top of page

কবি সাইফুল্লাহ মাহমুদ দুলাল

 

সাইফুল্লাহ মাহমুদ দুলাল, জন্ম : ৩০ মে ১৯৫৮, শেরপুর। স্ত্রী: অপি মাহমুদ। দুই কন্যা সন্তান অনাদি নিমগ্ন ও অর্জিতা।  পিতা, আলহাজ্ব মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ, অবসরপ্রাপ্ত স্কুল শিক্ষক,  মাতা : সারা শহীদুল্লাহ। সাইফুল্লাহ মাহমুদ দুলাল মূলত কবি হলেও শিল্প-সাহিত্যের সব শাখায় বিচরণ করছেন। তাঁর কবিতায় গ্রাম বাংলা থেকে শুরু করে নগরায়ন, নাগরিক জীবন, জীবনের জটিলতা, প্রেম, পরবাস, পরাবাস্তব প্রভৃতি প্রতিফলিত হয়। বর্তমান বাংলা কবিতার মূলধারাকে তিনি শাণিত করছেন, বাঁক ও বিবর্তনে ভূমিকা রাখছেন। কবিতায় যুক্ত করছেন নতুন টার্ম, নতুন ফর্ম। তাঁর 'তিন মিনিটের কবিতা' গ্রন্থটি তার উজ্জ্বল উদাহরণ। তিনি গদ্যের মতো পদ্য নিয়েও গবেষণা করেন। সেজন্য কবিতার বিষয় নিয়ে চিন্তার গভীরে প্রবেশ করেন। মানুষের মনোজগতের অন্তর্নিহিত খনিজ তুলে আনেন ডুবুরির মতো। ফলে দুলালের কবিতা হয়ে ওঠে ব্যতিক্রমধর্মী তথা স্বাতন্ত্র্যচিহ্নিত। দীর্ঘ দেড় যুগ ধরে প্রবাসযাপন করলেও এক মুহূর্তের জন্যেও তিনি শেকড় থেকে বিচ্ছিন্ন হননি। বরং প্রবাস জীবনের নানা অনুষঙ্গ তাঁর কবিতাকে আরো সমৃদ্ধ করেছে। কখনো কখনো স্বদেশ ও বিদেশের নানা বিষয়আশয় দ্রবীভূত হয়েছে তাঁর কবিতায়; বলা যেতে পারে, তা এক ধরনের চিন্তার অনুবাদ। ছাত্রাবস্থায় দৈনিক ইত্তেফাকের মফস্বল সংবাদদাতা হিসেবে সাংবাদিকতার জীবন শুরু। পরে দেশের বিভিন্ন দৈনিক ও সাপ্তাহিক পত্রিকায় কাজ করেন। ১৯৮০ সালে সরকারি চাকরিতে যোগদান।

sdulal.jpg

পুরষ্কার: সূচিপত্র সাহিত্যপত্রের জন্য তিনবার মুক্তধারা একুশে পুরস্কার ১৯৮৭, ১৯৮৮ এবং ১৯৯২; শিল্প সাহিত্যে শেখ মুজিব গ্রন্থের জন্য জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র পুরস্কার ১৯৯৭, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু পদক ১৯৯৬ ; জাপান থেকে বিবেক সাহিত্য পুরষ্কার ২০০৫, পশ্চিমবঙ্গ থেকে কাব্যশ্রী খেতাব ১৯৭৭ এবং মাইকেল মধুসূদন পদক ২০০৫ সালে। শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম স্মৃতি পদক ২০১৩ সালে এবং আবু হাসান শাহীন স্মৃতি শিশুসাহিত্য পুরস্কার ২০১৮। আন্তর্জাতিক রূপসী বাংলা পুরস্কার ২০১৮, পূর্ব মেদিনীপুর, পশ্চিম বঙ্গ। সাহিত্য দিগন্ত সন্মাণনা ২০১৯, ঢাকা। প্রবাসে সম্মান ও সংবর্ধনা। ইংরেজি, জাপানি, ডয়েচ, ফ্রান্স, উর্দু, সুইডিশ, হিন্দি ভাষায় তাঁর কবিতা অনুদিত হয়েছে । ভারত-বাংলাদেশের শতাধিক সংকলনে কবিতা-ছড়া-প্রবন্ধ গ্রন্থিত।   

কবির প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা প্রায় ৬০টি । কাব্যগ্রন্থ: * তৃষ্ণার্ত জলপরী, তবু কেউ কারো নই (নাসিমা সুলতানের সাথে যৌথ), অপেক্ষায় আছি প্রতীক্ষায় থেকো, ফেব্রুয়ারি, শহরের শেষ বাড়ি,, ঘাতকেরহাতে সংবিধান, একি কাণ্ড পাতা নেই, দ্রবীভূত গদ্যপদ্য, ঐক্যের বিপক্ষে একা, ফেব্রুয়ারি ২০০০, ম্যাগনাম ওপাস, মুক্তিযুদ্ধের পঙক্তিমালা, এলোমেলো মেঘেরমন, নির্জনে কেনো এতো কোলাহল, পরের জায়গা পরের জমি, নিদ্রার ভেতর জেগে থাকা, ঘৃণিত গৌরব,  কবিতাসমগ্র,ফেব্রুয়ারি,  নীড়ে নিরুদ্দেশে, সাতে নেই, পাঁচে আছি, প্রেম বিরহের কবিতা, (শহীদ কাদরী, নির্মলেন্দু গুণ, রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহর সাথে এক বক্সে) রবি ঠাকুরের প্রাইভেসি, পাখিদের গ্রামে আজ একটি গাছে সাথে সাক্ষাৎ করার কথা, ফেরোমনের গন্দে নেশাগ্রস্থ প্রজাপতি,  তোমার বাড়ি কত দূর, প্রেমের আগে বিরহে পড়েছি, সঙ্গমের ভঙ্গিগুলো, তিন মিনিটের কবিতা, আমার সঙ্গে শেখ মুজিবের দেখা হবে আজ।

গবেষণা/প্রবন্ধ ; সাহিত্যের শুভ্র কাফনে শেখ মুজিব, ১৯৯৩ অনিন্দ প্রকাশ। * শিল্প সাহিত্যে শেখ মুজিব,  ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ : মুজিব হত্যা মামলা।

নাটক : আজ আমাদের ছুটি,  জাদুকরের উদ্দেশ্যে যাত্রা,। গল্প : তুমি, যাদুকর, কথা, কয়ড়া গ্রামে বুনো হাতি, ভূতের পাসওয়ার্ড, । রেসকোর্সের অশ্বারোহী। উপন্যাস: বীর বিচ্ছু, যুদ্ধশিশুর জীবনযুদ্ধ, গাছখুন।

স্মৃতিকথা: *কাছের মানুষ দূরের মানুষ, দূরের মানুষ কাছের মানুষ, । ছড়া : * একাত্তরের দত্যি, * কবি ঠাকুর রবি ঠাকুর, * টাকডুমা ডুম ডুম, পড়ার বই ছড়ার বই, এক যে ছিলো শেখ মুজিব,

 সম্পাদনা : * মুক্তিযুদ্ধ : নির্বাচিত কবিতা, ১৯৮৭ নওরোজ কিতাবিস্থান,* মুক্তিযুদ্ধ : নির্বাচিত ছড়া, ১৯৯০, * Poems of Liberation World,  বিভিন্ন ভাষায় বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কবিতা, স্বরব্যঞ্জন ২০০৫ * মুক্তিযুদ্ধ :নির্বাচিত কবিতা (বাংলাদেশ, ভারত এবং ভিবিন্ন ভাষায়),কথাশিল্পীদের কবিতা, বঙ্গবন্ধুঃ ১০০ কবির ১০০ কবিরা, স্বরব্যঞ্জন ২০১৯, বঙ্গবন্ধুকে নিবেদিত ১০০ ছড়া, বঙ্গবন্ধুকে নিবেদিত নির্বাচিত গল্প। অন্যান্য: কবিতা সমগ্র ১ অনন্যা ২০০৯। বঙ্গবন্ধু সমগ্র, শিশু কিশোর সমগ্র, ২০২০।

এই সপ্তাহের কবিতা

সাইফুল্লাহ মাহমুদ দুলাল

গাছপান

 

ডংরি আর তেরেনা এক বিছানায় ঘুমায়, ভিনদেশে।

অতীতের মতো বর্তমানও কি একটা ভিনদেশ?

 

দু’জনের বুকেই স্বদেশীয় হিন্দি এবং স্প্যানিশের ঘ্রাণ

ছাড়াও মুখে প্রাদেশিক মাতৃভাষা-

-ডংরি, তেরেনা।

তারা ভালোবাসে, এক সাথে গ্রন্থিত তাদের জীবন

তারা সেক্স করে তৃতীয় আরেক ভিন্ন ভাষায়

তাদের ভাষান্তরে বেরিয়ে আসে-

অনুদিত ফুটফুটে ফুল!

ফুল ফুটে সৌন্দর্য ছড়ায়, সৌরভ ছড়ায় বিদেশি বাতাসে।

 

এক সন্ধ্যায় ভারতে-ব্রাজিলে ব্যাকহোমে যখন ফিরে

তখন ডংরি আর তেরেনার অস্তিত্বের প্রদীপ বিলুপ্ত!

আর অপেক্ষারত মা

বাড়ির পেছনের সাজনা গাছের ছায়ায়

পূর্ণদৈর্ঘ্য ঘুমে শায়িত, শান্ত- মৃত বর্ণমালার মতো।

 

স্বজন সাজনা গাছকে মায়ের শাড়ির মতো জড়িয়ে

কাঁদছে একটি গাছপান!

 

 

মানব জাতির মুখে দুর্গন্ধ

 

এক পাতিলের ভাত দুই থালায়

ভাই থেকে ভাই আলাদা, জাতি থেকে পৃথক প্রজাতি।

বিবর্তনের ইতিহাস, ডিএনএ, রক্তের গ্রুপ

সাক্ষী দিবে পূর্ব পুরুষ,

সাক্ষী দিবে পূর্ব নারী।

 

ভাগ্যক্রমে

বান্দ্রামি করি, উকুন খাই, আগুন খাই।

এবং আমরাও স্তন্যপায়ী।

আমাদের দূর সম্পর্কীয় বোন বাদুড়

সে-ও একই গোত্রীয়, ক্ষত্রিয়

স্তন্যপায়ী প্রাণী; কিন্তু পাখি- পাখা আছে।

 

বানর আর বাদুরের স্তনে

কোনো বক্ষবন্ধনী নেই,

উন্মুক্ত বিশ্ব বিদ্যালয়ের মতো খোলা আকাশ

ব্রা ব্যবহার করে শুধু মাত্র নারীমানুষ।

মানব জাতির মুখে এখন কি গন্ধ, দুর্গন্ধ!

দেখি চারদিকে বিপর্যয়, দেখি দশদিকে বেদনা

প্রতিটি নারীর মুখে মাস্ক

প্রতিটি পুরুষের মুখ মাস্ক

যেনো বুক ব্রা’র মতো বাঁধা মুখ ব্রা-বন্ধনী!

 

আনন্দ

 

মেঘালয়ে মেঘপরী-

সাওয়ারে বৃষ্টি, বাথটাবে বর্ষাকাল

সাবানের ফেনায় শুক্রাণু

ব্যাঙের বাচ্চা মতো পোনা

এবং ব্যাঙাচির মতোই হয়ত কিলবিল করছে।

তা অনুবাদের মতো লিঙ্গান্তর করো,

ভাবান্তরে তুমিও স্নানঘরে পেয়ে যাবে-

স্বরচিত এক আকাশ আনন্দ।

 

 

প্রেসক্রিপশন

 

পরশু থেকে আমার ছায়া নিখোঁজ, ছায়াসঙ্গী আমার সঙ্গে নেই,

কি অদ্ভুত ঘটনা; তাকে খুঁজে পাচ্ছিনা!

তাহলে কি ত্যাগ এবং পদত্যাগ করে পালিয়েছে

 

এক বার ভূতের ছড়া লিখেছিলাম

ছোটদের কাগজে।

তাহলে কি সেই ঘটনার জের ধরে

আমাকে অন্ধকারে নগ্ন করে গা থেকে খুলে নিয়ে গেছে,

নাকি মিলিয়ে গেছে ঘুমন্ত রাত্রির ভেতর।

আমাদের উপর ছায়ারা খুবই বিরক্ত,

ক্ষুব্ধ!

 

প্রাণ দেহত্যাগ করে কিন্তু ছায়া কবরেও যায়।

হারানো ছায়ার সন্ধানে এলোমেলো পাঠ করি-

কোরান, বিজ্ঞান, মনোবিজ্ঞান।

নবীজির ছায়া ছিলোনা, এটা মিথ্যে

একমাত্র যারা নূর সৃষ্ট, তাদেরই ছায়া থাকেনা

আর বিজ্ঞান বলছে- আলোর প্রতিবিম্বই ছায়া;

ছায়া তো অলৌকিক-লৌকিকতায় দ্রবীভূত,

বায়বীয় মূর্তি।

 

‘শাড়ি এবং ছায়া অবলম্বনে’ নাটকে বলেছিলাম,

নারীদের ছায়া দু'টি আর পুরুষের একটি

সেটিও হারিয়ে গেলো, কোথায়!

ফ্যামিলি ডাক্তারকে বলি,

দেখুন- আমার শরীর থেকে আমার ছায়া উধাও

আমি একা; নিঃসঙ্গ। এলোমেলো হয়ে যাচ্ছি-

 

তিনি প্রেসক্রিপশনে লিখে দিলেন:

থানায় ডায়েরি করুন। বৃষ্টির পানি খাবেন।

ঘুমাবেন না। নিজের সাথে মনোলগ করবেন না?

কোনো নারীর সাথেই কথা বলবেন না; সুগারের মতো নিষিদ্ধ।

বেশি বেশি ভূতের বই আর

আয়তুল কুসরি পড়বেন।

 

 

একটি আত্মহত্যার প্রস্তুতি

 

খাতা খুলে দেখলেন তিনি সাহিত্য সম্পাদকের কাছে অনেক ঋণখেলাপি!

ছাতা ছাড়াই আজ একটু খোলা মাঠে যাবেন

কালি পায়ে হাঁটবেন।

শ্বাসকষ্টটা বাড়ছে,

মন ও মাস্ক খুলে ইনহেলার ছাড়াই অক্সিজেন নিবেন

এবং একটু কাঁদবেন।

 

পকেটে নিজের জীবনের মতো একটি অসমাপ্ত কবিতা

ছিঁড়ে টুকরো টুকরো করে

খাঁচার পাখির মতো মুক্ত করে উড়িয়ে দিলেন।

এবং একটু কাঁদলেন।

 

ভাবলেন, সিলভিয়া প্লাতের কথা

এতো উপায় থাকতে বেটি চুল্লিতে মাথা ঢুকাইয়া মরলি!

আত্মহত্যার কত পথ ছিলো,

এ বিষয়ে তিনি তিন মাস ধরে পড়াশোনা করছেন,

বই পড়ে পড়ে প্রচুর জ্ঞান অর্জন করছেন।

এবং একা একা কাঁদছেন।

 

কবি একগুচ্ছ প্রশ্ন নিয়ে

করোনা ভ্যাকসিনের মতো গবেষণা করছেন

কোন পদ্ধতিতে আত্মহত্যা সহজ,

মৃত্যুর পর কোন দৈনিক প্রথম পাতায় খবরটা ছাপবে্

কোন শালারা ছাপবে না‌,

কে কি ভাবে শোকাবিভূত হবে?

কবি-বুদ্ধিজীবীদের কবরেও কি সাপ-শেয়ালেরা যায়!

আর ভাবতে পারেনা।

চোখ ভিজে যায়; কান্না পায়। কাঁদে।

 

কবির খুব বাকরখানি খেতে ইচ্ছে করে।

খালি কবর দেখতে

এবং জিয়ারত করতে মন চায়

আর একটি অপ্রকাশিত সাক্ষাতকার রেখে যেতে চান।

তাঁর সাহিত্য কর্মের কোনো মূল্যায়ন হলোনা;

এই ভেবে একটু কাঁদলেন।

 

তিনি হিসেব করে দেখলেন:

কবিতা লিখতে লিখতে শেষ পর্যন্ত আর বিয়েটাও হলোনা,

এবং এবারও

তাকে বাংলা একাডেমী পুরস্কার থেকে বঞ্চিত করা হলো।

পুরস্কারের কথা মনে পড়তেই

কবি হাউমাউ করে কাঁদে উঠালেন!

 

আওয়াজ 

 

হ্যাঁ, আওয়াজ করতাম। অনেক অনেক আওয়াজ

আওয়াজে আওয়াজে...

পাশের ঘরের প্রতিবেশীরাও জেগে উঠতো,

বিব্রত হতো বাতাস

ভয় পেতো ভূত এবং বিড়াল।

আওয়াজের আনন্দে, মহানন্দে রাঁচি হয়ে উঠতো বাথরুম

অদ্ভুত আওয়াজে অর্জিত হতো শীর্ষ বিজয়।

 

এখন করি না। হর্ণ বাজে না।

ভেতর থেকে আওয়াজ আসেনা। ভণিতাও নেই।

হারিয়ে গেছ যুগ্ম-আওয়াজ; চুপসে যাওয়া বেলুন।

 

সহ অভিনেত্রীর ভাষ্য কি হাস্যকর?

‘ড্রাইভার পাল্টাও, আবার বেজে উঠবে হর্ন’!

 

 

 

দারিদ্র ভাবনা 

পাখিরা কখনোই দুপুরের লাঞ্চ নিয়ে ভাবে না

পিঁপড়ারাও ব্রেকফাস্ট বা ডিনার নিয়ে চিন্তিত নয়

জেব্রা, জিরাফদের হাট-বাজার, রেস্টুরেন্ট নেই।

 

‘স্বামী দরিদ্র থাকলে সংসারে শান্তি আসে,

অর্ধেক অভাব পুষিয়ে দেয় ভালোবাসা দিয়ে’।

কি হাস্যকর হুমায়ুন আহমেদ!

 

দারিদ্র্য নজরুলকে মোটেও মহান করেনি,

বরং কেড়ে নিয়েছিলো-

শক্তি, বাকশক্তি, স্মৃতিশক্তি

আক্রান্ত করেছিলো পিক্স ডিজিজে।

 

‘কেবল শিক্ষাই পারে দারিদ্র বিমোচন করতে’

কিন্তু পাখি-পিঁপড়া-হরিণেরা দরিদ্র নয়,

তারা শিক্ষিতও নয়।

ধানমন্ডিতে, ব্লোর স্ট্রীটে বা বেগমপাড়ায় বাড়ি নেই,

             তারা কেউ স্নাতকোত্তরও নয়!

 

 

 

ভাষা

সুন্দর সুন্দর শব্দাবলি বনমালির মতো তুলে

যত্ন করে রাখি ফুলটবে;

ভাষায় এতো আনন্দ, সৌন্দর্য; এতো শান্তি, তৃপ্তি!

অভিধান থেকে কথা, মমতা, কোমলতা, নম্রতা, তারুণ্য

এনে সাজিয়ে রাখি বুকশেলফে!

 

আর কবিতা রচনার মতো ভাষায় রান্না করি অনুবাদ।

পাঠশালার বর্ণমালার ঘ্রাণ জড়ানো সুরেলা গান-

সাজাই গ্রামোফোনে, ভাষার ভালোবাসা-

বিছানার টাটকা চাদরে বিছিয়ে রাখি উজ্জ্বল উচ্চারণ।

 

আর তুমি অথবা তোমরা ভাষার ভাণ্ডার থেকে

হিংসা, ঘৃণা, চিৎকার, নোংরা শব্দ,

           গুলি ও গালি ছড়িয়ে দাও বাতাসে।

বাতাস বিরক্ত হয়ে দুর্গন্ধ ছড়ায়

মিউনিসিপালিটির গার্বেজের মতো,

বাতাস বিষাক্ত হয়ে উঠে চোতরা পাতার ঝাঁঝালো ঝালে!

 

ভাষার মধ্যে এতো পচা, নোংরা, বিষাক্ত তীর, নিষিদ্ধ শব্দ

যেনো মোটেও জানা ছিলো না!

যা নারীকে কাঁদায়, পুরুষকে কষ্ট দেয়;

আমার ভীষণ লজ্জা করে!

 

 

 

দুর্বোধ্য দ্রৌপদী

 

দুর্বোধ্য দ্রৌপদী বনবাসে এসে অস্থির বন কুমারী, বনপরী

নিজেই নিজের বস্ত্র খুলে জল কুমারীর মতো নগ্ন স্নানে

জলাশয়ের জলগর্ভে ছড়িয়ে দেয় ডিম্বাণু

শুক্রাণুর নিষিক্ততায় জলসাঁতারে ভেসে উঠে

পিচ্চি পিচ্ছি পোনা।

 

মনপরী তার ভেজা স্তনগুলো শুকাতে দেয় বৃক্ষের বারান্দায়

গাছগাছালির শাখায় শাখায় স্তন ফুটে ফুটে ফুল হয়;

ফুলে ফুলে ছেয়ে যায় অভয়ারণ্য, বসুন্ধরা।

রূপান্তরিত হবার মন্ত্রে হরিণ হয়ে ঘুরে বেড়ায় সুন্দরবনে

কস্তুরির ঘ্রাণে এবং ঘোরে পাখিরাও ঋতুবতী হয়।

 

বনপরী অতি আয়েশে তার হাত পা ছড়িয়ে চারিদিকে

শুয়ে থাকে ঘাসে উপর, মাঠের বিছানায়।

মাঠের পর মাঠ আর মাটি হয়ে ওঠে-

শস্যবতী কৃষিক্ষেত।

 

 

আমার গ্রেফতার হয়েছি, জেল খেটেছি 

 

আমরা চোর, আমরা ছিনতাইকারী,

আমরা আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী।

অপরাধী বলে পুলিশ, সেনাবাহিনী আমাদের গ্রেফতার করে।

 

আমি জ্যঁ ক্যুয়ে,

প্যারিসের অর্লি বিমানবন্দরে ছিনতাই করেছি পাকবিমান

ত্রাসের বিনিময়ে চেয়েছি ত্রাণ, কুড়ি টন ওষুধ

স্বজনের জন্য সামান্য শান্তি।

 

আমি মারিও রয়ম্যান্স,

বেলজিয়ামের মিউজিয়াম থেকে চুরি করেছি-

১৫ বাই ১৭ ইঞ্চি দ্য লাভ লেটার,

মুক্তিপণের যুক্তি এবং চুক্তি ছিলো- ২০০ মিলিয়ন ফ্রাংক।

 

পাঁচ বিদেশি আমরা কারাগারে ছিলাম-

রিচার্ড টেলর, এলেন কনেট, গর্ডন স্ল্যাভেন

আমার গ্রেফতার হয়েছি, আমরা জেল খেটেছি-

আমাদের ক্ষুধার্ত বোনদের,

আমাদের শরণার্থী ভাইদের জন্য,

পূর্ব পাকিস্তানের জন্য!

 বিঃ দ্রঃ আমাদের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে কাজ করার জন্য পাঁচ+ জন বিদেশি বন্ধু গ্রেফতার হন এবং জেল খাটেন। তাঁরা হলেন- জ্যঁ ইউজিন পল ক্যুয়ে, মারিও রয়ম্যান্স, এলেন কনেট, গর্ডন স্ল্যাভেন, রিচার্ড টেলর এবং সহকর্মীরা।

প্যারিসে বিমান ছিনতাইকারী জ্যাঁ (৩ ডিসেম্বর ১৯৭১-১০ অক্টোবর ১৯৭৩ পর্যন্ত) বেলজিয়ামে শিল্পকর্ম চোর মারিও রয়ম্যান্স(৬ অক্টোবর ১৯৭১ থেকে ডিসেম্বর ১৯৭১),

আমেরিকায় বাল্টিমোর বন্দরে পাকিস্তানি যুদ্ধ জাহাজ পদ্মার বিরুদ্ধে ৫টি প্রতীকী ডিঙি নৌকার নিয়ে প্রতিবাদের অভিযোগে রিচার্ড টেলর সঙ্গীসহ (১৪ জুলাই ১৯৭১-১৫ জুলাই ১৯৭১) আর যুক্তরাষ্ট্রের এলেন কনেট এবং গর্ডন স্ল্যাভেন যশোরের শিমুলিয়া মিশন থেকে (৪ অক্টোবর ১৯৭১-৭ ডিসেম্বর ১৯৭১) গ্রেফতার হয়ে জেল খাটেন।

sdulal.jpg
bottom of page