top of page

রুদ্র গোস্বামী

rudro goswami.jpg

কবিতা

View Profile

আজ কিছু একটা হোক

 

আজ একটা দুরন্ত কিছু হোক

বৃষ্টি হোক, ঝড় তছনছ করে দিক

অথবা সুখের মতো সে চোখে চোখ রাখুক।

 

আজ একটা ভাঙচুর কিছু হোক

জাহাজ ভাঙুক, জল ডুবিয়ে নিক

অথবা নাবিকের মতো এসে সে হাত ধরুক।

 

আজ বুকের ভেতরে একটা লণ্ডভণ্ড কিছু হোক

গা কাঁপুক, দম বন্ধ হয়ে যাক

অথবা ফিঙের মতো শিস দিয়ে সে বলুক

ভালোবাসবি?

কবিতা

রুদ্র গোস্বামী

রুদ্র গোস্বামীর

কবিতা

কাছের কেউ

 

নামে কী এসে যায়

পাখি অথবা তারার নাম যা কিছু একটা হোক।

আমরা যাকে নজর বলি আসলে তো চোখ।

 

নামের মধ্যে কিছু নেই

শুধু অনুভবে থাক যাওয়া আসা।

অন্য কিছু প্রয়োজন কী? আদতে হৃদয়ে থাকাটাই ভালোবাসা।

 

এখানেই ফিরে এসো

নদীর পারে যেমন ফিরে আসে প্রত্যাশিত ঢেউ।

আসলে আপন শব্দটির সব থেকে ভালো মানে

হৃদয়ের খুব কাছের কেউ।

 

 

 

খারাপ লোক

 

যাওয়ার আগে কি দিচ্ছিস বল?

-তেরো নদীর ঢেউ

যা আমার বুকের ভিতরে তুই ফেলে যাচ্ছিস।

আর আমি যে সাত সমুদ্র চিৎকার নিয়ে যাচ্ছি?

-যাস না, আমার নদীগুলো মোহনা পাবে।

তারপর জোয়ার এলে? দুকুল ছাপালে?

-যেদিকে চাইবি সেদিকে ভাসব।

ভাসতে ভাসতে যেখানে ঠেকব সেখানেই ঘর,

আমরা দুজন প্রেমের যাযাবর।

আর আমার এই যে হাজার হাজার দোষ?

হাতে পায়ে নখ রাখি না, চোখে ঠোঁটে রঙ মাখি না,

এসব যে তোর পছন্দ?

-সে তো গ্রীষ্ম এলে হাওয়াও আমার পছন্দ,

হাওয়ার কি আর নখ আছে আর ঠোঁট আছে?

তবুও হাওয়া চাই। গরমে বেশ আরাম আরাম হাওয়া!

আরাম চাস? তোর মনে তো পাপ!

-হিংসুটি তুই আমার চোখের আরাম, মনের আরাম

এই ফিরিয়ে নে তোর ঠোঁটের ছাপ, উমম্মমা ...।

-ইস্, তুই একটা খারাপ লোক।

 

 

 

 

ফিরে দেখা

ইচ্ছে হলে চলেই যাবি জানি
তবু মিথ্যে নাহয় হাত বাড়িয়ে দিস
তোর কাছে যে ইচ্ছে গুলো রাখা
আর একটিবার ছুঁয়ে দেখতে দিস

একটু না হয় ভিজতে দিলি তুই
অবাধ্য সেই নোনতা জলের ছাঁটে
ভালবাসা যেমনি করে রোজ
প্রেমিক ছেলের আঙুল ছুঁয়ে হাঁটে

 

 

অসুখ

 

আজকাল কি যে উল্টোপাল্টা বায়না শিখেছে ও
যখন তখন এসে বলবে, ওর একটা আকাশ চাই।
আর আমিও বোকার মতো সব কাজ ফেলে
ওর চোখের মাপের আকাশ খুঁজতে থাকি!
শুধু কী তাই! তাতেও আবার ওর আপত্তি।
এটাতে বলে মেঘ ভরতি তো ওটাতে একঘেয়ে আলো।
গোধূলি আকাশ দেখলেই ও আবার লজ্জায় মরে যায়।
আমার হয়েছে জ্বালা, মেঘ থাকবে না রোদ থাকবে না
এমন একটা আকাশ, আমি কোত্থেকে খুঁজে আনব?
গোলাপ হবে অথচ কাঁটা হবে না!
রঙটাও আবার লাল? এমন আবার হয় নাকি!
একটা কথা আমি কিছুতেই বুঝতে পারি না,
ভালবাসা বুকে এসে বসলেই মানুষ কেন পাখি হতে চায়!

 

 

আমরা পথিক

 

গাছেদের নাম গাছ
ধুলোদের নাম ধুলো
নদীদের নাম বলতে পারবে গ্রামবাসীরা
কিন্তু ঘরের নাম ঘর দাওয়ার নাম দাওয়া
দাওয়ার ধারে মেয়েটির নাম কী?
তা জানতে হলে তোমাকে নৌকো বাইতে হবে
গুন টানতে হবে
কাঠ কাটতে যেতে হবে বনে
ডাকাতের হাতে পড়তে হবে
বেড়া ডিঙিয়ে পৌঁছতে হবে দাওয়ায়
দাওয়া ডিঙিয়ে ঘরে
ঘরের মধ্যে সে যখন আঁকড়ে নেবে তোমায়
তার ঘূর্ণির মধ্যে তলিয়ে যাওয়া সেই সময়টায়
গাছের উপর আছড়ে পড়বে গাছ
ধুলোর ভেতর থেকে পাকিয়ে উঠবে ধুলিস্তম্ভ
গ্রামের উপর আছড়ে পরবে নদী
তোমার মনে থাকবে না তোমার নাম ছিল পথিক

 

 

অভিরূপ তোমাকে

 

ঘরে ফেরা কি এতটা কঠিন?

ঘর তো আর আকাশ নয়, ফিরতে গেলে পাখি হতে হয়।

পাখির মতো দুটো ডানা থাকতে হয়।

 

পায়ে হেঁটে এত দূরেও যাওয়া যায় অভিরূপ?

যেখান থেকে ফিরতে গেলে আকাশ পেরুতে হয়?

শূন্য অপেক্ষায়ও একটা খাঁ খাঁ নক্ষত্রের তাপ থাকে অভিরূপ

তুমি কখনও বুঝবে না অপেক্ষার শূন্যতা একটা মানুষকে যে

কী ভীষণ নিঃস্ব করে দিতে পারে।

যেখান থেকে জীবনের দিকে তাকালে মৃত্যুকেও প্রিয় মনে হয়।

অথচ প্রত্যেক দিন এই ক্ষতবিক্ষত শূন্যতার ভিতর আমি

ফোঁটায় ফোঁটায় ছড়িয়ে পড়তে দেখছি আমার নিজের শরীর।

 

অপেক্ষার যন্ত্রণাকে তুমি কখনও অনুভব করেছ অভিরূপ?

যে পাখিটাকে এনে তুমি আমার বুকের মধ্যে পুষে রেখেছিলে

তোমাকে না ছুঁতে পারার কষ্টে যন্ত্রণায় তার পাখা থেকে

রোজ খসে পড়ছে একটা একটা করে পালক।

আর সেই পালকের উপর জন্ম নিচ্ছে অসংখ্য উপজীবী ছত্রাক।

এমন নৃশংসতার সাথে খেয়ে ফেলছে ওরা পালকের সবটুকু উড়ান

পাখিটার বেঁচে থাকার কথা ভাবতে গিয়েই আমার কান্না পায়।

যে চোখে জলের ফোঁটা দেখলে স্বর্ণমুদ্রা বলে রুমালে কুড়িয়ে নিতে

সে চোখের এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত এখন

অশ্বমেধের ঘোড়ার মতো দাপিয়ে বেড়ায় তেরোটা নদী।

তাদের অবাধ্য স্রোত খড়কুটোর মতো ভাসিয়ে নিয়ে যায়

আমার বেঁচে থাকার লক্ষ লক্ষ দিন, আমার ভালো থাকার অসংখ্য সময়।

 

সাধারণ মেয়েদের কোনো পুনর্জন্ম থাকে না।

অপেক্ষার জীবাশ্ম বয়ে বয়ে যে ভালবাসা আজ আমার রক্ত প্রবাল

আমি কিছুতেই তাকে মৃত্যুর হাতে তুলে দিতে পারব না অভিরূপ।

আমি বাঁচব অভিরূপ মৃত্যুর পাঁজরে পাঁজরে আমি বাঁচব

তুমি যতদিন বেঁচে আছো।

 

 

 

সোজা কথা

স্রেফ তোর একটা কাজ হোক, গাড়িবাড়ি চাই না।

–কী করে ঘুরবি?

দুপায়ে ইচ্ছে থাকলেই এই পৃথিবীটা তোর।

-কোথায় থাকবি?

কেন? তোর আকাশটা কি দুজন মানুষ থাকবে

এমন একটা ঘরের থেকেও খুব ছোট?

-বৃষ্টি পড়লে?

তুই ছাউনি হবি।

-রোদ বাড়লে?

তুই আড়াল করবি।

-আর বাড়ির লোক?

দুচারদিন মুখ দেখাদেখি বন্ধ করবে

তারপর ঠিক ডেকে নেবে, ওরাও মানুষ তো।

-যদি না ডাকে

গাধা। তখন তুই মেয়ে হোস

আমি তোর মতো ভিতু একটা ছেলে হয়ে যাব।

-আমি গাধা?

না তুই গাধাদের বস।

-তুই কিন্তু রাগাচ্ছিস

আহারে অগ্নিঠাকুর, রাগলে যেন পুড়িয়ে দেবে।

-বিকেলের দিকে তৈরি থাকিস

পালাবি?

-তুই একটা মেয়ে। এত বেহায়া কেন, তোর লজ্জা নেই?

লজ্জা এখন পুরুষের ভূষণ। এই দ্যাখ কেমন তুই ঝুঁটি বেঁধেছিস।

কানে দুল, হাতে নখ, এরপর...

-এরপর কি? এটা তো এখন ফ্যাশন চলছে।

যখন মেয়েদের ফ্যাশন ধার করেছিস, তখন লজ্জা টুকুও নে।

না হলে লোকে বলবে...

-কী বলবে?

নাহ তুই কাঁদবি, ওসব কথা তোর না শোনাই ভালো।

-এটা কিন্তু তুই বাড়াবাড়ি করছিস।

তবে নখ ভাঙ, দুল খোল, সটান বাবার সামনে গিয়ে বল

আমি আপনার মেয়েকে ভালোবাসি।

 

 

 

কেউ একটা তো চাই

 

কেউ একটা তো চাই, টিপ সরে গেলে

আয়নার মতো বলবে ‘টিপ বাঁকা পরেছ।’

চোখের কাজল লেপটে গেলে ধরিয়ে দেবে।

কেউ একটা তো চাই, পিছু ডাকবে

বলবে ‘সাবধানে যেয়ো।’

কেউ একটা তো চাই, ঘড়ির কাঁটার মতো

কাছে থাকবে। অভিমান দেখলেই বলবে,

‘সবুজ পাতা তোমাকে ভালোবাসি।’

কেউ একটা তো চাই, ভুল গুলোকে

শুধুই বকবে না। কাছে টেনে বলবে 'বোকা মেয়েটা,

আর কিছু ভালো রাখা যত্ন নিয়ো।’

কেউ একটা তো চাই, খোলা জানালার মতো

আমাকে আকাশ দেখাবে। বলবে ‘এখানে ঠিকানা রেখে

তুমি পাখি হয়ে যাও।’

কেউ একটা তো চাই, হাওয়ার শিসের মতো

কানে এসে বলবে ‘আমাকে ছাড়া কারো

প্রেমে পড়তে নেই।’

কেউ একটা তো চাই, শাসন করবে আমার

খুচরো বিষাদ, আর আমাকে লুঠতে আসা

ডাকাত স্মৃতি।

কেউ একটা তো চাইই, গ্রীষ্মে বিছিয়ে রাখবে বুকে

শীতলপাটি, বলবে ‘এই বুকের মধ্যে তোমাকে

বসতে দিলাম।’

কেউ একটা তো চাইই, কাছে থাকবে

‘তুমি’ বললেই যেমন দুঠোঁটে দুঠোঁট মেশে।

কেউ তো একটা চাইই, কিছুটা সে তাঁর মতো থাক,

কিছুটা আমার মতো হবে।

 

​​

ঘর

 

মেয়েটা পাখি হতে চাইল
আমি বুকের বাঁদিকে আকাশ পেতে দিলাম।

দু-চার দিন ইচ্ছে মতো ওড়াওড়ি করে বলল,
তার একটা গাছ চাই।
মাটিতে পা পুঁতে ঠায় দাঁড়িয়ে রইলাম।
এ ডাল সে ডাল ঘুরে ঘুরে ,
সে আমাকে শোনালো অরণ্য বিষাদ।

তারপর টানতে টানতে
একটা পাহাড়ি ঝর্ণার কাছে নিয়ে এসে বলল,
তারও এমন একটা পাহাড় ছিল।
সেও কখনো পাহারের জন্য নদী হোতো।

আমি ঝর্ণার দিকে তাকিয়ে মেয়েটিকে বললাম,
নদী আর নারীর বয়ে যাওয়ায় কোনও পাপ থাকে না।

সে কিছু ফুটে থাকা ফুলের দিকে দেখিয়ে
জানতে চাইল,
কি নাম ?
বললাম গোলাপ।

দুটি তরুণ তরুণীকে দেখিয়ে বলল,
কি নাম ?
বললাম প্রেম।

তারপর একটা ছাউনির দিকে দেখিয়ে
জিজ্ঞেস করলো,
কি নাম ?
বললাম ঘর।

এবার সে আমাকে বলল,
তুমি সকাল হতে জানো ?
আমি বুকের বাঁদিকে তাকে সূর্য দেখালাম

bottom of page