বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে শিকড়ের কবিদের কবিতায়
স্মরণ, শ্রদ্ধাঞ্জলি
একটি উদ্যত তর্জনী
আবদুল বাতেন
বজ্রপাতের মত একটি উদ্যত তর্জনী, মুহূর্তে মুছে দ্যায় দানবের আখড়া
আঁখি রাঙায় সূর্য, পূর্বাকাশের কুয়াশা, মেঘ মাস্তানির মুখোমুখি
অশান্ত স্ফুলিঙ্গ হয়ে ওঠে, প্রতিনিয়ত পদতলের মানুষেরা
গুহাবাসী শীতার্ত ন্যাংটা লোকেরা শিখে ফ্যালে
কাঁধে কাঁধ ঠেকিয়ে
হাতে হাত ধরে
প্রাণে প্রাণ রেখে
বৃক্ষ বাকলে, লতাপাতায়, চামড়ায় বস্ত্র বানানো
পাষাণ পাথরে পাথর ঘষে ঘষে গনগনে
আগুন জ্বালানোর কর্মকৌশল।
ইতিহাস গড়ে নিরস্ত্র নির্বোধ একটি জাতি জ্বলতে জ্বলতে...।
কবি আব্দুল বাতেন
কবিতা
বাংলা বদ্বীপ
ঢক করে গিলে খাই দুঃস্বপ্নের নোনাজল
জিভ জ্বলে যায়, কণ্ঠনালী সাহারা সমান!
বসতে বসতে
হাঁটতে হাঁটতে
শুতে শুতে
হতাশা হ্যান্ডকাফ লাগিয়ে হিড়হিড় করে টানে।
ব্যর্থতা বেয়নেটে খোঁচানো বিধ্বস্ত পিঠ পিরামিড
অবিরাম
উদ্বিগ্ন বুটের
লাথিতে
অন্ধকার গিলে ফেলে পাঁচ ফুট পাঁচ ইঞ্চির শরীর!
ভিজে আসে চোখ, নদী হয় শ্রাবণের
আমার দু’গাল হয়ে ওঠে বাংলা বদ্বীপ!
কবি আবদুল বাতেনের
১০টি কবিতা
জীবন এক অন্তহীন হাহাকার
ও মেঘ,
আটলান্টিকের অনুরাগী মেঘ, অখণ্ড অশ্রু আমার ওষ্ঠে নাও
সযত্নে পৌঁছে দিও বাংলাদেশে, দূষণমুক্ত তাঁর দু’নয়নে।
বাতাস ওড়ে
উত্তর আমেরিকার হু হু বাতাস, দীর্ঘশ্বাস আমার নিয়ে যাও
গেঁথে দিও ৫৬ হাজার বর্গমাইলে, তাঁর সুন্দরবন সমান চুলে।
রংধনু গো,
হাডসন পাড়ের রংধনু, আমার বর্ণিল বেদনার রং নাও নিংড়ে
টুপ করে টিপ দিও একটি বদ্বীপে, প্রভাতের মত তাঁর কপালে।
রে সূর্য,
নিষেধ না-শোনা শক্তিমান সূর্য, আমার অভিমানের উত্তাপ ছেনে নাও
পৌঁছে দিও পদ্মা মেঘনা যমুনার তীরে, তিল শোভিত তাঁর থুতনিতে।
যার কাছে মুখস্ত করেছি-
জীবন এক
অন্তহীন
হাহাকারের নাম।
নেশা
নদীর নেশা আমার
চিরন্তন।
মজা পুকুরে মজে যাব কেন?
স্রোতের স্লোগান
ঢেউয়ের গর্জনে অন্তর বিছিয়ে রাখি।
নীলাম্বরে পানকৌড়ির পোস্টার
ভালোবাসি
কমলা রোদের আঁচল ছুঁয়ে ছুঁয়ে
রাজহংসের রকমারি গ্রাফিতি।
নদীর নেশা আমার
আজীবন।
বখাটে বায়ুর গোল্লাছুট
মাস্তুলে মাস্তানি
চিলের।
প্রাচীন পাড় ভেঙেচুরে
নয়া চরের তীব্র চিৎকার!
ভালোবাসি
ভালোবাসি-
জোয়ারে যৌবনের বিশুদ্ধ জয়গান।
সেনোরিতা- কে
সেনোরিতা শোন, নড়বড়ে যখন
বিশ্বাসের খুঁটি
নাজুক নির্ভরতা
বুকের বদ্বীপে।
ধরে জমাট জং
যত্নে। চটে চটে যায় আলপনা
অধর ও আঁখির।
নির্বাসিত নীল রঙ
কালো মেঘের মিছিলে।
মরে গেলে
মনের মসলিন
রেখো...
তোমার স্তন উপত্যকায় রংধনুর আয়ু।
বাংলা বদ্বীপ
ঢক করে গিলে খাই দুঃস্বপ্নের নোনাজল
জিভ জ্বলে যায়, কণ্ঠনালী সাহারা সমান!
বসতে বসতে
হাঁটতে হাঁটতে
শুতে শুতে
হতাশা হ্যান্ডকাফ লাগিয়ে হিড়হিড় করে টানে।
ব্যর্থতা বেয়নেটে খোঁচানো বিধ্বস্ত পিঠ পিরামিড
অবিরাম
উদ্বিগ্ন বুটের
লাথিতে
অন্ধকার গিলে ফেলে পাঁচ ফুট পাঁচ ইঞ্চির শরীর!
ভিজে আসে চোখ, নদী হয় শ্রাবণের
আমার দু’গাল হয়ে ওঠে বাংলা বদ্বীপ!
প্রেমিক
বিদায় প্রিয়তমা, বিদায়-বলেও ঘুরেফিরে
দুষ্টু দেখাদেখি
কথার কুহুতান!
পরশে পালক, রাজহংসের
চুমুর চাকুতে ফালা ফালা করে কাটা!
বস্তুত: প্রেমিক মানেই বেহায়া বড়?
নিপাট লজ্জাহীন, সুমধুর শৈশব!
ব্যক্তিত্বের বাড়াবাড়ি নেই অত
নেই, আত্মসম্মানের অত্যাচার।
থাকলে
আততায়ী অভিমান, মোহন মজনু সাজা যায়?
কৃষ্ণ কোহিনূর হবে কেউ?
যুবাগণ গণজোয়ারে
মিশে যেত নিস্তেজ নপুংসকতায়।
প্রেম
তিল
তাল হতে হতে তাল পুকুর হয়ে যাচ্ছে!
শানবাঁধা ঘাট সে পুকুরে,
রোদের ঝিকিমিকি
টলটলে জলরাশি
আকাশের আয়নায়
যুগল রাজহাঁস ডুবছে আর উঠছে
উঠছে
আর ডুবছে, নিরন্তর.......।
শিকড়ের সন্ধানে
শিকড়ের সন্ধানে গেলে যাব, বিনিদ্র বায়ান্নে
অগ্নিগর্ভ একাত্তরে।
প্রভাত ফেরীর শহিদ মিনারে
স্মৃতিসৌধের অপার শুভ্রতায়।
যাব-
মননে লালন হাছন বুনে
নববর্ষের উদার বটমূলে।
নজরুল রবীন্দ্রনাথের
সূর্যমুখী সংগীতে
নবান্নোৎসবে, বর্ষা বন্দনায়।
শিকড়ের সন্ধানে গেলে যাব, পাতালে কি পাদদেশে
পাহাড়ের।
যাব, যমুনার থৈ থৈ জলে
রাধা অনুরাগে।
অপ্সরী ঊর্মির আলিঙ্গনে ওই
গাঙচিলের অবাধ স্বাধীনতায়।
শিকড়ের সন্ধানে গেলে যাব, পুষ্প পরীদের
বরফ বিতানে।
মুহূর্তে মেখে সজীব সুস্বাদু সমীর
হারাবো-
হাতছানিতে, চোখ-মারায় মেঘকন্যার।
রাষ্ট্রীয় আগুন
বস্তিকে বারবার গিলে খায় রাষ্ট্রীয় আগুন
ক্ষমতা ও পচাগলা প্রাচুর্যের অশ্লীল আগুন!
অট্টহাসিতে
বারবার
দাউদাউ পোড়ে একফোঁটা সুখ স্বপ্ন ও সংসার।
ছেঁড়াকাঁথা, থেঁতলানো থালাবাটি পুড়তে পুড়তে
জ্বলতে জ্বলতে ঘোলাটে আয়নায় আঁকা সূর্য সিঁথি
একটিবার
অনলে
অঙার মানুষগুলো হোক অপ্রতিরোধ্য অগ্নিকান্ড!
জীবন যেমন
পুলসিরাত পার হচ্ছি
প্রতিমুহূর্তে যেন!
দশদিকে
উৎকণ্ঠার অমরাবতী!
গৃহস্থালি গোঙানির
প্রাণে
পাকাপোক্ত।
জমাট বাঁধে রক্ত, শ্বাসকষ্ট
মৃত্যুভয়ে মানুষের।
কলিজায় ঠোকরায়
অবিরত
শকুন সংশয়!
চরণ চল তবু
উর্বশী র্উষা আলিঙ্গনে।
অসভ্য যে রাষ্ট্রপতি
ব্যবহৃত টিস্যুর মত তোমাকে ফেলেছে ছুঁড়ে
মনে নেই, ৩ নভেম্বর?
কালো অধ্যায়ের সমাপ্তি
তোমার পাছায় লাথি কষে সচেতন জনগণ!
সূর্যালোক নিভিয়ে দিতে তোমার অশেষ ষড়যন্ত্র
ইতর স্ফুলিঙ্গ,
নাচতে নাচতে
গাধার মুতেই মূহুর্তে ক্ষয়ে যাচ্ছে তোমার পরমায়ু!
বুড়ি বেশ্যার মত তুমি এখন অচল অরুচির
লোকে বলে-
মাগনা পেলেও
উন্মাদনায় মারতে যাবেনা তোমাকে কেউ আর।