top of page

শাহাদাত করিম- এর ছড়া

শাহাদাত করিম পরিণত ছড়াকার। থেকেই ছড়া লিখছেন। নানান আঙ্গিকের ছড়া। ব্যতিক্রমী বক্তব্যের ছড়া। রাজনীতি-রাষ্ট্র-সমাজের অসঙ্গতি-ত্রুটি-বিচ্যুতি নিয়ে ছড়া। খল মানুষের চাটুকারি-তোষামোদি-চামচামি-লেজুড়বৃত্তি তার ছড়ার বিষয়-আশয়। তার অনেকগুলো ছড়ার বইও ইতোমধ্যে বেরিয়ে গেছে। বাংলাদেশের ছড়া-সাহিত্যের মাহফিলে মোটামুটি তার একটা জায়গা স্থির হয়ে গেছে। বক্তব্যের দৃঢ়তা-ঋজুতা, ছন্দের কারুকাজ এবং নিপুণতা শাহাদাত করিমের ছড়ার নিজস্ব বৈশিষ্ট্য। সম্প্রতি তিনি ছড়া নিয়ে এক নিপুণ-ব্যতিক্রমী নিরীক্ষায় বৃত হয়েছেন। ছড়াকার শাহাদাত করিম জন্মসূত্রে সিলেটের লোক। সেই সুবাদে সম্প্রতি তিনি সিলেটি আঞ্চলিক ভাষায় ছড়া লিখতে শুরু করেছেন। তার ছড়ায় উঠে আসছে প্রায় অধুনা অপ্রচলিত-অব্যবহৃত সিলেটি শব্দাবলি। যে শব্দগুলো অনেক আগে শুধুমাত্র সিলেটি দাদা-দাদী, নানা-নানীর মুখেই শোনা যেতো। অপরাপর ভাষা-উপভাষার প্রাবল্যের মুখে এসব আঞ্চলিক শব্দ এখন ব্যবহারযোগ্যতা হারাতে বসেছে। সুদূর বিলেতে বসে তিনি অচল আধুলি-সিকির মতো এইসব শব্দাবলি কুড়িয়ে এনে ছড়ার মালা গাঁথছেন। এতে করে তার ছড়ায় নতুন মাত্রা যুক্ত হচ্ছে। তাঁর প্রকাশিত বেশ কিছু ছড়া গ্রন্থের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে; চিৎকার, ইঙ্গুল বিঙ্গুল, খোঁচা খোঁচি ইত্যাদি।  

shahdath karim.jpg
এই সপ্তাহের ছড়া

একুশের দুর্জয় সকালে

 

 

 

একুশের দুর্জয় সকালে

শিশির ভেজা ঘাসে ঘাসে

মনে পড়ে শহীদের স্মৃতি

আগুন ঝরা এই মাসে ।

একুশতো প্রেরণার উৎস

প্রতিবাদে টগবগে রক্ত

রাজপথে জনতার মিছিলে

দৃঢ় প্রত্যয়ে মুঠো শক্ত ।

শহীদের আত্মারা নীরবে

নিভৃতে সহসাই কাঁদে রে

কেউটেরা বড়ো বেশী তৎপর

চলবার পথে বাঁধ সাধে রে ।

একুশের চেতনায় উদ্বেল

আমরাতো নির্ভয় সৈনিক

দৃপ্ত শপথে ভাষা শত্রুকে

ধিক্কার দিয়ে যাই দৈনিক ।

 

 

 

 

ভাত দাও

 

 

ফাল মেরে ঘাড়ে চড়ো

পেট মাথা বড়োসড়ো

চোট পেয়ে থাকো চুপ

বলোনা তো 'উফ'টাও ।

চ্যাংদোলা দিয়ে চাও

গোঁফ-মোচে দিয়ে তাও

টের পাবে ঠিকই ঢের

ছিঁড়ে নেবো গোঁফটাও ।

দাঁত-টাত আছে যা-ও

ভেঙে-চুরে দেবো তা-ও

শুধু শুধু বিতলামি

কেটে নেবো হাতটাও।

আছো বটে ঝরঝরা

হাসি মুখে ফরফরা

বাঁদরামো যাই করো

পাতে আগে ভাত দাও।

 

 

 

 

 

তেঁতুল গাছে

 

 

তেঁতুল গাছে ভূত নেমেছে

ভূতের নাকি পাও ত্যাড়া

লাড্ডু মতন আস্তো মাথা

বেল যেনো এক তাও ন্যাড়া ।

বক্রচোখে তাকিয়ে বলে

এক শকুনি, ভূত কোথায়

তেঁতুল রসের স্বাদটা জবর

চাখতে আবার খুঁত কোথায় ।

ভূতু বলে ফটকাবাজি

মারবি টাকে ঠোকর টা

ঘাট পেরুলে স্বার্থবাদী

খুঁজবে ফাঁক ও ফোকর টা ।

তুই শকুনি মতলবি খুব

তেঁতুল রসও চাখতে চাই

যা ভুলে যা ঠোকর-ফোকর

তোর গা ঘেঁষেই থাকতে চাই ।

 

 

 

 

 

লারে লাপ্পা

 

 

তিল থেকে তাল হলে

ফাল মারে ব্যাটা যে

কুচ নেই পরওয়া

নেতা হয় 'জ্যাঠা'যে।

গাল ভরে পান খায়

লারে লাপ্পা গান গায়

ফরিয়াদি ভিড়লেই

ছুঁড়ে মারে টেঁটা যে।

হামবড়া ভাব তার

করে এটা সেটা যে

গোলেমালে গোলেমালে

লেগে যায় ল্যাটা যে।

বাও বুঝে নাও ছাড়ে

খালি বোল পাল্টায়

হাওয়া হলে প্রতিকূল

মার খায় চালটায়।

 

 

 

চাটা'র দল

 

 

চাটা'র দলে চাটছে শুধু

চাটা'র কি আর শেষ আছে

কান্ধের ওপর ঠ্যাঙটা তুলে

হেই ব্যাটারা বেশ আছে।

চ্যাঙ ধরতে ব্যাঙটা ধরে

ব্যাঙ তো নাড়ে ঠ্যাঙ শুধু

তালুকটারে হাতিয়ে নিলো

পোষা-পালা গ্যাঙ শুধু।

শিল নোড়াতে ঘষাঘষি

ফায়দা লোটে গ্যাঙ

চামড়াটাতো পাথর হলো

মারবে কখন ল্যাঙ।

ঠ্যাঙ বাড়িয়ে ল্যাঙটা মারো

বুক টেনে বীর দাঁড়াও

পা-চাটাদের হটিয়ে দিতে

সম্মুখে পা বাড়াও।

 

 

 

 

 

আক্রার বাজার

 

 

রসুনের লাফালাফি

পিঁয়াজের ঝাঁঝ

জিনিসের দাম শুনে

মাথাটায় বাজ।

দরদামে ওঠানামা

কল চলে যাদুরই

মূল কলকাঠি নাড়ে

মহাজন বাদুরই।

আক্রার বাজারে

আগুন টা জ্বলছে

লেজ দেখে হনুমান

মাথা নেড়ে বলছে।

শিল-নোড়া ঘষাঘষি

মরে ক্রেতা দুখি রে

হিস্যাটা কম পেলে

ব্যাটা মারে উঁকি রে।

পেটে ঘষে তালু টা

ছুটে পিছু পিছু

পা-চাটা চামচা কে

ভাগ দিতে কিছু।

 

 

 

 

 

দাওটা জুয়ার

 

 

বাজাও বগল বাজাও ওরে

দিন তো এখন তোদের

পুঁজ জমেছে ঘা হয়েছে

বিষ ফোঁড়াতে গোঁদের।

কেউ জানেনা কেউ বুঝে না

এমন দারুণ জ্বালা

খ্যামটা ওদের নর্তনেরে

কানটা ঝালাপালা।

তালার চাবি লুকিয়ে রাখা

কোন সে শাড়ির খুঁটে

দন্ত-নোখে শেয়াল কুকুর

খাচ্ছে লুটেপুটে।

রক্তচোষা গিরগিটিরা

ধান্ধা খুঁজে ফেরে

ভাগ্য গড়ার তক্কে থাকে

দাওটা জুয়ার মেরে।

 

 

 

 

দাপট

 

হুলোর দাপট বেশ বেড়েছে

ইঁদুর গেছে গর্তে

হাঁড়ির ভেতর কল্লা ঠুকে

শেয়াল ব্যাটা মর্ত্যে ।

টেংরা পুঁটি টাকুস টুকুস

গোসসা কানি বক‌‌‌ রা

হাতির পিঠে বগল বাজায়

চোর চোট্টা ঠগ রা।

হুতোম প্যাঁচা ভেংচি কাটে

বানর নাড়ায় লেজটা

কালনাগিনী প্যাঁচিয়ে বেজী

বলছে দেখাও তেজ টা।

গাধা করে জল ঘোলাটে

তুলছে সুখের ঢেকুর

শুটকি নাকি দেয় পাহারা

লেজকাটা সব মেকুর।

সুতোয় এখন টান পড়েছে

নাচের পুতুল মুখ লুকায়

গর্তে ইঁদুর ফুঁপিয়ে কাঁদে

পা-চাটারা বাঁশ ঢোকায়।

 

 

 

 

 

ছিঁড়ে আনে নাড়িভুঁড়ি

 

 

ছিঁড়ে আনে নাড়িভুঁড়ি

কলজে ও দিলটা

হাড়গোড় খেতে চায়

শকুনি ও চিলটা।

সর্বদা তৎপর

ব্যাটা সব চোর তো

মাটি খোঁড়া ইন্দুর

চালবাজ ধূর্ত।

সুস্বাদু কমলা

নেই সাতকরাটা

ঘাড় বেঁকে বলে কি

দেবে হাতকড়াটা।

পাত্থর খেকোগুলো

করে কি যে ভুলটা

ছিঁড়ে- খুঁড়ে শেষ করে

পাহাড়ের কোলটা।

দানবের উল্লাস

জাফলং চায় না

দূর করে দাও সব

ভূমিখেকো হায়না।

bottom of page