বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষেশিকড়ের কবিদের কবিতায়
স্মরণ, শ্রদ্ধাঞ্জলি
মুজিব সারা বিশ্বের
তপন রায়
জ্বলছে স্বাধীনতার আলো জ্বলছে বাংলাদেশে আজ, জ্বলবে...
এ আলো যে চির উজ্জ্বল অনির্বাণ।
যদিও জানো- এ আলো এনেছে কে, তবুও বলি,
বলতে ভাল লাগে
এ আলো এনেছে মুজিব আমার, মুজিব তোমার,
মুজিব বাংলার, মুজিব বিশ্বের, মুজিব সকলের।
পরাধীন বাংলায় মায়ের, ভাইয়ের, বোনের উপর শোষণে শাসনে
অত্যাচারে অন্যায়ে কেঁদেছিল তাঁর প্রাণ,
তাবলে অশ্রুতে ভিজিয়ে করেননি তাঁর
নয়ন দুটি সজল, অগ্নিচক্ষুতে
সবল নির্ভীকে করেছিলেন সংগ্রাম।
এ সংগ্রামে, মুক্তির সংগ্রামে
পূর্ব পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশ উনিশ শ' একাত্তর
সালে স্বাধীন হয়ে স্বাধীন আজও।
এ সংগ্রামে কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব
প্রদান তাঁর।
আমরা ধন্য তাঁর জন্য,
ধন্য আমরা তাঁকে জাতির জনক,
বঙ্গবন্ধু, প্রাচীন বাঙালী সভ্যতার আধুনিক স্থপতি হিসেবে পেয়ে।
তাঁর অমূল্য অবদানে অমর তিনি।
সশ্রদ্ধ প্রণাম জানাই তাঁকে।
কবি তপন রায়
কবি তপন রায়। তাঁর সার্টিফিকেটে নাম শিশির কুমার রায় । বেশিরভাগ লোকই তাঁকে তপন রায় নামেই জানে। পেশায় শিক্ষক হলেও সমানভাব তাঁর পরিচয় একজন কবি, গল্পকার, নাট্যকার, গীতিকার, সম্পাদক, অভিনেতা ও সংগঠক। জন্ম মানভূমজেলার, (বর্তমানে পুরুলিয়া জেলার)মধুতটী গ্রামে। বর্তমান নিবাস হীরাপুর, ধানবাদ, ঝাড়খণ্ড, ভারত। লেখালেখির শুরু বাল্যকাল থেকে, নয় বছর বয়স থেকেই তিনি কবিতা ও গল্প লিখতে শুরু করেন। ১৯৮৯ সালে হীরাপুর হরিমন্দির শারদীয়া সম্মিলনীর সুভেনীরে ও সঞ্জয় সিনহার অনুরোধে হিন্দি ভাষার আওয়াজ সংবাদপত্রে তাঁর প্রথম কবিতা প্রকাশিত হয়। তারপর থেকে কবির কবিতা ও গল্প ভারত, বাংলাদেশ সহ বিদেশের নানা পত্রিকা সহ অনলাইন পোর্টালে প্রকাশিত হতে থাকে। বাংলা ছাড়াও ইংরেজি ও হিন্দি ভাষার কবি হিসাবে তিনি অনেক জনপ্রিয়। বর্তমানে আবাদ জমিন পত্রিকার প্রধান সম্পাদকের দায়িত্বে নিয়োজিত আছেন, তাছাড়াও সম্পাদনা করেছেন- বাঁধনহারা, দক্ষিণ বাঁকুডর অর্চি, জানতে জানাতে, কণ্ঠস্বর, অঙ্কুর, আমরি বাংলাভাষা, রাঢ় পত্রিকা, অনন্যা, অর্ক, দুর্বাসা, দূরের খেয়া ও অভিমুখ ইত্যাদি। প্রকাশনার দায়িত্বে ছিলেন দৌড় পত্রিকার ৭৬তম সংখ্যা পর্যন্ত ।
কবি এ পর্যন্ত যে সকল পুরস্কার ও সম্মাননা পেয়েছেন তার মধ্যে নিখিল ভারত বঙ্গ সাহিত্য সম্মেলন পুরস্কার ও অভিনন্দন পত্র, সুতপা সাহিত্য পুরস্কার, নিখিল ভারত বঙ্গ সাহিত্য সম্মেলন, রবীন্দ্র-নজরুল অকাদেমি সম্মাননা, রবীন্দ্র-নজরুল সুকান্ত অকাদেমি সম্বর্ধনা ও সম্মাননা সহ নানা পুরস্কারে অভিষিক্ত হন। প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থের মধ্যে নদীকে নস্যিকৌটোয় ভরে, অনির্বাণ রোদ্দুর, মাটি মাখা অলিন্দে, ধূপ কী সয়ারী (হিন্দি) সংকলন- বাংলার বাইরে বাংলা কবিতা, এই শতাব্দীর ছড়া ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।
এই সপ্তাহের কবিতা
তপন রায়
জড়াবো আকাশ-হৃদয়
মেঘসত্তায় জড়াবো আকাশ-হৃদয়
থাকবো বেশ কিছুক্ষণ স্বল্পমেয়াদী সুখে
বলে রেখেছি হাওয়াকে
সরিয়ে দেবে না আমায়
প্রাণ বিসর্জনে দিয়ে যাবো
স্বাধীন সৃজন ফসল
অমানবিকতা যেন করে না
স্বাধীনতা হরণ
সংকীর্ণ যেন না হয়
এর পরিধি
থাকে না যেন কোন পক্ষপাতিত্ব
আবার আসব আমি
আসতে থাকব বছরে একবার
প্রয়োজন হলে আসব
এক বছরেরও বেশী
সাগরসলিল ঔরসে জন্ম
নেব বাষ্পভ্রূণে
দেখব জমি জলাশয়কে
মেটাব চাহিদা তাদের
হিংসার স্বার্থের কবলে
যেন পড়ে না তারা
মেঘলা
ছিলো না আলো, ছিলো না অদৃশ্য দেখানো অন্ধকার
প্রকৃতি হৃদয় অন্তর উদাসীন মেঘলা
সকাল-মধুর তৃষ্ণা মেটানো পানীয় জল
দুপুর বিকেল- উদাসী খোলা মেঘলা মন
আকাশনীল ঢাকা শান্ত সুধীর নিধু অচল মেঘ।
নেই ক্লান্তির দীর্ঘশ্বাস, শুধু নির্লিপ্ত প্রচ্ছদ ছবি।
হেঁটে হেঁটে পথ চলা, প্রয়োজনে যাওয়া আসা
ছেড়ে আসা পুষ্পোদ্যানে কর্মধর্ম রত সুন্দর ফুল
প্রজাপতি, মধুমক্ষীর সঙ্গলাভে মনোহর সৌন্দর্য্যে
তৃপ্ত করে পাপড়ি অধর, ভরে নেয় শারীরিক সুখ
এসেছি দেখে, দেখি প্রতিদিন।
আশ্চর্য্যের কিছু নেই , প্রকৃতির নিয়ম এই
রোদ্দুরে, মেঘলায় , অন্ধকারে সর্ব্বদাই সমাবস্হায়
পুষ্পশরীর।
মানবপ্রকৃতিতে শুধু মন বদলায়
রোদ্দুর , তাপ দিয়ে যায়
অন্ধকার দিয়ে যায় সন্ধ্যে, রাত
মেঘলা প্রকৃতিস্হিতি রোদ্দুরহীন দৃশ্য আলো
মনজুড়ানো আলো আঁধারের সুন্দর মিশ্রণ।
একা সুদর্শন ফুলেদের মাঝে
এতো ভালবাসা!
প্রতিদিন একা সুদর্শন মৃত্তিকার ধরে রাখা
ফুলেদের মাঝে, জল আলোর জীবিকায়।
আকাশ সর্বদা নীরব, কখনো হাওয়ার শব্দ
শোনা যায়, কখনো শোনা যায় না শব্দ তার ।
দিবালোকের রূপ বোঝা দায়, তার বর্ণনাও
সম্ভব নয় ।
রাতের অন্ধকারে মুষিকের নিরম্বু উৎপাত,
পেঁচার ডাক, আঁধার নিশা-ঝুলন্ত বাদুড়ের
কালো দর্শন ।
রাতের কোন বিছানা ভেজে অভাগীর চোখের
জলে, কোন রজনীশয্যা ভাড়াকরা বিছানা ,
কোন রাত্রি কেনা মূল্য সময় ধরে ।
আলো অন্ধকার
শৈশব কপালে কাজল চাঁদ
জ্যোৎস্না আবিষ্ট মধুচন্দ্রিমা যৌবন
হৃদয়ের সৈকত অলিন্দে পল অনুপল খেলা
তারপর এক সময় সব ভালবাসা
যেন স্মৃতিসৌধ হয়ে যায়
সাদা পাতায় বয়সের দাগ
ভাবি বসে - আজ আনমনে ছিল যে অনেক
সময়ের বাঁকে হারিয়ে আজ জীবন এক
কঠিন সংগ্রাম
কখনো নিরক্ত কখনো রক্ত স্বাধীনতা সচেতন
অন্ধকার নাকি আলোনির্ভর দাঁড়ি পাল্লায়
মানবতা ভারসাম্য
কিন্তু ঘরের অন্ধকারে সংক্রামিত বাহির সমাজ
সবুজ সাদা গেরুয়ার স্বপ্ন দেখে বারবার
অশোকস্তম্ভকে মধ্যমণি করে
অন্ধকার বিষাক্ত ঘনত্বে অকেজো কালবৈশাখী
ঝড় বৃষ্টি যদিও বা আসে পরিণামে কুফল
আলোর বড়াই শুধু অন্তরে অন্ধকার
এ চোখ আমার নয়
নিজের জিহ্বাকে করেছি পরাধীন
মেয়েদের যত স্নানঘাটে ।
খবরের মোক্ষম স্হান, নিন্দুকের বৈঠক,
সমালোচনার ফুলঝুরি।
তীর্থের স্হান যে এটা নয়, জানি নিশ্চিত ।
তবুও বেহায়া চোখ তাকিয়ে রয় অবিরত ।
ছন্দে কোমর দুলানো নিত্য কিশোরীর,
অগ্নি জ্বালিয়ে যায় চুম্বনরত শরীর ।
বারে বারে বলি আমি-এখানে শুকনো
পাতায় আগুন জ্বালি ।
শ্রাদ্ধ, শ্রাদ্ধ আর শ্রাদ্ধ অতীত কিংবা বর্তমানের ।
আমি সমুদ্রে করেছি অবগাহন কি এক অহংবোধে, কেশরির রাজপদ দিয়ে চলি,
বালুচরের ধূসর দেহ পড়ে থাকে পিছে
তরঙ্গের ঘন প্রহারে।
দেশী বিদেশী পর্যটকের সহায় হয়ে ফিরে চলি
না জানা গন্তব্যে।
আধুনিক গার্গী বর্তমান মৈত্রেয়ী
তোমার মনের ভিতর দেখেছি পারিজাত
চোখের ভিতর দেখেছি কমল
হৃদয় অন্তর বুঝেছি তোমার তুলো
দেহ কোমল তুমি পায়ে দাঁড়ান বৃক্ষ।
সরসে তুমি উর্বর মাটি, মনে খোলা আকাশ।
তোমার উপর চোখ পড়ে, পড়তে থাকে....
তোমার সুন্দরতা না হয় যেন লালস মেটান
জবরদস্তি নিষ্ঠুর ক্ষুধা।
যৌবন তোমার ভরানদী, শান্ত ধীরগতি
বিনম্র স্রোত।
কোমল হাতে নেই তোমার কর্মধর্ম বিরতি
নিরলস তুমি,
সরস্বতী তোমার মাথার ভিতর; আধুনিক গার্গী
বর্তমান মৈত্রেয়ী তুমি।
সকল শূন্যতায় নিরুপায় দর্শকে দিই তালি,
গর্বের অতি গর্বের তুমি।
ভাল লাগে আমার
তোমাকে দেখে ফেরাতে পারি না চোখ,
দেখলেই জুড়িয়ে যায় আমার দুই নয়ন।
তোমার পলাশবর্ণ মসৃণ গাল, মিশ্রিত
রজনীগন্ধা হাসনাহেনা সুগন্ধ আতর,
কল্পতরু উদারতা পুষ্পমহিমা ভাল লাগে,
খুব ভাল লাগে আমার।
তোমার যৌবনচেতন নদীবেগ, স্নিগ্ধ উজ্জল
জ্যোৎস্নাবিলাস ভাল লাগে,খুব ভাল লাগে।
অন্ধকার
মধুর সম্পর্ক ঘরে প্যাঁচালো মাটির প্রবেশ।
ঘরোয়া কলহ
কুরুক্ষেত্র নাগাসিকা হিরোসিমা ভিয়েতনাম
নাকি করোনা
ভোর কি তেমন ভোর আছে
দিন কি দিন আছে
নাকি এরা সব রাত
সকালে পাখির শব্দ নেই
চড়ুই বিরল
হৃৎপিণ্ড কেঁপে ওঠা শব্দ সাইরনের
দিনের আলো আসবে কি জানালা দিয়ে
দরজা খুলে কি দেখা দেবে নির্মল আলো
নাকি জানালা দরজা বন্ধ ঘরের অন্ধকারের মত
কে বলে দেবে কাকে সকলেই গৃহপ্রমে বাধ্য
বাহির ভুলে যেতে
কুরুক্ষেত্র নয় হলে ধৃতরাষ্ট্র সব জেনে
নিত বিদুরের কাছে
এখনো
এক
এখনো অক্ষয় নিবাসে ধর্মান্ধ কালো
আলোক রবিকর বোঝে না সাতপাঁচ
সরল মনে দেয় আলো, ক্লান্ত গোধূলিতে
আলো রাখে চাঁদের কাছে রাতে আলো বিতরণে
অমাবস্যায় পরাস্ত পূর্ণিমা, অন্ধকার নৈশরাজ
দিনের কালো হাত বেপরোয়া আঁধার আলোর
চোখে ধাঁধাঁ দিয়ে
এখনো
দুই
পচা গন্ধে দুর্গন্ধ
চিল শকুনও লজ্জা পায়
দিব্যি হেঁটে চলা সোরগোল
উঁচুনাক।
মন শিরা উপশিরা পাখী ভুলি
পচে গন্ধ।
দুর্গন্ধ অভ্যন্তর।
কৃত্রিম ফুলে আতর গন্ধ
সুন্দর চলে দুর্গন্ধ বাজার।
খুঁজে ফিরি বিষণ্ণ অতীত
মেঘে ঢাকা তুমি শীতল পাটি আমার
খুঁজে নিতে সাগর আমি
পথের রোদ্দুর মেখে নেয় কপালে
সন্ধ্যেয় আবির রঙ কিংবা বসন্ত
বৃষ্টির ঝরণায় সিক্ত ভেজামন
ইজেলে টান দিয়ে অদৃশ্য ছবি আঁকি আমি
মৃগনয়না চোখ সে কোন অপ্সরী
এলোকেশি চুলে তার সমুদ্রের ঢেউ খেলে
উরুর সিঁথিতে চুমু খেয়ে বলেছি
ভালবাসি ভালবাসি ভালবাসি
কামনার সিঁদুর রাঙা রাত
চাদরের খাঁজে খাঁজে খুঁজেছি উষ্ণতা
সময়ের ভেলায় সাদা চুল উড়ে
আজও খুঁজে ফিরি সেই সুখ স্মৃতিগুলি
কখনো
কখনো পর্বতশীর্ষ, নাতিশীতোষ্ণ আবহাওয়া
কখনো পাহাড় পাদদেশে গ্রীষ্মের রোদ্দুর, শীতের ঠাণ্ডা হাওয়া।
কখনো পদ্মা যমুনা কাবেরী গঙ্গা দামোদর
ভাগীরথী,
কখনো ফল্গু কখনো শুধু বালি।
কখনো সৈকত, কখনো জীর্ণ কুটির।
কখনো সবুজ সোনালী জমি,
কখনো শুষ্ক নীরস ক্ষতবিক্ষত।
কখনো রাস্তা আলো ঝলমল,
কখনো বন্ধুর অন্ধকার চারিদিক।