বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে শিকড়ের কবিদের কবিতায়
স্মরণ, শ্রদ্ধাঞ্জলি
উদ্ধত তর্জনী
মাশূক ইবনে আনিস
এমন উদ্ধত তর্জনী ছিল কার বলো? তোমার আগে,
মানুষেরা গর্জে ওঠতেই নতুন ভোর হয়, নতুন পাখিরা জাগে।
এমন উদ্ধত তর্জনী ছিল কার বলো!
এমন আকাঁড়া যৌবনের সাহসী আহবান, কেউ আর মৃত্যু ভয়ে থাকে নি লুকিয়ে ঘরে,
কী মা, কী বাবা, কী ভাই, কী বোন সকলেই মৃত্যুকে করেছে তুচ্ছ, তোমার আদেশ ছিলো সবার উপরে।
এমন উদ্ধত তর্জনী ছিল কার বলো!
সেই বীর ছিলো বন্ধু, ধীরে ধীরে পিতার আসনে সম্মানিত হলো।
তোমার সেই তর্জনী আজও দেখাচ্ছে পথ ও পরিক্রমা,
আমাদের ত্রুটি আছে পিতা
জানি, সঙ্গে আছে তোমার ক্ষমা,
তাই ; মরে মরে বেঁচে যাচ্ছে দেশ
তুমি বঙ্গবন্ধু, আমাদের প্রেরণা অশেষ ...।
কবি মাশূক ইবনে আনিস
মাশূক ইবনে আনিস, আশির দশক থেকে পুরোদমে সাহিত্য সংশ্লিষ্ট মানুষ। পত্র পত্রিকা, স্মরণিকা, সাহিত্য ম্যাগাজিন, লিটলম্যাগ এবং সাহিত্য সাময়িকীর সঙ্গে জড়িত মধ্য আশির দশক থেকে। ছড়াপত্র পায়রা সম্পাদনা দিয়ে যাত্রা শুরু হলেও সাহিত্য পত্রিকা কাকতাড়ুয়া সম্পাদক হিসেবে সমাধিক পরিচিত। মাশূক ইবনে আনিসের প্রথম কাব্যগ্রন্থ যদি বিদ্রোহ করি প্রকাশিত হয় ১৯৯৪ এর বাংলা একাডেমি গ্রন্থমেলায়। এরপর একে একে আরও তিনটি কাব্যগ্রন্থ, যথাক্রমে — অবশিষ্ট শূন্য এক, অলৌকিক মাশূকনামা ও অর্কের অধিবাস। এ ছাড়াও প্রকাশিতব্য কাব্যগ্রন্থ আমার উপরে মাটি এবং গানের বই মাশূকে এলাহি প্রকাশের অপেক্ষায় আছে। মূলত : মাশূক আনিস পদাবলির কবি। বৃত্তায়ন ও বৃত্তাবদ্ধতায়ও স্বাচ্ছন্দে লিখে যেতে পারেন অনায়াসে। ছড়ার ছন্দে, তালে, মাত্রায়, অন্তমিলে ও মাশূক ইবনে আনিস সমান পারদর্শী। আধ্যাত্মপ্রেম, নারীপ্রেম, মানুষ ও প্রকৃতপ্রেম মাশূক ইবনে আনিসের উপজীব্য বিষয়। গান একটি সাধনার মূল ক্ষেত্র তাঁর।
সার্টিফিকেটের বয়সের বাইরে তাঁর প্রকৃত জন্ম ২৩ মার্চে, সুনামগঞ্জ জেলার জগন্নাথপুর উপজেলার ঐতিহ্যবাহী সৈয়দপুর গ্রামে তাঁর জন্ম। এক কন্যা সন্তান ও দুই পুত্র সন্তানের জনক কবি মাশূক ইবনে আনিস। যুক্তরাজ্যে স্হায়ী আবাসন হলে বিগত ১ দশক ধরে বেশির ভাগ সময় দেশেই অবস্থান করছেন। সাহিত্য চর্চা ছাড়াও মাশূক ইবনে আনিস সক্রিয় রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। বর্তমানে যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন। গ্রাম সৈয়দপুর থেকে যাত্রা শুরু হলেও মাশূক ইবনে আনিস বাংলাদেশে ও বহি:বিশ্বের সাহিত্য অঙ্গনে স্বনামেই অধিক পরিচিত একজন নিভৃতচারী সাহিত্যিক। মূলত : কবিতাপ্রেমই একজন মাশূক ইবনে আনিসকে সাহিত্যের বাউলিপনায় বেঁধে রাখছে বহুমাত্রিক সুরের ইতারে .।
এই সপ্তাহের কবি ও কবিতা
মাশূক ইবনে আনিস
সবই আমাদের ইদায়োজন
মর্গে পড়ে আছে অসংখ্য বিলাপ,
অদূরে ধ্বনিতে হচ্ছে লাব্বায়েক!
শিশুদের আনন্দ বইছে চোখে মুখে, পশুগুলো-
জীবন সায়াহ্নের ক্ষণ গণনা করছে
নির্বোধের সাংকেতিক ভাষায়।
জল-ঢল-বান ও বন্যায়
মুমুর্ষ মানুষেরা ত্রাণকর্তার ঐশীক পদধ্বনি
শোনার জন্য কান পেতে আছে—
লাব্বায়েক, লাব্বায়েক
উচ্ছ্বাসের শূন্য উখায় জলের বুদবুদে উড়ে যাচ্ছে লাব্বায়েক,
কোথাও মনুষ্য কর্ণবিবরে
সুখের কথা পৌঁছেনি ভোরের হাওয়ায়।
অদীপেই কেটে গেলো ঈদ, আনন্দ, লাব্বায়েক আর;
ত্যাগের জবাইমহিমা!
শুধু; পামরেরা গুছিয়ে নিয়েছে নিজেদের-
সদ্যপ্রসূত ছাগলছানার মতো-
তাঁরা আবার নাচতে শুরু করবে।
তাঁদের চোখ প্রাগুক্ত পামরের মতই-
এই চোখ কান্না ধারণে কুলিশকর্মা।
মায়ার পয়ার
মায়ের মায়া রক্ত নাড়ি জন্ম-মায়ার-টান
বাবার মায়ায় সব কিছুই মিলায় পরিত্রাণ।
ভাইয়ের-মায়া ভাইয়ের-প্রতি হিসাব-নিকাশহীন
ভাই আর বোনের মায়ার ছবি শুধু-ই অমলিন।
পুত্র এবং কন্যারা-যে রক্তে-গড়া পুতুল
সন্তানের এই মায়ার-মোহে কোথাও নেই ভুল।
সত্যিকারের বন্ধু-মায়া জীবন দানের মত
মায়ার প্রেমের ভালোবাসা আজন্ম অক্ষত।
মায়ার বাঁধন ছিন্ন করা শুধু-ই নরকবাস
মায়াহীন এই ভূবনচারণ জীবন্ত এক লাশ!
পরিবারের মায়ার ভেতর স্বর্গ বিরাজ করে
মায়ায় থাকো ও-মন মাশূক ক্ষুদ্র জীবনভরে।
আজ বিকেলের কাব্যযাপন
আজ বিকেল শিকেয় রাখা তারুণ্যের মত ঝুলছে, ঝুলছে, ঝুলছেই অবিরাম। আজ বিকেল যেন তামান্নার গলায় ঝুলানো তামার চেইনটি, বার বার চমকায়— কালবোশেখি সন্ধ্যার অনলবর্ষী বিজলী যেন। আজ বিকেল দ্রুত-ধাবমান ট্রেনের মতো সান্ধ্যকালীন আলো ভেদ করে অন্ধকারের সঙ্গে বাসর রাত করবে অস্থিরতায়। আজ বিকেলটি উঠোনউজ্জ্বল করা তামান্নার নূপুর পরিহিত ধবধবে সাদা পা। বিকেলটি কিঞ্চিৎ ম্লান করা এক টুকরো গদ্য, শিরোনাম অংশ সেই কবেই ছিঁড়ে চানাচুর ঠোঙার কাজে ব্যবহৃত হয়েছে গঞ্জের হাটে। আজ বিকেল শিকেয় রাখা বোয়ামের ভেতরের টকঝালমিষ্টি আচার, হাঁসমার্কা গন্ধরাজ নারিকেল তেলের মতো বুদবুদে পাণ্ডুর পাণ্ডুলিপির আদলে পড়ে আছে নেত্রকোনার হাজং স্টেশনে। আজ বিকেল কবিতার সঙ্গে প্রেম বিচ্ছেদ হওয়া বালকটির প্রথম গাঁজা সেবনের কাব্যিক মুহুর্তমন্ডিত অনুভূতি, তামান্নার গায়ের ঘ্রাণের মতো অত্যাশ্চর্য সুন্দর। বিকেলটি প্রথম মৈথুনস্মৃতির শিল্পকলা। আজ বিকেল আবংগীশাহ পীরের মাজারের মতো রহস্যাবৃত এক উঁচুটিলা যেন, তামান্নার সমস্ত অভিমানের স্তুপাকৃত ঘৃণার কাঞ্চনজঙ্ঘা। আজ বিকেল ল্যাম্পপোস্টে ঝুলে থাকা বাতিগুলোর উজ্জ্বল যৌবনের মতো একজন তামান্নার অলিখিত অভিমানের
অনেক অনেক স্মৃতবিস্মৃত প্রথম চুম্বনের ঘোর লাগা শূন্যতার অবিশ্রান্ত পাঠ..
প্রাকৃতকথা
নাভির কুণ্ডলীতে ঘূর্ণন দিচ্ছে আবহাওয়ার পূর্বাভাস।
গতচ্ছ সূচনাকালে গতার্তবা ছিলো ঝড়ের জড়ায়ন।
ফলপ্রসূ হয়নি—
চর্মাবরণের অশ্রুসজল আনন্দ!
গভীর সমুদ্রে যে নিম্নচাপ—
মীন ও মৃগের উৎসব রচনা করছে, সেখানেই ঝলসে ওঠছে—
ভরা ভরণীর মুখ।
গৃহকক্ষে প্রবেশের প্রয়োজনে বাঁশি বড় অযাচিত ধন,
বাঁশের সঙ্গে হোক সামন্ত যাচাই।
আজ রাতে—
ঝড়, আত্মা ও লৈঙ্গিক প্রকৃতি
অধুনা নাস্তিক্যে বিলীন হবে
পালাক্রমে,
এমন প্রাতিস্বিক
মৃত্যু থেকে পালাবার পথ নেই মাশূক
জন্মের মত জলান্তরিত হও!
চিরজনমের সখা
তুমি- যত কাছে আসো তত তাঁরা দূরে চলে যায়,
তাঁরাযে তাহা বুঝিবারে নাহি চাহে-
তুমিযে আমার প্রাচীন ও প্রথম জন্মদায়।
প্রথম নিশ্বাসে তোমার সঙ্গে আমার-
ছিলযে অঙ্গীকার, তাহাই আমাদের
গোটা সময় জুড়িয়া বয়েচলে দায়ভার।
তুমি কাছে এলে সকলেই তাঁরা
তীব্র ঘৃণাভরে তাকিয়ে থাকে,
কেহ-ই করেনা সাদর সম্ভাষণ
কখনোই এই তোমাকে।
তুমি আসছো ভালোবাসছো
নিজগুণে- এ তোমারই কর্তব্যকাজ,
প্রয়োজনে তাই এতো আয়োজন-
এতএত নিত্যনতুন সাজ।
তোমার- সময় নষ্ট করার সময় কোথায়!
তুমি কর্তব্য পরায়ণ,
আমি সেইদিন থেকে তোমাকে চিনেছি-
যখন; গৃহ ছিল মাতৃজরায়ন।
সখা হে তুমি- বন্ধু তুমি
চিরজনমের সাথী,
কে-কি বলছে- তোয়াক্কা করি না!
আমি কানপেতে থাকি, তোমার পথের-পানে
- কী দিবস কিবা রাতি!
মাতৃমঙ্গল, আদৌ সিলেটের প্রসবনকেন্দ্র সম্পর্কিত নহে
কবিতাটির উৎসর্জন: আবদুল আজিজ শান্ত
(আমার পরম ছোটবেলার বন্ধু শান্তু চাচা)
মাতৃমঙ্গলে যখন হায়েনারা হানা দেয়!
তখনও আমাদের গ্রামের আকাশে চাঁদ ওঠে—
আমি চাঁদকে চোখের ভেতর ভরে রাখি—
ভোরে একটি আশার ফুল ফোটে, তাতে সুঘ্রাণ নেই—
আছে কিছু বারুদ পোড়া গন্ধ— আমি কাকে বলি;
ফিরিয়ে দাও নিরেট জোছনা ও শিশুদের পদধ্বনি
আর আমাদের পুরনো সেই আনন্দ!
মাশূক ইবনে আনিস
কবিতাটির উৎসর্জন : আবদুল আজিজ শান্ত
(আমার পরম ছোটবেলার বন্ধু শান্তু চাচা)
মাশূকে এলাহি প্রেমতত্ত্বের গান
জগতে হইলাম দোষী- প্রেমের অনুরাগী-গো
আমার কুঞ্জ সাজাও-গো সখি
শ্যাম কালিয়ার লাগি !
তনে মনে রং লাগাইয়া—সারা রাত্রি জাগি
করজোড়ে তাঁহার পরশ—
হাত বাড়াইয়া মাগি-গো !
একজনার পিরিতি আমায়—করিলো বিবাগী
তাঁর প্রেমে কুলটা হইবো—
হইতে চায় মন দাগী-গো !
তাঁর প্রেমে মজিয়া এই মন—হইলো অনুরাগী
শ্যামের প্রেমে বানাও আমায়—
কলংকেরও ভাগী-গো !
ইবনে আনিস মাশূকবলে—সাজিলাম বৈরাগী
জগৎ ভ্রমণ করো-হে-মন—
নিজের ইচ্ছা ত্যাগী-গো !
মাশূকে এলাহি প্রেমতত্ত্বের গান
জগতে হইলাম দোষী—প্রেমের অনুরাগী-গো
আমার কুঞ্জ সাজাও-গো সখি
শ্যাম কালিয়ার লাগি !!
তনে মনে রং লাগাইয়া—সারা রাত্রি জাগি
করজোড়ে তাঁহার পরশ—
হাত বাড়াইয়া মাগি-গো !!
একজনার পিরিতি আমায়—করিলো বিবাগী
তাঁর প্রেমে কুলটা হইবো—
হইতে চায় মন দাগী-গো !!
তাঁর প্রেমে মজিয়া এই মন—হইলো অনুরাগী
শ্যামের প্রেমে বানাও আমায়—
কলংকেরও ভাগী-গো !!
ইবনে আনিস মাশূকবলে—সাজিলাম বৈরাগী
জগৎ ভ্রমণ করো-হে-মন—
নিজের ইচ্ছা ত্যাগী-গো !!
কবি দেলোয়ার হোসেন মঞ্জু ও তাঁর মাশূক ভাই
এবং কিছু জানা-অজানা পারস্পরিক কথার পুনরাবৃত্তি...
মাশূক ইবনে আনিস
দেলোয়ার হোসেন মঞ্জু স্কুল জীবন থেকে শুরু করেছিলেন— সাহিত্যকর্ম, সাহিত্যপ্রেম, সাহিত্যচর্চা সর্বোপরি সাহিত্যালিঙ্গন। গ্রাম আগ্নপাড়া দেওকলস বিশ্বনাথ থেকেই যাত্রা শুরু। খুশনূর আলমগীর এর অনুপ্রাস সাহিত্য সংগঠনের স্হানীয় শাখা নিজ উদ্যোগে গঠন করেন। খুব সম্ভব তার বাল্যবন্ধু কবি আবদুল মোমিন মামুনও তাঁর সহযোদ্ধা ছিলেন। তখনো মঞ্জু মাধ্যমিকের ছাত্র।
সেই সময় থেকেই তাঁর সঙ্গে আমার একটা যোগাযোগ ছিলো। দেলোয়ার হোসেন মঞ্জু যখন সিলেট শহরে ইন্টারমিডিয়েট পড়তে আসলেন— তখন থেকেই বলা যায় আমাদের নিবিড় সম্পর্কের সূচনা। ছিলো ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ। আমার দুই তিন ক্লাস জুনিয়র ছিলেন মঞ্জু। আমি ছিলাম অন্য কলেজে— ছাত্র রাজনীতি আর লেখালেখি ছিলো আমার নেশা। মঞ্জু ছাত্র রাজনীতি করতেন না। তাঁর নেশা হয়ে ওঠে কবিতা। আধুনিক কবিতার এহেন কবিতার বই নেই যে— মঞ্জুর সংগ্রহে ছিলো না! সবই মঞ্জুর নিজেস্ব লাইব্রেরিতে ছিলো। দেলোয়ার হোসেন মঞ্জু ছিলেন বিশিষ্ট পাঠক, নিবিষ্ট পাঠক। প্রবন্ধ, কবিতা, দর্শন ও পৌরাণিক বিষয় ছিলো কবি দেলোয়ার হোসেন মঞ্জুর অবশ্যপাঠ্য। একাদশ শ্রেণী থেকেই মঞ্জু ডিমাই সাইজ ডাইরিতে কবিতা, দর্শন ও টেক্সট লিখে রাখতেন। আমাকে অসংখ্য লেখা মঞ্জু শুনিয়েছেন—কখনো তাঁর বাসভবনে কখনোবা আমার অস্হায়ী বাসায় অথবা হোটেল প্যারিসের পঁচিশ নাম্বার কামরায়। প্রকৃত অর্থে দেলোয়ার হোসেন মঞ্জু সাহিত্য সংশ্লিষ্ট হোন কিশোর বয়সের প্রথম তারুণ্য থেকেই। নবমশ্রেণীতে পড়ুয়া কবি মঞ্জু সম্পাদনা করেন তাঁর সম্পাদিত প্রথম সাহিত্য ম্যাগাজিন " বসুন্ধরা " । যৌবনের প্রথম প্রান্তে বের করেন— অনুপ্রাস সাহিত্য গোষ্ঠীর পত্রিকা " অনুপ্রাস "। আর ; এভাবেই সিলেট তথা বাংলাদেশের সাহিত্য অঙ্গনে একজন কবি দেলোয়ার হোসেন মঞ্জুর পরিচয়ের পরিধি দিন-দিন বৃদ্ধি পায়। প্রথম কবিতার বই বের হওয়ার আগেই মঞ্জু স্বদেশ ত্যাগ করে স্হায়ী আবাসিক হোন যুক্তরাজ্যের বার্মিংহামে।জীবন বাস্তবতার সঙ্গে যুদ্ধ করেও প্রবাসী জীবনে কবি মঞ্জু একাধারে তাঁর সাহিত্যচর্চা চালিয়ে গেছেন বিরামহীন। আত্ম মর্যাদা ছিলো কবির জীবনে একটি বিশেষ বিষয়, কিন্তু ; কখনো মঞ্জু আত্ম-অহংকারী ছিলেন না। তাঁর ছিলো শুদ্ধাচারের দৃষ্টতা প্রকট। স্পষ্টবাদীতা— সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠায় মঞ্জু ছিলেন অনাপোসকামী। মতের অমিল হলেও মঞ্জু 'র মাঝে কখনোই মনের অমিল পরিলক্ষিত হতো না। বার্মিংহাম এর প্রবাসজীবন থেকেই সৃষ্টি হয় কবি দেলোয়ার হোসেন মঞ্জু 'র প্রথম ও অনবদ্য কাব্য "ইস্পাতের গোলাপ "। সন—২০০২ সালে সিলেটের প্যারাডাইম অফসেট প্রেসে প্রিন্ট হয়ে "দিয়া প্রকাশ "থেকে তামিম বিন ইমদাদ এর প্রচ্ছদে মঞ্জু 'র বন্ধু প্রকাশক শামস নূর এর সম্পূর্ণ তত্বাবধানে প্রকাশিত হয় কবি দেলোয়ার হোসেন মঞ্জু 'র প্রথম কাব্য " ইস্পাতের গোলাপ "। উল্লেখ্য ; মৃত্যুর পূর্বে হাসপাতালের বেডে বসে জীবনের শেষ কবিতাগুলোও মঞ্জু নিজে ই-মেইল করে শামস নূরের কাছে পাঠিয়ে তার প্রুফ পর্যন্ত দেখে-রেখে পরপারে পাড়ি জমিয়েছেন। ক্ষণজন্মা এই কবির সর্বশেষ পান্ডুলিপিটিও আমাদের বন্ধু "দিয়া প্রকাশ "এর সত্ত্বাধীকারী শামস নূরের কাছে সংরক্ষিত আছে। অচিরেই আমরা কবির অপ্রকাশিত স্বর্ণাক্ষরগুলোর শব্দরূপ দেখতে পাবো, সেই আশায়, সেই প্রত্যাশা নিয়ে তাকিয়ে আছি। দেলোয়ার হোসেন মঞ্জু 'র প্রথম পাঠক, প্রথম সমালোচক ছিলেন তাঁরই কবিতাসমৃদ্ধ জননী। খুব অল্পবয়সে পিতৃবিয়োগান্ত কবি 'র একমাত্র মা-ই ছিলেন অবিভক্ত অভিভাবক। আর; ছিলো এক ছোটো বোন। এক ছেলে—এক মেয়ে আর; অকাল বৈধব্যিক মা— এই তিনজনের সংসারে মায়ের নির্দেশনায় কবি মঞ্জু 'র যাপিত জীবন শুরু হয় সেই সুদূর বাল্যকাল থেকেই। যুক্তরাজ্য প্রবাসী বাবার অকাল প্রয়াণে কবি দেলোয়ার হোসেন মঞ্জু জীবন যুদ্ধে হয়ে ওঠেন— দ্বিগ্বিজয়ী বালক আলেকজান্ডার মতো সাহসী সামরিক। অভাবের এতো তাড়ণা না থাকলেও প্রতিদিনই ছিলো যুদ্ধজয়ের প্রস্তুতিকাল। হারমানার মানসিকতা মঞ্জু 'র অস্তিমজ্জায় ছিলো না। মঞ্জু 'র সঙ্গে বন্ধুতার স্মৃতি খুব বেশী সুখকর না হলেও অনেকের মতো আমার বাল্যবন্ধু কবি দিলু নাসের, কবি আহমদ ময়েজ ও শামস নূর জানতো আমি ও মঞ্জু কতোটা জীবন ঘনিষ্ঠ ছিলাম। প্রখ্যাত শিক্ষাবিদ মুসলিম চৌধুরী ছিলেন মঞ্জু 'র মামা। মামাতো ভাই প্রখ্যাত সাংবাদিক চৌধুরী মুমতাজ বা মুমভাই এর ঘনিষ্ঠতার সূত্রে আমিও মঞ্জু 'র ভ্রাতাতুল্য হয়ে যাই, হয়ে যাই জীবন ঘনিষ্ঠ বন্ধু অথবা ভাই। একজন কবি দেলোয়ার হোসেন মঞ্জু 'র অকাল প্রয়াণের পর—তাকে নিয়ে স্মৃতিমন্হন করা কখনো-ই আমার পক্ষে যে সহজ কর্ম না— তা; কবিবন্ধু ফারুক আহমেদ রণি খুব ভালো করেই জানেন! তবু ; সেই মুখাগ্নি সম্পাদনকর্ম আমার উপর কেনযে ন্যস্ত করলেন ; আমি তা ই ভাবছি আর বেদনাকে উন্মোচন করছি অতি যত্নে একজন প্রকৃত ধার্মিক যেভাবে ধর্মগ্রন্থের পবিত্র পৃষ্ঠা উল্টান সেই মতো করে। কবি দেলোয়ার হোসেন মঞ্জু সম্পর্কিত, তাঁর কবিতা সম্পর্কিত, তাঁর দর্শন সম্পর্কিত সর্বোপরি তাঁর বন্ধু বন্দনা সম্পর্কিত অজানা অধ্যায় লিখার অভিপ্রায় নিয়ে —শুধু এটুকু বলবো ; আমি যতোবার কবিতা থেকে দূরে যেতে চেয়েছি —ততোবার-ই মঞ্জু আমাকে স্বীয় ঐশীমন্ত্রে আর অপ্রতিদ্বন্দ্বী প্রজ্ঞায় এই মরণব্যাধি কবিতাকর্মে বার-বার ফিরিয়ে এনেছেন আমাকে মায়া ও মমত্ববোধের এক অজানা তাগিদে। তবু ; আমার মতো লাউটাকে তাঁর ( মঞ্জু ) কবি বানানোর কার্যসিদ্ধি হয়নি! আমি যেই সেই! যাহা লাউ তাহাই কদু! গতরাত্রে স্বপ্নে পাওয়া এক-টুকরো দর্শনের সামান্য অংশ বর্ণনা করত : এই লেখাটির কলেবর আর না বাড়িয়ে— আমি অধীনে সমাপ্তির রেখাটি এভাবে টানছি— আমি মিথ্যুক তাতে আমার মোটও দু :খ নেই — দু :খ এইটুকু যে, আমি আর আমাকে বিশ্বাস করতে পারছি না!