটি রক্তাক্ত হাত, যে হাত একদিন কামড়ে

ধরেছিল নিজের হাত।

দ্বিতীয় সিকোয়েন্স- হাতল দেয়া চেয়ারে

চিন্তাক্লিষ্ট নেতা ধ্যানী শালিকের মত।

তৃতীয় সিকোয়েন্স- নো রিলিফ ফর বাংলাদেশ

দে ডু বিজনেস উইথ কিউবা

চতুর্থ সিকোয়েন্স- বাসন্তীর পড়নে মাছ ধরার জাল

সাংবাদিকের ক্যামেরার ফ্ল্যাশ ঝলসে উঠে

পঞ্চম সিকোয়েন্স- রফিক আজাদ

''ভাত দে হারামজাদা তা না হলে মানচিত্র খাবো।''

ষষ্ঠ সিকোয়েন্স- খুসখুসে কাশি নিয়ে কয়লা দিয়ে

মন্বন্তরের চিত্র এঁকে যাচ্ছেন জয়নুল আবেদিন।

সপ্তম সিকোয়েন্স -চাল, কেরোসিন, লবণের পারমিট

তাহের উদ্দিন ঠাকুর, খন্দকার মুশতাক।

অষ্টম সিকোয়েন্স- গণেশ উল্টে হরি লুটে

সব চামচার দল।

নবম সিকোয়েন্স- পড়ে থাকে নেতার লাশ

দ্যা প্যাট্রিয়ট লেখে নি কেও তখন।

দশম সিকোয়েন্স - আজও কবিতা আঁকে

একটি রক্তাক্ত হাত মৃত্যু আসে কি বিষণ্ণ সুন্দরে।

 

 

 

 

সাগর- মানবিক

 

সমস্ত দিনের ক্লান্তি ফোঁটা ফোঁটা করে ঝরে সন্ধ্যায়

বাদুড়ের দুর্বোধ্য প্রলাপ- ঘাসের ডগায় রোদের উত্তাপ

ছোঁয় রাতের শিশির জ্যোৎস্নার বাড়ন্ত হাত

পড়ে থাকে অবহেলায় মৃত সাদা ঘোড়ার মত

পড়ে থাকি নির্জীব, নোঙ্গর ফেলতে পারি

কোথাও ফেলি না কেবল অন্ধের মত

ছুঁয়ে ছুঁয়ে দেখি জন্মের মহিমা ভ্রমমাণ জীবনের কাছে

কেন দিতে চাও স্থিতি ?

কেন কেড়ে নিতে চাও অনন্তের সীমানা?

সাগরে সবাই নাবিক,

তবু দাম হাঁকে একে অপরের ভালোবাসা

সে কতদূর তোমাদের এ প্রশ্নের কাছে আসবো ফিরে

যদি সাগর তুমি হয়ে ওঠো মানবিক।

 

 

 

 

থাবা

 

বৃষ্টি যখন হচ্ছিল তখন মনে হচ্ছিলো মৃতের দীর্ঘশ্বাস

ভেবেছিলাম বেঁচে থাকা মানুষগুলোর সব

কান্না বৃষ্টি ধুয়ে নিবে- বৃষ্টি সে করুণাময়ের দান

তিন লাখ মানুষের হাসি ফিরিয়ে দিতে পারেন।

আবার সবাই কাজে যাবে ,মেশিনের সেই

চির পরিচিত শব্দ, ফেরিওয়ালার হাঁক

কোন মা তার সন্তানের জন্যে অপেক্ষা করবে,

কোন বাবা তার মমতার হাত বুলিয়ে দেবে,

বেকার ভাইটা জমিয়ে রাখা কষ্টের টাকায়

বোনের হাতে তুলেদেবে কবিতার বই

বৃদ্ধ দাদু এসে বলবে, ”দে পড়ি।”

খুব রাতে লেট নাইট মুভি দেখে পাড়ার বখাটে

কোন ছেলে  শিস দিয়ে ফিরবে সময়ের ঘূর্ণি

এখন অসময়ে –শূন্য গ্লাস পড়ে থাকে টেবিলে

আজ অন্তরে বাহিরে ঝড় ওঠে মনে।

এখানে মৃত্যুর কান্না উড়ে বিষাক্ত বাতাসে

বৈকাল হ্রদ জেগে উঠে অন্তরে,

তৃষিত আঁধার আজ আলো খুঁজে শুধু পথ ভুলে

মৃত্যুর পরিসংখ্যান ক্রমে বাড়ছে , বাড়ছে আর বাড়ছে–

মেজরিটি মাস্ট বি গ্রান্টেড বলে আজ নিজেই হাসছি,

বাঁচা – মরার মাঝে দূরত্ব কমে এসেছে।

রেড এলার্ম বলে চেঁচাচ্ছে যুদ্ধ ফেরত পাগল সৈনিক

জাস্টিস ট্রুডো হাঁটু গেঁড়ে গির্জাতে মোম জ্বালিয়ে প্রার্থনাতে

পাগলের মত হার্টবিট মেপে চলছে রুহানি ইরানে –

কাঁদছে বাংলার ছনের ঘরে সদ্য জন্ম নেয়া শিশু।

আজকের আমি তার জন্যে প্রার্থনা করে যাচ্ছি

বড় ম্লান গায়ত্রী সন্ধ্যা সুর তুলে ভৈরবীর

কামিনীর অন্ধ চোখ ফেলে যায় জল

পথ ভুলে পথ নদীর সাক্ষাতে,

তোমার চোখ আঁকা হয় অচেনা নক্ষত্রে

আমার কিশোরী বেলার আহত প্রেম জলের উপন্যাস লিখে যায়।

কিছু চোখ চেয়ে থাকে , কিছু চোখ নিহত হয়

আমি চেয়ে থাকি আগামীর দিকে

শুধু অশ্রুই জমা হয় চোখে –

rumkianwar.jpg
bottom of page